ওয়ানেডেতে এখন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ। ৫০ ওভারের ম্যাচে টাইগারদের বলে-কয়ে হারানোর দিন শেষ। তবে টেস্টে বড় দলগুলোর সঙ্গে কোনোভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো হতাশ টাইগার ভক্ত-সমর্থকরা। প্রতিটি হারের পর গণমাধ্যমে চলে সমালোচনা। তবে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো টেস্টে এখনো বাংলাদেশের ‘শিশুকাল’ দেখেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সামনে রেখে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে টাইগারদের প্রধান কোচ ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। কথাগুলো মাথায় রাখবেন।
বাংলাদেশে ক্রিকেট উন্মাদনা অনেক বেশি। একইসঙ্গে (ক্রিকেটের জন্য) মিডিয়া, দর্শকদের চিন্তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। দলও এসব ছাড়া সঠিকভাবে এগোতে পারবে না। তাই বিষয়গুলো স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন। সবাইকে বুঝতে হবে বর্তমান টেস্ট দলের (নাজমুল হোসেন) শান্ত মাত্র ৩ টেস্ট খেলেছে। সাইফ (হাসান) তার দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে। (আবু জায়েদ) রাহীকে দেখে মনে হয় যেনো ৪০ ম্যাচ খেলে ফেলেছে, অথচ তার টেস্টের সংখ্যা মাত্র ৭টি। ইবাদত খেলেছে ৪ টেস্ট। এরা একেবারেই অনভিজ্ঞ। কাজেই ধৈর্য ধরুন।’
মুমিনুল হকের নেতৃত্বে তিন টেস্টের প্রত্যেকটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ভারতে ২-০ ও পাকিস্তানে প্রথম টেস্টে পরাজয়ের জন্য মুমিনুলের দায় দেখেন না ডমিঙ্গো। দলের অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের দিকে ইঙ্গিত করে এই প্রোটিয়া কোচ বলেন, ‘দলের অধিনায়ক দায়িত্ব নিয়েই ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করেছে। বিশ্বের অন্যান্য অধিনায়কের হাতে ১০০-১৫০ টেস্ট খেলা টেস্ট বোলার আছে। ব্রড খেলেছে ১৪০, রাবাদা খেলেছে ৫০ টেস্ট, ফিল্যান্ডার খেলেছে ৭০ টেস্ট। মিচেল স্টার্ক খেলেছে ৬০ টেস্ট। আমি বলতে চাচ্ছি, সংবাদমাধ্যমকে ধৈর্য ধরতে হবে। নির্বাচকদেরও কিছু ক্রিকেটারদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমি যে দলের কোচিং করাচ্ছি, এই মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেটে এটিই সবচেয়ে অনভিজ্ঞ টেস্ট দল। আর আপনারা প্রত্যাশা করছেন, এই দলটি ভারত, পাকিস্তান গিয়ে এক দিনের অনুশীলনেই ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে! ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে। সমর্থক ও সংবাদমাধ্যমের সমর্থন ওদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভালো আমাদের খেলতে হবে, ওরা এটা জানে। তবে কিছু সময় দরকার বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে। সুতরাং ধৈর্য ধরুন। ওরা আপনাদের গর্বিত করবে। কিছু সময় দরকার এই যা।’
পাপনের হস্তক্ষেপ, মানিয়ে চলাটাই সমাধানদলের বাজে পারফরম্যান্সে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন খুবই অসন্তুষ্ট। গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি সরাসরিই বলেন, দলের সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন। এতে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কোচরা কী করবেন? পাপনের হস্তক্ষেপ নিয়ে ডমিঙ্গোর উত্তর, ‘বিসিবি প্রধান দল নিয়ে বেশ আবেগপ্রবণ। দল ভালো করুক, এটাই তিনি চান। আমি এখনো তার সঙ্গে কথা বলিনি। আমার কাউকে এসব নিয়ে বলতেও হয় না। দরকার আছে বলেও মনে করি না, এখন পর্যন্ত। আমাকে পারিশ্রমিক দেয়া হয় সিদ্ধান্ত নেয়া আর নিজের কাজ করার জন্য। আমি এসেছি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। দল নির্বাচক সহজ না সেখানেও। এটাই আমার চাকরি, আমাকে এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমার জন্য কিছুই নতুন না।’
প্রয়োজন পেসবান্ধব উইকেটটেস্টে বাংলাদেশের ব্যর্থতার মূল কারণ সাদামাটা পেস আক্রমণ। বর্তমানে দেশসেরা পেসার আবু জায়েদ রাহী ৮ টেস্টে নিয়েছেন ২০ উইকেট। রাহীর পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট টেস্টে কতটা অসহায় টাইগার পেসাররা। ডমিঙ্গো মনে করেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে পেসারদের জন্য একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম দরকার। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ভালো উইকেটে খেলা উচিত। তাহলে আমরা দেশ এবং দেশের বাইরে উন্নতি করতে পারবো। স্পিনিং উইকেটে খেললে দেশের বাইরে আমাদের সম্ভাবনা কম। আমরা যখন ভারত, পাকিস্তান বা অস্ট্রেলিয়াতে যাই, তখন আমরা জানি না যে আমাদের তিন পেসার কারা হবে। কেননা পেসাররা তেমন ম্যাচই খেলে না। আমরা জানি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা স্পিনে সফল হবো। স্পিনিং উইকেটে খেলা হলে পেসাররাও অনিশ্চয়তায় ভোগে। ওরা চিন্তা করে যে ওরা হয়তো ভালো বোলার না। কাজেই আমাদের ভালো উইকেটে খেলতে হবে। যেন আমরা দলে পেসার খেলাতে পারি এবং ব্যাটসম্যানরাও বড় রান করতে পারে।’
লড়াই করে ফিরবে মাহমুদুল্লাহবাজে ফর্মের কারণে জিম্বাবুয়ে টেস্ট থেকে বাদ পড়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমদুল্লাহ রিয়াদ। ডমিঙ্গো বলেন, সে (মাহমুদুল্লাহ) এই মুহূর্তে দলে নেই। সত্যি বলতে, ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় আমি তাকে রেখেছি। সাদা বলের ক্রিকেটে সে আমাদের মূল ক্রিকেটারদের একজন। টেস্ট একাদশে স্থায়ী হতে সে অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যাবে।