বিশেষ দুই দিনকে ঘিরে উৎসবে মেতেছে ঢাকার বাসিন্দারা। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গতকাল অন্যরকম সেজেছিলো ঢাকা। নারীরা বাসন্তি রঙের শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে চুড়ি, লিপস্টিক ও মাথায় ফুলের টায়রা পড়েছিলেন। ছেলেরাও কম যায়নি। প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিয়ে তারাও পরেছিলো পাঞ্জাবি। পরে ভালোবাসার মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে পার্কে-রেস্তোরায়। আর সেলফিবাজিতো ছিলোই। দিনটিকে উদযাপন করতে অনেকেই যান দূর ভ্রমণে।
এই দিনটিতে যারা যুগলবন্দি হয়েছিলেন তাদের আনন্দের কমতি ছিলো না। প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে দিনটি ছিল অন্য রকমের। গতকাল ঢাকার প্রতিটা দর্শনীয় স্থান, পার্ক ও রেস্তোরা সেটি জানান দিয়েছে। সর্বত্রই যুগলদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতই। গতকাল ঢাকার টিএসসি, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাতিরঝিল, আহসান মঞ্জিল, আমুলিয়া, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভালবাসা দিবস ও ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের দৃশ্য। এসব স্থানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের রঙিন পোশাক পরে প্রেমিক যুগলরা হাতে হাত ধরে হাঁটছিলো।
খাবারের দোকানগুলোতে ছিলো উপচেপড়া ভিড়। গুলশান, বনানী থেকে শুরু করে ধানমন্ডি, মিরপুর, বাড্ডা, খিলগাঁর চাইনিজপাড়া, মোহাম্মদপুরের রেস্তোরাগুলোতে ছিল একই অবস্থা। হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, অন্য বছর পহেলা ফাল্গুন আগের দিন হয় আর পরের দিন ভালবাসা দিবস। দুই দিনেই আলাদা আলাদা বিক্রি হয়। কিন্তু এবছর একই দিনে হওয়াতে দুই দিনের বিক্রিটা একদিনেই হচ্ছে। সকালে রেস্তোরা খোলার পর থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। নিয়মিত ক্রেতার পাশাপাশি অনেক নতুন নতুন ক্রেতাও এসেছেন। খিলগাঁও চাইনিজ পাড়ার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, দিনটিকে ঘিরে আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল আমাদের। বছরের এই দিনটাতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের অনেক আনন্দের দিন হয়। যেখানেই আড্ডা দিক না কেন এক সময় রেস্তোরায় এসে খাবার খাবেই। আমরা বিশেষ আয়োজন করে রাখি। মোহাম্মদপুর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, অন্য দিনের চেয়ে এই দিনটাতে বিক্রি ভাল হয়।
এদিকে, গতকাল রাজধানীর ফুলের দোকানগুলোতে বিক্রি ছিল অনেক বেশি। শাহবাগ বটতলা ফুল মার্কেটের প্রত্যেকটি দোকানে সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দোকানীরা জানিয়েছেন, বিক্রি ভাল ছিল তবে ফুলের দাম বাড়ানো হয়নি। তাই সীমিত লাভ করে বিক্রি করা হয়েছে। তবে যারা খুচরা বিক্রেতা তারা অনেক বেশি দামে ফুল বিক্রি করেছে। ভালবাসা দিবসের জন্য ঢাকার প্রতিটা অলিগলিতে একদিনের জন্য ফুলের ব্যবসা করেছে অনেকে। খিলগাঁও এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী আলিম জানান, প্রতি বছর এই দিনগুলোতে আমি ফুল বিক্রি করি। ৫ হাজার টাকার ফুল এনে বিক্রি করে ৪/৫ হাজার টাকা লাভ করি।
ওদিকে, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে কথা হয় প্রেমিক যুগলদের সঙ্গে। হাতিরঝিলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মম ও তায়িফ বলেন, আমাদের জন্য আজকের দিনটি একটু স্পেশাল। কারণ আমাদের দুজনের সম্পর্কের মধ্যে এবছরই প্রথম ভালবাসা দিবস পেয়েছি। তাই আমরা আগে থেকে দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমরা দুজনেই মেচিং শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনেছি। সারাদিন একসঙ্গে ঘুরাঘুরি করছি। রেস্তোরায় খাবার খেয়েছি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যাবো। টিএসসি এলাকায় শান্তা ও তোয়েল বলেন, এর আগেও আমরা অনেকবার এই দিনটি পালন করেছি। তবে অন্যবছর একদিন পহেলা ফাল্গুনের ঘুরাঘুরি ও আরেক দিন ভালবাসা দিবসের ঘুরাঘুরি করেছি। কিন্তু এবছর দুদিনের ঘুরাঘুরি একসঙ্গেই করলাম। রমনা পার্কে কথা হয় বেসরকারি অফিসের দুই চাকরিজীবী দম্পতি সোহান ও রুমানার সঙ্গে। তারা বলেন, তিন বছর হয় বিয়ে হয়েছে আমাদের। কিন্তু অন্যান্য বছর বের হতে পারিনি। অফিসে কাজের ব্যস্ততা ছিলো। এবছর শুক্রবার হওয়াতে দুজনের ছুটি। তাই বের হয়েছি। পরিকল্পনা ছিলো আগে থেকেই। তাই সকালেই বের হয়েছি। আজ সারাদিন ঘুরবো। সিনেমা দেখবো।