× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প ব্যথানাশক ট্যাবলেট

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার

দিনাজপুরে ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প ভয়ঙ্কর মাদক ব্যথানাশক ট্যাবলেট ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অবাধে বিক্রি হচ্ছে। আর তা সেবন করে শুধু নৈতিক অধঃপতনই নয়, অকালে ঝরে পড়ছে তরুণ ও যুব সমাজ। এ অভিযোগে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও দোকান সিলগালা করেছে, প্রশাসন। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি না করার প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রায় সব দোকানেই মিলছে মাদকের বিকল্প এসব ভয়ঙ্কর নেশা জাতীয় ওষুধ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক হিসাবে এসব ওষুধের ব্যবহার রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সীমান্ত ঘেঁষা জেলা দিনাজপুরে মাদকে ছড়াছড়ি। তারপরও কেন ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প হিসাবে এই ভয়ঙ্কর মাদক ব্যথানাশক ট্যাবলেট কেন মাদকাসক্তরা ব্যবহার করছে? তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, চমকপ্রদ তথ্য। প্রথমত, দামে কম ও হাতের নাগালে পাওয়া যায় সহজলভ্য মাদক। দ্বিতীয়ত, ব্যথানাশক ট্যাবলেট সেবনে নাকি ইয়াবা ও হেরোইনের চেয়েও বেশি নেশা হয়।
তৃতীয় তো, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে ব্যথানাশক ট্যাবলেট নিরাপদ সরবরাহ (ক্রয়-বিক্রয়)।
এই মাদক গ্রহণের দৃশ্য ইয়াবা বা হেরোইনের মতো হলেও আসলে মাদকাসক্তরা একই পদ্ধতিতে সেবন করে থাকে ভয়ঙ্কর মাদক ব্যথানাশক ট্যাবলেট। গত কয়েক বছর ধরেই ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প হিসেবে মাদকাসক্তরা টাপেন্টা, সিলটা, পেন্টাডল, লোপেন্টাসহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ট্যাবলেট সেবন করছেন। এ অভিযোগে এরই মধ্যে জেলার ৩টি দোকান ছাড়া বাকি ওষুধের দোকানগুলোকে ব্যথানাশক ট্যাবলেট বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন। একই অভিযোগে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও দোকান সিলগালা করেছে, প্রশাসন (ভ্রাম্যমাণ আদালত)। কিন্তু এরপরেও ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অধিকাংশ দোকানে এসব ট্যাবলেট গোপনে বিক্রি করছে এক শ্রেণির অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী। জেলা শহরের চারুবাবু’র মোড়, বালুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মোড়, হাসপাতাল মোড়, টিএনটি রোড, গোলকুঠি রোড, মেডিকেল মোড়, সুইহারী, পুলহাটসহ শহরের বেশ কিছু স্থানে এবং  জেলার ১৩টি উপজেলার বেশ কিছু স্থানে ক্রয়-বিক্রয় চলছে ইয়াবা ও হেরোইনের বিকল্প হিসেবে এই ভয়ঙ্কর মাদক ব্যথানাশক ট্যাবলেট। প্রতি পিস ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকার ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে, ৮০-১৫০ টাকায়। এর ছোবল থেকে রেহাই পায়নি জনপ্রতিনিধিরাও। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার এক পৌর কাউন্সিলর ভয়ঙ্কর এই মাদক ব্যথানাশক ট্যাবলেট সম্পর্কে দিয়েছেন ভয়াবহ তথ্য। তিনি এই ভয়ঙ্কর এই মাদক ব্যথানাশক ট্যাবলেটে আসক্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই মাদকাসক্ত থেকে রেহাই পেতে তিনি এখন দিনাজপুর শহরের ‘নতুন জীবন’ নামে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পৌর কাউন্সিলর জানিয়েছেন, যে ব্যথানাশক ট্যাবলেট এমন ভয়ঙ্কর মাদক যে তা একবার সেবনের পর পরবর্তীতে তা সেবন না করে থাকা যায় না। হাত-পাসহ সমস্ত শরীর ব্যথা, শরীরে কাঁপুনি, বুক ধরপড় করতে থাকে। তা সেবনের পর আবার কিছু সময় ভালো থাকা যায়। নিজেকে ভালো লাগে। এই ব্যথানাশক ট্যাবলেট সেবন করলে শুরু শারীরিক অসুস্থতা না, যৌন শক্তি পুরোপুরি হ্রাস পায় (কমে যায়)। কিডনি নষ্ট, ক্যান্সারসহ বিভন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। এই ব্যথানাশক ট্যাবলেট মাদক সেবন করে ইতিমধ্যে তার কয়েকজন বন্ধ (মাদকসঙ্গী) মারা গেছে। আর এ কারণে তার পরিবার তাকে মাদকাসক্ত নিরাময়ে কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছেন। শেষে তিনি এই ভয়ঙ্কর নেশা থেকে দূরে থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ‘নতুন জীবন’ এর নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. আরাফাত উল্লাহ্‌ জানান, টাপেন্টা, সিলটা, পেন্টাডল, লোপেন্টাসহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ ইয়াবা ও হেরোইনের মতোই সেবন করা হচ্ছে। এসব ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনের চেয়েও তীব্র এবং ভয়ঙ্কর। দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় এর প্রভাব বাড়ছে। মাদকের উপাদান এভাবে বাড়লে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা তার। তাই, তা বিক্রি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর