নিখোঁজের ৭ দিন পর আখ ক্ষেতের পাশে মাটি চাপা অবস্থায় মিললো ঢাকার হাজারীবাগের ব্যবসায়ী তোষাররফ হোসেনের (৪৫) লাশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রবিউলসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, গত ১১ই জানুয়ারি কাজের মেয়ে পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ব্যবসায়ী তোষাররফ হোসেনকে (৪৫) রংপুরে ডেকে আনেন রংপুর ট্রেনিং সেন্টারে প্রেষণে থাকা কনস্টেবল রবিউল ইসলাম। ওই দিন ভোর ৬টায় কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নামলে রবিউল তাকে মোটরসাইকেলে করে বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর সাকুয়াপাড়ায় ছোট বোন লাবনীর বাসায় নিয়ে আসে। সেখানে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে তাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারধর করে রবিউল, রবিউলের দুলাভাই সাইফুল ও বাসার কাজের ছেলে বিপুল। এবং ১০টি চেতনানাশক সিজোফিন ট্যাবলেট খাইয়ে শ্বাসরোধসহ কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে বোনের বাসা থেকে প্রায় ৫’শ গজ দূরে আখ ক্ষেতের পাশে স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমানের (৩০) চাষ করা জমির নিচে লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়।
আইনী জটিলতা এড়াতে তোষাররফ হোসেনের মোবাইল ফোন হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে দূরে ফেলা হয়।
শনিবার সকাল সোয়া ৮টায় শেষবারের মত স্ত্রী নাসিমা আক্তার ইভার সাথে কথা বলেন তোষাররফ। ফোনে নাস্তা খেয়ে রওনা হওয়ার কথাও জানান তিনি। কিন্তু এরপর থেকে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিনই পুলিশ সদস্য রবিউল তোষাররফের স্ত্রী ইভাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন তোষাররফ ঢাকায় পৌঁছে গেছে কিনা।
এরপর রংপুর জেলা পুলিশ সুপার, পরে র্যাবকে নিখোঁজের বিষয়টি জানায় নিহতের পরিবার। ১৪ই জানুয়ারি মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট বোন সাজিয়া আফরিন ডলি। অতঃপর শুক্রবার পুলিশ কনস্টেবল রবিউলকে গ্রেপ্তার করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরপর তার দেয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত রবিউলের দুলাভাই সাইফুল ও বাসার কাজের ছেলে বিপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিউলকে সাথে নিয়ে পুলিশ শনিবার রাতে সাকুয়াপাড়ায় লাশ উদ্ধারে নামে। কিন্তু জায়গা সনাক্ত ব্যর্থ হয় পুলিশ। এরপর আবারও গতকাল ভোরে পুলিশ রবিউলকে নিয়ে সাকুয়াপাড়ায় আসলে তার দেখানো জায়গা থেকে পপি’র লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই স্থানটি আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ঘিরে রেখে মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিআইডি, মেট্রোপলিটন বিশেষ শাখা লাশের সুরতহালসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় পর্যবেক্ষন করে। এ সময় এলাকার সহস্রাধিক মানুষ ছুটে আসে লাশটি দেখতে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, রবিউলকে গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নিলে সে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। রবিউলকে নিয়ে সারা রাত আমরা অভিযান করে লাশটি পাইনি। পরে সকালে সাকুয়াপাড়া আখক্ষেতের পাশে মাটি চাপা দেয়া জায়গাটি দেখিয়ে দিলে পুলিশ সদস্যদের দিয়ে মাটি উত্তোলন করে লাশটি আমরা উদ্ধার করি। লাশটি সুরতহাল রিপোর্ট করাসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। রবিউল পপি’র কাছে বেশ কিছু টাকা পেত বলে জানিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে রংপুরে বোনের বাসায় ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ কিংবা যে কোন পদেই কর্মরত কেউ হোক না কেন, তারা অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আসতে হবে। অপরাধী অপরাধিই, আইন সবার জন্যই সমান।