× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইজতেমা মাঠে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

শেষের পাতা

এম.এ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে
১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার

শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম দিনে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তম জুমার জামাত। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মুসল্লি ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ এই বৃহত্তম জুমার জামাতে শরীক হন।
দুপুর ১টা ৪০ মনিটে জুম্মার নামাজ শুরু হয়। জুমার জামাতে ইমামতি করেন, বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে গতকাল শুক্রবার লাখ মুসল্লির উদ্দেশে তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরুব্বীরা পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান করেন। কাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুই পর্বের ইজতেমা।
শুক্রবার বিকেলে অনুকুল আবহাওয়া ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকায় ইজতেমায় আগত মুসল্লিগণ স্বাচ্ছন্দে তাবলীগ জামাতের শীর্ষমুরুব্বিদের বয়ান শুনছেন এবং ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন। আজ শনিবার ইজতেমার দ্বিতীয় দিন।
জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণ : গতকাল বিশ্ব ইজতেমা মদয়ানে জুমার নামাজে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে যারা বয়ান করলেন: ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারি মো. সায়েম জানান, বাদ ফজর মদিনা নিবাসী মাওলানা মুফতি ওসমানের আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। সকাল সাড়ে ৯টায় তালিমের বয়ান করেন, ভারতের মাওলানা মুফতি আসাদুল্লাহ। জুমা নামাজের পূর্বে সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফাজায়েল সম্পর্কে বয়ান করেন, মাওলানা মুফতি ফয়জুর রহমান।
বাদ জুমা বয়ান করেন, দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাযের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা চেরাগ উদ্দিন। বাদ আসর বয়ান করেন, বাংলাদেশের মাওলানা খান শাহাবুদ্দিন নাসিম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন, দিল্লির মাওলানা জামশে।
বয়ানে যা বলা হলো : বাদ ফজর কালেমা, নামাজ, ইলম ও যিকির, ইকরামুল মুসলিমীন ও তাসহীহে নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত বয়ান করা হয়। বয়ানে মদিনা নিবাসী মাওলানা মুফতি ওসমান বলেন, ইজতেমা ওয়ালাদের কাজ হলো পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করা। নবী করিম (সা.) দাওয়াতের মেহনতের জন্য মদিনা মনোয়ারা ছেড়ে হিজরত করেছিলেন। তারপর আবার নিজ এলাকায় এসে দাওয়াতের কাজ জিন্দা করেছিলেন। নবী করিম (স.) যেভাবে মেহনতের মাধ্যমে দ্বীনকে জিন্দা করেছিলেন। আমরাও ইজতেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বীনের কাজে বেরিয়ে যাবো, যাতে দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে জিন্দা রাখা যায়।

তিনি আরও বলেন, দাওয়াতের মাধ্যমে ইমানওয়ালা জিন্দেগী, আমলওয়ালা জিন্দেগী ও সত্য ও সুন্দর জিন্দেগী তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, যারা সমাজে দাওয়াতের কাজ করবে দাওয়াত গ্রহণকারী যতো নেক আমল করবেন তা থেকে ওই দাওয়াত দেয়া বান্দাও সমপরিমান সাওয়াব পাবেন। কাউকেই কম সাওয়াব দেয়া হবে না। দাওয়াতের কাজে জান ও মাল কুরবান করতে হবে। তিনি আল্লাহর বড়ত্ব তুলে ধরে বলেন, নবী করিম (স.) কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে কম্বল গায়ে দেনেওয়ালা, আপনি আল্লাহর বড়ত্বের গুনগান করুন। আল্লাহর বড়ত্বের কথা বলাই নবী-রাসুলদের কাজ। আমাদের কাজ। তিনি বলেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। আল্লাহ তায়াল সবকিছুর উপরে ক্ষমতা রাখেন। পুরো দুনিয়ায় কোথায় কি আছে, তা আল্লাহ তায়ালার নখদর্পণে। তিনি বলেন, আমরা তো ঢাকা শহরে কয়টি গাছ আছে তাও বলতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে কয়টি গাছ, আফ্রিকার জঙ্গলে কয়টি গাছ, পুরো দুনিয়ার জঙ্গলে কয়টি গাছ পশু-পাখি আছে তাও বলতে কোন কষ্টই হবে না।

তিনি আরও বলেন, দুনিয়ার জিন্দেগী অনিশ্চিত জিন্দেগী, অক্ষম জিন্দেগী। দুনিয়ার জিন্দেগী হলো ধোকার জিন্দেগী। আর হাকিকতে বা বাস্তবতার দিক দিয়ে আসল জিন্দেগী হলো আখেরাতের জিন্দেগী। আখেরাতের জিন্দেগী হলো চিরস্থায়ী জিন্দেগী। অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে আখেরাতের জিন্দেগীতে যেতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে দুনিয়ার জিন্দেগী ছেড়ে যেতে হবে। এতে কোন রকমের সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, আমাদের দুই চোখে যা কিছু দেখি আর না দেখি আল্লাহ ছাড়া সবই মাখলুক। আর মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। তিনি বলেন, একমাত্র হুজুর (সা.) এর বাতানো তরিকায় দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও কামিয়াবী।

ইজতেমা ময়দানে তিন মুসল্লির মৃত্যু : গত বুধ ও বৃহস্পতি দুই দিনে ইজতেমা ময়দানে তিনজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার চানপুর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে কাজী আলাউদ্দিন (৬৫), নরসিংদী জেলার বেলাব থানার বিরবাঘরের চন্দনপুর গ্রামের মৃত: আব্দুর রহমানের ছেলে সুরুজ মিয়া (৬০) ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছরি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে গোলজার হোসেন (৪০)।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা : শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত কারণে প্রায় দুই শতাধিক মুসল্লি টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ: গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিশ্বের ৩১টি দেশের ১ হাজার ৪৪১জন বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন তাবুতে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে আয়োজক কমিটির দাবি ময়দানে ৩ হাজারের উপরে বিদেশি মেহমান অবস্থান নিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত বিদেশি মেহমানের আগমন অব্যাহত থাকবে।
এব্যাপারে বিশ্ব ইজতেমার জিম্মাদার প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, ময়দানের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ময়দানে আগত মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন। আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
.
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর