× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে বস্তির ৩০০ ঘর পুড়ে ছাই

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার

চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মির্জাপুল এলাকার ডেকোরেশন গলির একটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পুড়ে গেছে বস্তির ৩০০ ঘর। ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের ১৪টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌছে তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বস্তির আশে পাশে কোন পুকুর না থাকায় পানি সংকটের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসার আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বস্তিতে প্রায় ৩০০টি পরিবার বসবাস করে আসছে। এরমধ্যে সবকটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
একটি রিজার্ভ ট্যাঙ্ক থেকে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ সময় বস্তিবাসীর আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। কেউ কেউ স্বজনদের খুঁজতে থাকে। আরিফুর রহমান নামে বস্তির এক বাসিন্দা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার দুইটি মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না। আগুন লাগার পর থেকে তাদের দেখা যাচ্ছে না। দুপুর ২টার পরও মেয়েদেও খুঁজে না পেয়ে তিনি আহাজারী করতে থাকেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আমরা ফোন পাই ডেকোরেশন গলিতে আগুন লেগেছে। তখন থেকে আমরা তিনটা ইউনিটের গাড়ি আসা শুরু করি। আমরা এসে প্রথম বাঁধা পাই সড়কটা সরু। আবার সড়কেই বিদ্যুতের খুঁটি। শেষ পাই সড়কের উপর দোকান! সপট পর্যন্ত আমাদের গাড়ি যেতে পারেনি। এরপর দেখি আশপাশে কোনো পুকুর নেই। আমাদের গাড়িতে থাকা পানি, একটা বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকিতে থাকা পানি শেষ হতেই একটি ডোবার সন্ধান পাই। সেই ডোবা থেকে পানি টেনেছি। শেষ পর্যন্ত ১টা ২৫ মিনিটে আগুন আমাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আমাদের টিম কাজ করছে। তদন্ত কমিটিও হতে পারে।

নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদার, পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আইনশৃংখলা বাহিনী নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। দেবদূত মজুমদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ তাদের কিছু মালামাল খোলা আকাশের নিচে সরাতে সক্ষম হয়েছে। অন্তত ওগুলো যাতে নিরাপদ থাকে আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

আগুনে সব হারাল পরিবারগুলো : মারুফা আকতার মানুষের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। তার স্বামী রবিউল ভ্যানচালক। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় তাদের বাড়ি। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। শুক্রবার সকালে যথারীতি ভ্যান নিয়ে বের হন রবিউল। মারুফা চট্টগ্রাম মহানগরীর মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকায় গিয়েছিলেন কাজ করতে। তখনই খবর পান, নগরীর মির্জপুল পুরাতন ওয়াপদা সংলগ্ন ডেন্টাল মেডিকেলের পাশে ডেকোরেশন গলিতে তাদের কলোনিতে আগুন লেগেছে। খবর পেয়ে বাসায় আসতে গিয়ে আটকা পড়েন উৎসুক জনতার ভীড়ে। ভিড় পার হয়ে বাসার কাছে যেতে চেয়ে পারেননি। দাউ দাউ জ্বলছে নিজের সাজানো ঘর। খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন স্বামী সন্তানদের। স্বামীকে পেলেন রেডক্রিসেন্টের মোবাইল চিকিৎসা কেন্দ্রে। পাশে ছিল তাদের দুই সন্তান। রবিউল বললেন, আল্লাহ প্রাণ ফিরাই দিছে, এডাই বহুত। তবে মন ভেঙে গেছে মারুফা আকতারের। কারণ টিভি, ফ্রিজসহ তার দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ২০ বছর বয়সী জনি হোসেন নিভু নিভু আগুনের দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন। তার মুখে কোন শব্দ নেই। জানতে চাইলে অনেক কষ্টে জানালেন, সব শেষ আমাদের। তিন বাসার ছয়টা কক্ষে তাদের পরিবারের ১০ জন সদস্য ছিলেন। সবাই অক্ষত থাকলেও সকাল ১০টার আগের সাজানো গোছানো ঘরগুলো এখন ছাই ছাপা। রিকশাচালক আনিস বললেন, বস্তির ৩ নম্বর গলির শেষ দিকে থেকে আগুন ধেয়ে আসছে। আমরা তখন দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ওই লাইনের ঘরগুলোতে কাঠের চুলোয় রান্না হয়। চোখের পলকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের কেউ কেউ পানি নিয়ে দৌঁড়াচ্ছিলাম, কেউ কাদামাটি, বালি নিয়ে। কিন্তু আগুনের কাছে আমরা অসহায় ছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে পৌঁছেছে। গাড়ি যদি সপটে ঢুকতে পারতো ক্ষয়ক্ষতি ৩০ ভাগও হতো না।

সরজমিনে দেখা যায়, পাঁচলাইশ থানা মোড় থেকে মির্জারপুল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি দাঁড়ানো। ডেকোরেশন গলিতে ঢুকে দেখা যায় রাস্তার ওপরই একটি দোকান। দোকানের আগে আটকেপড়া আরও একটি পানিভর্তি গাড়ি। গাড়ির পাশে একটা গলিতে মাদুর বিছিয়ে রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা হাত-পা কাটা নারী পুরুষের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। রেডক্রিসেন্ট কর্মী মো. ফয়সাল জানালেন দুপুর সাড়ে ২টা পর্যন্ত তারা ৩৬ জন নারী পুরুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর