চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ফেনী নদী অংশে ইজারাবিহীন বালু উত্তোলন চলছে। উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়ন ও ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন এলাকায় অবাধে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল।
দীর্ঘদিন বালু উত্তোলনে ফেনী নদীর ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে মীরসরাইয়ের জনবসতি। প্রতিদিন ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। এ বিষয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বালু তোলার প্রতিবাদে স্থানীয়রা ইতোমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদীর কোল ঘেঁষে পশ্চিম জোয়ার, কাটাগাং এবং ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজম নগর এলাকায় হিঙ্গুলী খালের মুখে ফেনী নদীর মোহনা ট্রলারে কাটা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে।
এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পায় না।
বৈধ ইজারাদার এর মধ্যে নাঙ্গলমোড়া, কাটাপশ্চিম জোয়ার, হিঙ্গুলী, পশ্চিম জোয়ার, মোল্লাঘাটা থাকলেও বেশিরভাগ কাটা ডেজারের মালিক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
২০১০ সালের বালুমহল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
স্থানীয়রা জানান, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা জেলায় উন্নতমানের বালু সরবরাহের বিশাল খনি হিসেবে পরিচিত ফেনী নদীর বালু। ইজারা ছাড়াই ফেনী নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন নদীতে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ফুট সরকারি বালু লুট করে বিক্রি করছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। ফেনী নদীর দুইপাড়ে অবস্থিত বালুমহালগুলো ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে ওই বালুমহাল বালু তোলার সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া আছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ফেনী নদীর লাঙ্গলমোড়া মৌজা ইজারাদার মেসার্স সিদ্দিকী এন্টারপ্রাইজ ও ছাগলনাইয়া অংশে রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েলের রৌশন এন্টারপ্রাইজ ও নওরিন এন্টারপ্রাইজ সহ চারটি বালুমহালের বৈধ ইজারা রয়েছে।
বৃহত্তর ফেনী নদী বালু ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি সোনা মিয়া বলেন, মীরসরাই ফেনী নদীর অংশে ৪টি বৈধ ইজারাদার আছে। সরকারী নিয়ম ভেঙ্গে কেউ যদি বালু উত্তোলন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
মধ্যম আজম নগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হোসেন বলেন, ছোট বেলা এখানে সরু খাল ছিলো সেটা দিয়ে আমরা সাঁতার কাটতাম। কিন্তু ফেনী নদী মোহনা ৮০-৯০ ফুট নদীর গভীরে বালু উত্তোলনের কারণে ঐ সরু খালটি পাড় ভেঙ্গে বিলিন হয়ে গেছে এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমরা সরকারী নিয়ন-কানুন মেনে নদী মাঝ খান থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকি। কেউ যদি সে নির্দেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করে সে ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন এর মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে কয়েকজনকে জরিমানা করেছি। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।