× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ক্ষোভ থেকে ফিল্মি স্টাইলে ডা. সারওয়ার আলীর বাসায় হামলা

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার

হিন্দি মুভির ভক্ত নাজমুল। অপমানের প্রতিশোধ নিতে মুভির অভিনেতাদের মতোই পরিকল্পনা করে। দীর্ঘ দিনের জমানো ক্ষোভ থেকেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলীর বাড়িতে ডাকাতি করতে হামলা চালানো হয় তারই সাবেক গাড়িচালক নাজমুলের নেতৃত্বে। নাজমুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পিবিআই। এতে জানানো হয়, বুধবার দুপুরে উত্তরা থেকে নাজমুলের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার চাচাত ভাই শেখ রনি (২৫), প্রতিবেশী ফয়সাল কবির (২৬) ও মনির হোসেনকে (২০)।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে কয়েকটি ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে উগ্রবাদী কোনো লেখা পাওয়া যায়নি।
মূলত ক্ষোভ থেকেই এই হামলা করা হয়। ২০১৭ সালে নয় মাস সারওয়ার আলীর স্ত্রীর গাড়ি চালিয়েছে নাজমুল। তার দাবি, তখন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সঠিক ব্যবহার পায়নি। ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করাকালীন ডা. সারওয়ার আলীর স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। এটি মানতে না পেরেই চাকরি ছেড়ে দেয় নাজমুল। চাকরি ছাড়ার পর থেকেই প্রতিশোধ নিতে নানা পরিকল্পনা করে সে।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, নাজমুল হিন্দি সিনেমার পাগল। সে শয়নে-স্বপনে নিজেকে হিন্দি সিনেমার একজন প্রতিবাদী নায়ক হিসেবে কল্পনা করে। সেই কাল্পনিক ধারণার বশবর্তী হয়ে ডা. সারওয়ার আলীর পরিবারকে উচিত শিক্ষা দেয়া ও ভয় দেখিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। সহযোগী হিসেবে নাজমুলের চাচাতো ভাই রনিকে তার পরিকল্পনার কথা জানায়। রনির মতো একইভাবে তার ভগ্নিপতি আল-আমিনকেও এতে জড়িত করে। কৌশলে  নুর মোহাম্মদ ও ফয়সালকে ডাকাতির কাজে জড়িত করে নাজমুল। আজমপুর লেবার মার্কেট থেকে মনির ও ফরহাদকে দৈনিক ৫শ’ টাকা মজুরিতে কাজে নেয়। পরে ডাকাতিতে জড়িত করে। ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারীদের সাহস দিতে নানা ধরণের মিথ্যা কথা বলতো নাজমুল। এই ডাকাতিতে পুলিশ ও সাংবাদিকরা সহযোগিতা করবে এরকম নানা ভিত্তিহীন কথা বলতো।

গত ৪ঠা জানুয়াারি আশকোনায় হাজী ক্যাম্পের সামনের একটি হোটেলে নাস্তা করে ডাকাতির বিষয়ে বৈঠক করে নাজমুল। ঘটনার সময় ওই বাসার কেউ যাতে চিনতে না পারে এজন্য তিন মাস দাড়ি-গাঁফ কাটেনি। ঘটনার দিন ৫ই জানুয়ারি বিকাল ৫টায় আশকোনা এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালীর ৩০৩ নম্বর কক্ষে মুল পরিকল্পনাকারী নাজমুলের নেতৃত্বে সাত জন মিলে ডাকাতির চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। ঘটনার মূলহোতা নাজমুল বাসার পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং প্লেস ইত্যাদি সম্পর্কে সকলকে অবগত করে। ডাকাতির সময় কার কি ভূমিকা হবে তা বুঝিয়ে দেয়। নাজমুল অন্যান্যদের জানায় যে, ডা. সারোয়ার আলীর বাড়িতে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার রয়েছে। কিন্তু ডা. সারোয়ার আলীর পরিবারের প্রতি তার ক্ষোভের বিষয়টি গোপন রাখে নাজমুল। সন্ধ্যা ৭টার দিকে হোটেল থেকে নাজমুল প্রথমে একা বেরিয়ে যায়। একটি ব্যাগে করে সাতটি চাপাতি ও পাঁচটি সুইচ গিয়ার ছুরি নিয়ে যায়। আধা ঘন্টা পর রনিসহ ছয় জন ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে যায়। ঘটনাস্থল এলাকায় রনির হাতে ছুরিগুলো দেয় নাজমুল। রনি ঘটনাস্থলে থাকা পাঁচ জনকে ছুরিগুলো বিতরণ করে। নাজমুল রাত ৯টায় চার প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দারোয়ান হাসানকে দেয়। এসময় কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। রাত ১০টা পর্যন্ত দারোয়ান না ঘুমালে তাকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রেখে ফয়সালকে ডেকে ভেতরে নেয় নাজমুল। তাকে দ্বিতীয় তলায় আড়ালে থেকে অপেক্ষা করতে বলে।  নাজমুল ও ফয়সাল তৃতীয় তলায় ডা. সারওয়ার আলীর মেয়ে ড. সায়মা আলীর বাসায় নক করে। তার মেয়ে দরজা খুললে নাজমুল ও ফয়সাল ধাক্কা দিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। সায়মা আলী ও তার স্বামী হুমায়ুন কবির এবং মেয়ে অহনা কবিরকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখে। একপর্যায়ে ফয়সালকে তৃতীয় তলার নিয়ন্ত্রণ রেখে নাজমুল চতুর্র্থ তলায় সারওয়ার আলীর ফ্ল্যাটে ঢুকে। ভয় দেখিয়ে সারওয়ার আলীকে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুরি ধওে নাজমুল। এসময় তার স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস চিৎকার শুরু করলে নাজমুল বাইরে অপেক্ষারত সহযোগীদের ফোনে ভেতরে আসতে বলে। অন্যদিকে অনবরত চিৎকার শুনে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব.) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার সজিব চতুর্থ তলায় যায়। এদিকে, বাইরে অবস্থানরত সহযোগীরা ফোন পেয়েও ভেতরে ঢুকতে না পারায় নাজমুল হতাশ হয় ও ভয় পেয়ে যায়। এসময় সারওয়ার আলীর পরিবারকে রক্ষার মোবাশ্বের চাকলাদার সজিব টি-টেবিল হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার চেষ্টা করলে গ্লাসটি ফ্লোরে পরে শব্দ হয়। নাজমুল ভয় পেয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে যায়। একইভাবে তৃতীয় তলায় থেকে ফয়সালও দ্রুত পালিয়ে যায়। নাজমুল ও ফয়সাল নিচে চলে গেলে তাদের সহযোগীরাও দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া মোবাইলসেট নাজমুলের বলে তখন পিবিআই নিশ্চিত হয়। এছাড়া হামলাকারীরা নিচতলায় গ্যারেজে একটি ব্যাগ ফেলে যায়, যেখানে সাতটি স্টিলের চাপাতি, একটি সিম ছাড়া মোবাইল সেট, একটি প্রেশার মাপার যন্ত্র, একটি আইপ্যাড ও নাইলনের দড়ি ছিল। দুর্বৃত্তদের রেখে যাওয়া চাপাতি দেখে ঘটনাটি জঙ্গি হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে ঘটনো হয়েছিল বলে  ওই সময় বলেছিলেন সারওয়ার আলী। এ ঘটনায় পরদিন

সারওয়ার আলী বাদি হয়ে পরিবারের সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাড়ির দারোয়ান মো. হাসান ও পূর্বের গাড়ি চালক নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।
এই হামলায় জড়িত সাত জনের বিরুদ্ধে রনির ভগ্নিপতি আল আমিন মল্লিক ও প্রতিবেশী নূর মোহাম্মদ মোল্লা পলাতক রয়েছে। গত ১৩ই জানুয়ারী এই ঘটনায় ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গ্রেপ্তার শেখ নাজমুল ইসলাম (৩০) বাগেরহাট সদরের পাড়কুর্শাইল গ্রামের শেখ নুরুল আমিনের পুত্র। শেখ রনি (২৫) একই এলাকার বাসিন্দা এবং তার চাচাতো ভাই, ফয়সাল কবির (২৬) তাদের প্রতিবেশী শেখ মনিরুজ্জামানের পুত্র। গ্রেপ্তার মনির হোসেন (২০) ময়মনসিংহের ত্রিশালের বরমা কাকচরের নুর মোহাম্মদের পুত্র।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর