১৮ই জানুয়ারি, দুপুর ১২টা। হাটহাজারী বাসস্টেশন জিরো পয়েন্ট মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ ব্যস্ত যানজট নিরসনে। হঠাৎ এক শিশু উপস্থিত হয়ে ট্রাফিক পুলিশকে বলে, ‘স্যার আমি তামিম, ফরহাদাবাদ শেখ রাসেল পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এসেছি। আমি ইউএনও রুহুল আমিন স্যারের কাছে যাবো। স্যারের অফিস কোন দিকে?’ শিশুটির মুখে ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) রুহুল আমিনের নাম শুনে ট্রাফিক পুলিশ টিএসআই আবদুর রব হতবাক হয়ে যান। এ সময় তিনি এক গণমাধ্যমকর্মীকে ডেকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে বাসস্টেশন মোড়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন পৌঁছালে শিশু তামিমকে শেখ রাসেল পুনর্বাসন কেন্দ্রে ফেরত পাঠাতে ফরহাদাবাদ ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে বুঝিয়ে দেন।
এর আগে তামিম উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিনকে বলেন, ‘স্যার আমাদেরকে বাঁচান, আমরা এখানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। এ নির্যাতন সহ্য পারতেছি না।’
শুধু তামিম নয়, ওই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি পালিয়ে গেছে আরও ১৫ শিশু।
তারা দারোয়ান থেকে শুরু করে মেস কুকারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ তামিমের।
১১ বছরের জয় হাসান তামিম জানায়, রাতে প্রকৃতির ডাকে বাথরুমে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে দিতে বললে গোবিন্দ স্যার আমাদেরকে লোহার শেখল দিয়ে মারে। দারোয়ান শামসুল, মেস কুকার জুনাকিসহ তারা বিভিন্ন অজুহাতে আমাদেরকে মারধর করে। ঠিকমতো খেলাধুলা করতে না পারলে পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিনিয়রদের দিয়ে মারধর করানো হয়। এসব অমানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত কয়েকদিন আগে রিমন, আবদুস শুক্কুর, প্রকাশ ওসিসহ ১৫ জন সহপাঠী এখান থেকে পালিয়ে গেছে।
কিভাবে পালিয়ে আসলো জানতে চাইলে তামিম বলে- সাগর, মোরশেদ, রিফাত, রাকিবের সঙ্গে আমিও স্কুলে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে এসেছি। তাদেরকে ওই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে ফরহাদাবাদ শিশু পরিবারে দেয়ার জন্যও সে ইউএনও রুহুল আমিনকে অনুরোধ করে।
জয় হাসান তামিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে কর্মরত আউট রিচ ওয়ার্কার বিপুল চন্দ্র পাল, কেয়ারগিভার মো. জাকির হোসেন, জবপ্লেসমেন্ট অফিসার সাইদুর ইসলাম শিশুদের ওপর নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। তবে তারা জানান, আমাদের এখান থেকে গত কয়েকদিন আগে ১৫ জন শিশু পালিয়ে গেছে। এরা সবাই মাননীয় আদালত কতৃক প্রেরিত শিশু। তারা আরও বলেন, শিশুগুলো আগে রাস্তায় রাস্তায় মাদক সেবন করতো। তাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। আদালত শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে হস্তান্তর করেছে। তারা এখানে মাদক সেবন করতে পারে না। এখানে মাছ, মাংস, ডিম ও ভালো ভালো খাবার তাদের পছন্দ না, তাই তারা এখান থেকে পালিয়ে গেছে। তারা সবাই মুলত: মাদকাসক্ত। তাদেরকে স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আদালতের। আদালতের আদেশ ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না।
পালিয়ে যাওয়া শিশুদের নাম ও তালিকা চাইলে ওই কর্মকর্তারা অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, পালিয়ে যাওয়া শিশুগুলো মাননীয় আদালত কর্তৃক প্রেরিত। তাদের নাম ও তালিকা কেস ম্যানেজারের কাছে। উনাকে ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না।