নাটোরের বাগাতিপাড়ায় চার্জারচালিত ভ্যান চুরির দায়ে এক যুবককে ল্যাম্প পোস্টের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে। সেই নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার উপজেলার দয়ারামপুর বাজার এলাকায় এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করে। নির্যাতিত যুবকের নাম মনিরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার মাছিমপুর মহল্লার আবদুল গাফফারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে দয়ারামপুর এলাকার মিশ্রিপাড়া গ্রামের মাহাতাব সরদার নামের এক ব্যক্তির নামাজে জানাজার আয়োজন চলছিলো। মিশ্রিপাড়া গোরস্থান এলাকায় জানাজার কয়েক মিনিটি আগে সেখান থেকে ওই এলাকার আলমগীর হোসেনের চার্জারচালিত ভ্যানগাড়ি চুরি করছিলো।
এ সময় স্থানীয়রা তা দেখতে পায়।
তারা ভ্যানগাড়িসহ মনিরুল ইসলামকে আটক করে। পরে মনিরুলকে দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবনের সামনে ল্যাম্পপোস্টের খুঁটির সঙ্গে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। আর সেই নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে এমন নির্যাতনের খবর পায় বাগাতিপাড়া মডেল থানা পুলিশ। খবর পেয়ে পুলিশ যুবককে উদ্ধার করে।
উদ্ধারকারী বাগাতিপাড়া মডেল থানার এসআই তারেকুল ইসলাম জানান, মনিরুলকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্মাণাধীন ভবনের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা তাকে সামান্য মারধোর করেছে- এমন কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মনিরুলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দয়ারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুর রহমান মিঠু জানান, নামাজে জানাজার সময় ভ্যান চুরির সময় একজনকে স্থানীয়রা আটক করে। পরে থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে আটক ব্যক্তিকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাকে মারধোর বা নির্যাতনের বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি শুনেছেন।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল মতিন বলেন, ভ্যান চুরির সময় জনতার হাতে আটক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জারচালিত ভ্যানের মালিক আলমগীর হোসেনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে একটি চুরির মামলার প্রস্তুতি চলছে। নির্যাতনের তেমন কোন অভিযোগ তার কাছে নেই। তবে চুরির সময় জনতা সামান্য মারধোর করতে পারে, তা হাসপাতালে ভর্তির মতো কিছু না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি এড. সোহেল রানা এ ব্যাপারে বলেন, স্থানীয় সচেতন মানুষের দ্বারা একজন অপরাধীকে আইনে সোপর্দ না করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। আইন সকলের জন্য সমান, তাই আইনের প্রতি আমাদের সকলকে শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার।