একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যখন লিখবো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল। এই সময়ের অন্যতম নায়ক হচ্ছেন কাজী আরেফ আহমেদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম প্রধান সেনাপতি হচ্ছেন কাজী আরেফ আহমেদ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে কাজী আরেফ আহমেদের ২১তম হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত যুদ্ধাপররাধীর বিচারে কাজী আরেফ আহমেদের ভূমিকা; স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে কাজী আরেফ পরিষদ। এই অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতাকালে শহরিয়ার কবির আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ পালনের জন্য শত শত কোটি টাকার বাজেট করা হয়েছে। বিশাল আয়োজন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হবে। বঙ্গবন্ধুর ব্র্যান্ডিং করা হবে। কিন্তু তার আদর্শ, তার রাজনৈতিক দর্শন সেটি কোথায়? তার ধর্মনিরপেক্ষতা কোথায়, তার সমাজতন্ত্র কোথায়? এই জায়গাতে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আরেফ ভাই চলে যাওয়ায় যে শুন্যতা তৈরি হয়েছে। এটি সহজে পুরণ হবে না। আদৌ পূরণ হবে কীনা জানি না। এই রকম নেতা আমরা তৈরি করতে পারবো না। আরেফ ভাইয়ের হত্যার বিচার হয়েছে। কয়েকজনের মৃতুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে করে অনেকের হত্যার বিচার করেছি। কিন্তু আমাদের জানতে হবে নেপথ্যের নায়ক কারা। কেন হত্যা করা হয়েছে? কিন্তু যেকোন একটা হত্যা মামলায় হত্যার মোটিভ খুঁজে বের করা জরুরি। উদ্দেশ্য কী? বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে ৭১’র হত্যার প্রতিশোধ নেয়া যেতো না। কাজী আরেফ আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আন্দোলনকে বন্ধ করবার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম মুছে ফেলবার জন্য। এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ককে বের করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রুকে রুখে দিতে হবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র কখনোই বন্ধ হবে না যদি আমরা ৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে না পারি। এই স্মারক বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ও সভাপতি জিয়া উদ্দিন তারেক আলী বলেন, আরেফ আহমেদের মূল্যায়ন কিন্তু হলো না এই দেশে। ঐ পাকিস্তানী আমলে আরেফ কতোখানি এগিয়ে ছিলো তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। চিন্তায়, মননশীলতায় তিনি ছিলেন অনন্য। যারা তার অনুসারী ছিলেন তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এটিও ইতিহাস। কিন্তু এই ইতিহাস ধারণ করা হয়নি। স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহফুজুর রহমান। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সেক্টর কমাণ্ডার কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমাণ্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী প্রমুখ।