বিশাল বহরের নির্বাচনী মিছিল। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীরা অংশ নিয়েছেন মিছিলে। প্রার্থীর পক্ষে মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত রাজধানীর বাংলামোটর সি আর দত্ত রোড এলাকা। মিছিলের কারণে আশপাশের সব রাস্তায় তীব্র যানজট। মিছিলে সামনের সারিতে হাত নেড়ে পথচারীদের সালাম জানিয়ে সমর্থন ও দোয়া চাইছেন প্রার্থী নিজে। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর নির্বাচনী মিছিলের বহর। প্রশ্ন হলো- মিছিলে অংশ নেয়ারা কি স্থানীয় ভোটার? অনুসন্ধানে জানা যায়, এদের অধিকাংশই এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা। যাদের অনেকেই নির্বাচন উপলক্ষে এসেছেন ঢাকায়।
টাকার বিনিময়ে আজ এ প্রার্থীতো কাল ওই প্রার্থীর প্রচার মিছিলে অংশ নিচ্ছে। শুধু ১৬ নং ওয়ার্ড নয়, দুই সিটি কর্পোরেশনেই চলছে এ অবস্থা। ব্যস্ত শহরে শত নাগরিক কর্মব্যস্ততার পরেও মিছিলে হাজার মানুষের এই বহরে শুধু বড়রা নয়, যোগ দিচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরাও। নিজের পক্ষে মানুষের সমর্থন যোগাতে প্রার্থীরা জড়ো করেন বিশাল বহর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণার জন্য। নির্বাচনী প্রচারণায় স্বল্প আয়ের মানুষদের ব্যবহার নতুন নয়। ভাড়ায় খাটা এসব মানুষ ভোটের মওসুমকে মনে করেন বাড়তি উপার্জনের মোক্ষম সময়। যাতায়াত খরচ, থাকা খাওয়ার খরচের বিনিময়ে প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নেয় তারা। কেউ কেউ খাটেন রোজ হিসেবেও। এছাড়া ভোটের পর বাড়ি ফেরার সময়ও হাতে পান কিছু টাকা।
হাতিরপুল এলাকার একজন বলেন, আমি এর আগেও নির্বাচনের কাজ করেছি। এবার আমার দায়িত্বে ১০-১৫জন লোক আছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের ৬ জন আর বাকিরা ঢাকার ভেতরের। আমার নিজ এলাকা থেকে ওদের নিয়ে আসছি। এক বড় ভাই আমাকে আগেই বলে রাখে। পরে প্রচারণা শুরু হলে আমরা কাজ শুরু করি। এদের থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থা বড় ভাইয়ের দায়িত্বে। আমার কাছে প্রতিদিন হিসেব করে যে টাকা দেয়া হয় তা ওদের পেছনে খরচ করি। তাছাড়া নির্বাচন শেষে কিছু করে টাকা দেবে। বরিশাল থেকে যাতায়াত খরচ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে কয়েকজন কিশোরকে। থাকা খাওয়ার বিনিময়ে তাদের কাজ প্রচারণায় অংশ নেয়া। ভোটের পর বাড়ি ফেরার সময় পাবেন হাতে কিছু টাকাও। একই এলাকার হাবিব, রুম্মন, কাউছারসহ ৪-৬ জন বলেন, আমরা সবাই বরিশাল থেকে আসছি। ঢাকা শহর ঘুরে দেখার পাশাপাশি নির্বাচন উপলক্ষে আনন্দ উৎসব হয়। এই উছিলায় কিছু টাকা পয়সাও পাওয়া যায়। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাজধানীতেই বসবাসকারী পথ শিশুরাও। মিছিলে অংশ নেয়া ১০-১২ বছরের বাবুল নামের এক পথশিশু বলেন, টাকা দেয়ার কথা শুনে মিছিল করছি, কিন্তু টাকা দেয় নাই। শুধু এক বড় ভাই দুইটা বিস্কুট কিনে দিছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচর্ন প্রচারণায় লোক ভাড়া করে প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আমরা শুধু শুনে থাকি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ দেন নাই। কোন প্রার্থী যদি কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দেয় তাহলে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে আমি আর বেশিকিছু বলতে পারবো না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কখনো টাকার বিনিময়ে কখনো বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ডাকে এরা প্রচারণায় নামে। এতে প্রার্থীরা লাখ লাখ টাকাও খরচ করছেন। এধরনের কার্যকলাম বন্ধ না হলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা রক্ষায় ইসি হুমকির মুখে পড়বে।