× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইটভাটায় কাজ করছে শিশু

বাংলারজমিন

চলনবিল (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৩ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ইটভাটাগুলো আইন-কানুন ও নিয়মনীতির ন্যূনতম তোয়াক্কা না করে স্থাপনের ফলে নষ্ট হচ্ছে ওই এলাকার পরিবেশ। অধিকাংশ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে আবাসিক এলাকায় কৃষি ফসলি জমির মধ্যে। ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির উপরি অংশের উর্বর মাটি। আর ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে স্কুলগামী শিশুরা।

উপজেলার ভাটা মালিক সমিতির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তাড়াশে নাবিলা সুপার ব্রিকস, বন্যা ব্রিকস, সাদিয়া ব্রিকস, আখী ব্রিকস, মেঘনা ব্রিকস, এমআরএইচ ব্রিকস, এমএমবি ব্রিকস, এইচ এন্ড কে ব্রিকস এবং সততা ব্রিকস নামে ৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশসম্মত জিগজ্যাগ চিমনির ভাটা ৬টি।

সরজমিন দেখা গেছে, ইট পোড়ানোর কাজে ভাটার মালিকেরা অতি নিম্নমানের কয়লার ব্যবহার করছেন। একটি বড় ইটভাটায় একবারে চার থেকে সাড়ে চার লাখ ইট পোড়াতে ২৫ দিনের মতো সময় লেগে যায়। যেখানে কমপক্ষে ১০ হাজার মণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়।

এদিকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৮ এর (ক), (ঘ) এবং (চ) ধারা কোনো রকমের অনুসরণ না করেই বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, কৃষি ফসলি জমি ও সরকারি রাস্তার কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো।
একই সঙ্গে ১৫ নং আইনের (ক) উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করে ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের কারখানা আইন-১৯৬৫ এর ৩ এর (গ) ধারা উপেক্ষা করে ১৪ বছরের কম বয়সী অসংখ্য শিশু শ্রমিক দিয়ে ইট তৈরি ও টানার কাজ করানো হচ্ছে। এতে এলাকায় শিক্ষার হার দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।

সরজমিন আরো দেখা গেছে, ৯টি ইট ভাটাই সরকারি রাস্তার গা ঘেঁষে কৃষি জমি নষ্ট করে স্থাপন করা হয়েছে। কেবল ৬ কিলোমিটার তাড়াশ-কালিবাড়ি গ্রামীণ সড়কের সঙ্গে রয়েছে ৫টি ভাটা। ২টি ভাটা খালকুলা-নওগাঁ গ্রামীণ সড়কে। ২টি তাড়াশ-নিমগাছি আঞ্চলিক সড়কের সঙ্গে। আর প্রতিটি ইটভাটার নিকটেই চারপাশে শ’ শ’ পরিবারের বসবাস সঙ্গে রয়েছে ফসলের মাঠ। ওই ৩টি রাস্তায় দিন-রাত ইটবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করায় কার্পেটিং উঠে ইটের সোলিং নষ্ট হয়ে খানাখন্দে ভরে গেছে। সড়কের ধুলার আস্তরণে ঢাকা পড়ে আছে আশপাশের বসতঘর। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় মরে যাচ্ছে ফসল। শুধু তাই নয়, প্রতিটি ভাটাতেই শিশুরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এদের বেশিরভাগ ইট তৈরি করছে। আবার কেউ কেউ ইট মাথায় করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। শিশু শ্রমিক ইমরান হোসেন, সাব্বির হোসেন, মমিন আলী, আতিকুর রহমান, আব্দুল্লাহ প্রমুখ জানায়, তাদের অনেকের বাবা-মা ভাটা মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম দাদন নেয়ায় তারা পড়ালেখা বাদ দিয়ে ইটভাটায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। সততা ব্রিকস ও মেঘনা ব্রিকসের মাত্র সাড়ে তিন থেকে চারশ’ গজ দূরে দক্ষিণে ঝুরঝুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পশ্চিমে মাধাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধাইনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও মাধাইনগর আদিবাসী মহা বিদ্যালয়। আর সাদিয়া ব্রিকসের নিকটেই ক্ষিরপঁওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ওই চারটি বিদ্যালয়ে তিন হাজারের মতো ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছেন।

শিক্ষার্থী আতিক হাছান, জুয়েল রানা, সৌরভ হোসেন, পিয়াল সরকার, রাজিব এক্কা, সুব্রত উরাঁও, মৌসুমী পারভীন, সুরভি খাতুন, দিলরুবা খাতুন, কলি সিং, কামনা সিং প্রমুখ জানায়, বিদ্যালয়ের পাশের ইটভাটার চিমনি থেকে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় তাদের চোখ জ্বালাপোড়া করে। ভারী যানবাহন ও ইট তৈরির যন্ত্রের বিকট শব্দে শিক্ষকের কথা শুনতে পায় না তারা। ধুলাবালি আর ধোঁয়ার কারণে তাদের সারা বছর সর্দি-কাশি লেগেই থাকে।

তবে উপজেলা ভাটামালিক সমিতির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেছেন, আইন অনুসরণ করেই ভাটাগুলোয় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। আর জিগজ্যাগ চিমনির ভাটার চুল্লিতেও আগুন দেয়ার সময় চার থেকে সাড়ে চারশ’ মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন পড়ে।

এদিকে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুননাহার লুনা জানান, উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়ার বিধান থাকলেও বাস্তবে কোনো ইটভাটা মালিকরা তা নেয়নি। উপজেলার ৯টি ভাটাই অবৈধভাবে ফসলি জমির মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফসলি জমির উপরি অংশের উর্বর মাটি (টপসয়েল) কেটে ইট তৈরি করায় ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। একবার টপসয়েল নষ্ট হলে তা পূরণে ১০ বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান টুকু জানান, আমাদের  মোবাইল কোর্ট পরিচালনার এখতিয়ার নেই। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাড়াশ উপজেলার ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, শিগগিরই  অভিযান পরিচালনা করে আইন লঙ্ঘনকারী ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর