× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একটি পাথর, বিকট শব্দ এবং... (ভিডিও)

অনলাইন

মোহাম্মদ আবুল হোসেন
(৪ বছর আগে) জানুয়ারি ২১, ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:২৯ অপরাহ্ন

২০শে জানুয়ারি। তখন রাত ১০টা ১১ মিনিট। রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা দীর্ঘ ভ্রমণে অনেকটাই ক্লান্ত। পথে পথে প্রয়োজনমতো নেমে গেছেন বেশির ভাগ যাত্রী। এ সময়ে ট্রেনটি কারওয়ানবাজার অতিক্রম করার সময়েই বাকিদের সঙ্গে বহন করে আনা সরঞ্জাম গুছিয়ে নিতে থাকেন। যিনি সঙ্গে কিছু আনেন নি তিনি আরামে বিশ্রাম নিচ্ছেন জানালার পাশের সিটে। ট্রেন মালিবাগ রেলগেট পাড় হওয়ার সামান্য সময় পরেই হঠাৎ বিকট শব্দ। আৎকে উঠলেন সবাই।
দিশাহীন হয়ে ছুটা শুরু করলেন কেউ কেউ। তাদের আতঙ্ক ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। কিন্তু না। ভাগ্য ভাল। ট্রেন সমানতালে ছুটছে। ধাতস্থ হয়েই এদিক ওদিক পরীক্ষা করতে থাকেন তারাই। দেখা যায় বামদিকের জানালার মধ্যখানে অর্ধেকের মতো ভাঙা। রেলওয়ে যে শক্ত ও মানসম্পন্ন গ্লাস বসিয়েছে জানালায় তাতে বিশাল গর্ত। পুরো গ্লাস ঝুরঝুরে হয়ে গেছে। ভাঙ্গা কাচ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ‘ঝ’ নম্বরের বগিতে। যে গ্লাসটি ভেঙে গেছে, তার পাশেই বসে ছিলেন রাজশাহী থেকে আসা একজন যাত্রী। তার ঠোঁট কেটে গেছে। রক্ত ঝরছে। তিনি নির্বাক। কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

অন্যরা তার সহায়তায় এগিয়ে গেলেন। তিনি তখন নিজেকে আবিষ্কার করতে পারলেন। তার চোখ পরীক্ষা করা হলো। না, ঠিক আছেন তিনি। কথা বলছেন। অন্য একজন যাত্রী হাশেম বললেন, ভাগ্য ভালো বেঁচে গেছেন। রেললাইনের পাশে বসবাস করা বস্তির উচ্ছন্নে যাওয়া ন্যাংটো ছেলের দল অথবা নেশাখোররা এ রকম ঢিল ছোড়ে চলন্ত ট্রেনে। ট্রেনের গতির বিপরীতে রেললাইন থেকে নেয়া পাথর ছুড়ে মারলে এর গতি হয় বন্দুকের গুলির চেয়েও ভয়ানক। তেমনই একটি পাথর ছুড়ে মারা হয়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা। যদি ভরা ট্রেনে এমনটা হতো তাহলে কারো না কারো প্রাণনাশ হতে পারতো। এভাবে এর আগেও কয়েকজনের প্রাণহানী হয়েছে।

তার সঙ্গে যোগ দিলেন আরও কয়েকজন। বললেন, প্রায়শই এমন ঘটনা ঘটছে। তানভীর নামে একজন বললেন, নেশাখোররা যাতে রেললাইনের ধারেকাছে ঘেঁষতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। ফোরকান বললেন, দেখুন বগির প্রতিটি জানালায় উন্নতমানের কাচের গ্লাসের জানালা দেয়া। আছে একটি ধাতব জানালা। শীতের সময় বলে মানুষ এখন জানালা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান করে। তারপরও এমন ভয়াবহ বিপদ! কিন্তু গরমের সময় এভাবে জানালা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান করা অসম্ভব। রেল লাইন সবচেয়ে বিপজ্জনক গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত। এই পথের বিভিন্ন স্থানে রেলের পাশে শিক্ষিত সমাজের পাশাপাশি অবস্থান করছেন অসচেতন, অশিক্ষিত মানুষও। কিন্তু এভাবে শুধুই খেয়ালখুশি মতো তাদের কেউ কেউ মানুষ মেরে ফেলবে এটা মানা যায় না।

ট্রেন থেমে যায় কমলাপুর স্টেশনে। বগি থেকে নেমে যাত্রীরা স্টেশনে নিরাপত্তায় দাঁড়ানো সংশ্লিষ্টদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে বলেন, সেখানে নালিশ জানান। এ বিষয়ে ফোনে কথা হয় রেলওয়ের এডিজি মো. মিঞা জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এগুলোর জন্য শুধু বস্তিবাসীই দায়ী নন। রেললাইনের পাশে অবস্থান নেয়া ভদ্রবেশীরাও এ কাজ করে থাকেন। তাছাড়া মালিবাগ এলাকায় রেললাইনের পাশে বস্তি নেই। আছে তেজগাঁও এলাকায়। সেখান থেকে কে উঠাবে বস্তিবাসীকে? এ বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অব্যাহতভাবে এ কাজটি করে যাচ্ছি। আমাদের অনেক কর্মকর্তা পর্যন্ত একই ঘটনায় আহত হয়েছেন। কুমিল্লায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। আমি নিজে পর্যন্ত এতে আহত হয়েছি। কেউ কেউ এ ঘটনায় মারা পর্যন্ত গেছেন। তাই আমরা রেললাইন সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫০,০০০ লিটলেট বিতরণ করেছি। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সহায়তা নিয়ে অব্যাহত গতিতে আমরা জনসচেতনতামুলক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এরপরও এসব থামানো যাচ্ছে না। যারা অসুস্থ মানসিকতার তারাই এসব করছে। রেলপথ বিস্তৃত একটি এলাকা। এত বিশাল পথে যাত্রীদের আমরা গাড়িতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ এভাবে ইটপাথর ছুড়লে তা কি করে থামানো সম্ভব! এ জন্য মানুষকে অন্য মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাকেও বুঝতে হবে, ট্রেনে বসা ভাই বা বোনের ঘরে ফেরার আশায় আছে তার পরিবার। হয়তো তিনি বাসায় ফেরার পর তারা এক টেবিলে খেতে বসবেন। কিন্তু অনেক সময় সেই আনন্দ বেদনায় পরিণত হচ্ছে। মো. মিঞা জাহান বলেন, আসুন সবাই মিলে একে অন্যের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করি। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর