× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইউটিউবে ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা /হুমকির মুখে সংগীতের মান

বিনোদন

ফয়সাল রাব্বিকীন
২২ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার

দেশের আনাচে-কানাচে, অলিতে গলিতে, রাস্তায়-দোকানে গান বাজছে। সবার মুখে মুখে ফিরছে একই গান। কয়েক বছর আগেও একটি গান শ্রোতাপ্রিয় কতটুকু হয়েছে তা বোঝা যেতো এরকম চিত্রের মধ্যে দিয়েই। ডিজিটাল পদ্ধতিতে গান প্রকাশের আগে সিডি’র জমানা পর্যন্ত গান হিট না ফ্লপ তা নির্ভর করতো দেশের বিভিন্ন স্থানে গান কতটুকু ছড়িয়েছে, শ্রোতারা কেমন পছন্দ করেছেন তার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু এখন সিডি মাধ্যম বিলুপ্ত। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও এখন গান প্রকাশের সব থেকে সহজ ও বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইউটিউব। এখন ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে ইউটিউব ভিউ বাড়ানোটা এক রকমের সংস্কৃতিকে পরিণত হয়েছে! আর বিপত্তিটাও সেখানে। অডিওর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ভিডিওকে।
যার ফলে গানের মান সে অর্থে আগের মতো করে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি গানের ভিডিও প্রকাশ করেই তার ভিউ গণনা করা হচ্ছে। একটি গান প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে এক লাখ ভিউজ। কয়েক দিন এই ধারা অব্যাহত থাকে। আর এক সপ্তাহ বাদেই সেই গানের কথা ভুলে যাচ্ছেন শ্রোতারা। জায়গা করে নিচ্ছে আরেকটি ব্যয়বহুল গানের ভিডিও। তবে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও ও ভিউ গণনার কালচার থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে সংগীতাঙ্গনে। কারণ এর ফলে গানের কথা-সুরের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না। নজর দেয়া হচ্ছে কেবল ভিডিওর দিকে। কে কত ব্যয়ে, কত চমকে ভিডিও নির্মাণ করছে সেটা নিয়েও চলে প্রতিযোগিতা। যার ফলে গানের মান কমছে। চোখ ধাঁধানো ভিডিও করে সেটি প্রকাশের পর সাময়িকভাবে বাহবা মিলছে। কিন্তু গান দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। গত কয়েক বছরের হিসাব কষলে দেখা যাবে এ পর্যন্ত যে গানগুলো সাময়িকভাবে আলোচনায় এসেছে সেসবের বেশির ভাগই ব্যয়বহুল ভিডিও নির্ভর গান। ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ে করা হয়েছে এসব গান। অথচ অডিওতে এর চার ভাগের এক ভাগ অর্থও ব্যয় হয়নি। অনেক ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওর মাঝে অবশ্য কিছু গান প্রশান্তি ছড়িয়েছে। গত বছরে এসে গানের অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেছে। কারণ যে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও করে গান প্রকাশ করা হয়েছে তার আসলটা তুলতেই অনেক অডিও-ভিডিও কোম্পানি হিমশিম খেয়েছে। যার কারণে গত বছর গান প্রকাশ হয়েছে কম। আর যা প্রকাশ হয়েছে তার থেকে খুব বেশি গান আলোচনায়ও ছিল না। কথা ও সুরের দুর্বলতার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওর প্রতিযোগিতা চলছে এখন। গানের মানের দিকে নজর নেই। এ কারণে এগুলো বেশিদিন টিকছে না। আমি মনে করি একটি ভালো কথা-সুরের গান ভিডিও না হলেও তার অডিওই ইউটিউবে শুনবে মানুষ। সে গানই টিকে থাকবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওর পেছনে ছোটা বোকামি বলেই মনে হয় আমার কাছে। কিন্তু ইউটিউব ভিউ কি একটি গান জনপ্রিয়তা বিচারের মাধ্যম? উত্তরে ফাহমিদা নবী বলেন, কখনোই এটা হতে পারে না। কোটি কোটি কিংবা লাখ লাখ ভিউ হচ্ছে অনেক গানের। সেগুলো সব কি জনপ্রিয়? নিশ্চয়ই না। আকাশে চাঁদ উঠলে কিন্তু সবাই দেখবে। জোর করে চাঁদ দেখাতে হবে না। সুতরাং একটি গান হিট হলে সেটা সবার মুখে মুখে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেন, আমি কখনোই ভিউ এর দিকে নজর দেইনি। এটা কখনোই শ্রোতাপ্রিয়তার মাপকাঠি নয়। ভালো গানের দিকে নজর দিতে হবে। অডিওটা শক্তিশালী হতে হবে। আর প্রচারের জন্য ভিডিও করা যেতে পারে। এদিকে গানের মানের পেছনে না ছুটে ব্যয়বহুল ভিডিও এবং ইউটিউব ভিউ এর পেছনে ছোটাকে সংগীতের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক বলে মনে করছেন সংগীতবোদ্ধারা। এর ফলে গানের মানে ধস নামার আশংকার কথাও জানিয়েছেন তারা। খুব দ্রুতই এ জায়গা থেকে সরে না আসতে পারলে দেশীয় সংগীতের ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়বে বলেও মনে করছেন সংগীতবোদ্ধারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর