× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা ভাইরাস /পরিচয় লক্ষণ ও করণীয়

এক্সক্লুসিভ

মানবজমিন ডেস্ক
২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার

করোনা ভাইরাস- সমপ্রতি এই নাম বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে তিন সপ্তাহে ডজনখানেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। কেড়ে নিয়েছে অন্তত ৮১টি প্রাণ। আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭০০’র বেশি মানুষ। বাংলাদেশে এখনো এর অস্তিত্ব ধরা পড়েনি। তবে চীন থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব বেশি না হওয়ায় যেকোনো সময়ই এর বিস্তার সম্ভব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ইতিমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এই ভাইরাস প্রতিরোধে। এমতাবস্থায়, পাঠকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই ভাইরাস কী, এতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ও অন্যান্য বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।
 

করোনা ভাইরাস কী?
করোনা ভাইরাস ‘সাধারণ সর্দি’ ছড়ানো গোত্রের ভাইরাস। অনেকটা মুকুট (ক্রাউন) বা সূর্যের করোনার মতো দেখতে বলেই এই নাম। সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে এই গোত্রের ভাইরাস বিস্তার লাভ করে। সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শ্বাসনালীর উপরিভাগ ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল তন্ত্রের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে। করোনা ভাইরাস গোত্রের বেশির ভাগ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ফ্লু-ঘরানার উপসর্গ দেখা দেয়। সারস-কভ ও মারস-কভ ভাইরাস দুটি শ্বাসনালীর উপরিভাগ ও নিম্নভাগ উভয়ই আক্রান্ত করতে পারে।

চীনের নতুন করোনা ভাইরাস
এটি একটি নভেল করোনা ভাইরাস- অর্থাৎ, করোনা ভাইরাস গোত্রের এই ভাইরাসটি এর আগে কখনো দেখা যায়নি। ভাইরাসটির অস্তিত্ব সমপর্কে এবারই প্রথম জানলো বিশ্ববাসী। গোত্রের অন্যান্য সদস্যের মতো এরও উৎপত্তি প্রাণী থেকেই। এতে আক্রান্ত অনেকেই হয়তো উহানের সামুদ্রিক খাবারের পাইকারি বাজার হুয়ানান-এ কাজ করেছেন বা সেখান থেকে খাবার কিনেছেন। বাজারটিতে জ্যান্ত ও সদ্য জবাই করা বন্যপ্রাণীও বিক্রি করা হতো। সাধারণত নতুন ও জটিল ভাইরাসগুলো প্রাণীদের দেহেই জন্ম নেয়। ইবোলা ও ফ্লু-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন ভাইরাসটির নামকরণ করেছে ২০২০-কভ।

অন্যান্য করোনা ভাইরাস
চীনে উৎপত্তি হওয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপাইটরি সিনড্রোম (সারস)-এ বিশ্বব্যাপী প্রাণ হারায় প্রায় ৮০০ মানুষ। ওই ভাইরাসটির উৎপত্তিও চীনে হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এ ছাড়া, ২০১২ সালে মিডল ইস্টার্ন রেসপাইরেটরি সিনড্রোম (মারস) নামে একটি করোনা ভাইরাস দেখা গিয়েছিল সৌদি আরবে। সারস ও মারস উভয়ের উৎপত্তিই হয় প্রাণী থেকে। মারস মানুষে ছড়িয়েছিল উটের মাধ্যমে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর আসল উৎপত্তি হয় বাদুড় থেকে। নতুন ভাইরাসটি সাপ বা বাদুড় থেকে ছড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন করোনা ভাইরাসের লক্ষণ
নতুন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাশি, জ্বর ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে, লক্ষণগুলো ভাইরাসের ওপর নির্ভরশীল। তবে সাধারণত শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, দম ফুরিয়ে যাওয়া, কাশি ইত্যাদি। অবস্থা অতি বেগতিক হলে শরীরের কোনো অঙ্গ, যেমন কিডনি অচল হয়ে পড়তে পারে। যে থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এই নিউমোনিয়া অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অ্যান্টিবায়োটিক এটি নিরসনে কার্যকর নয়। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারা তাদের ফুসফুস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সচল রাখতে সহায়তা পেতে পারেন। তবে সুস্থ হওয়াটা তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে।

যেখানে ছড়িয়েছে
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ২৪শে জানুয়ারি জানিয়েছে, এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। এর আনুমানিক উৎপত্তিস্থল উহানে রীতিমতো অবরোধ জারি করে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত  তথ্যানুসারে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮১ জন হয়েছে। গত দুই দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন ডজন খানেকের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন ভাইরাসটিতে। চীনের বেইজিং, সাংহাই, তিয়ানজিন সহ হংকং, ম্যাকাউ, জাপান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানে ভাইরাসটির অস্তিত্ব সমপর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভারতেও একাধিক ব্যক্তিকে আক্রান্ত সন্দেহে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এসবই প্রাথমিক তথ্য। অনেক জায়গাতেই ভাইরাসটি শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। বিশেষজ্ঞরা সে পরিমাণ ৪ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে হতে পারে বলে জানিয়েছেন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
আপনি যদি সমপ্রতি চীন সফর না করে থাকেন, সেখানে সফর করেছেন বা এই ভাইরাসে আক্রান্ত এমন কারো সংসপর্শে না আসেন তাহলে আপনার দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সেক্ষেত্রে আপনার যদি সর্দি-কাশি হয় তাহলে তা সাধারণ চিকিৎসাতেই সেরে যাবে। তবে যদি কোনো আক্রান্তের সংসপর্শে আসেন তাহলে আপনিও আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা উচিত। এক্ষেত্রে, সর্দি-কাশির সঙ্গে যদি শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, জ্বর, অসুস্থ ভাব ও বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করা উচিত।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর