× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৩৬ ঘণ্টার সফরে ভারতে ট্রাম্প

শেষের পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার

ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয় সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনা করতে প্রথমবারের মতো ভারত সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ষষ্ঠ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারত সফর করছেন তিনি। সোমবার সকাল এগারোটা ৪০ মিনিটে গুজরাটের আহমেদাবাদে অবতরণ করেন তিনি।
তার এই সফরকে কেন্দ্র করে সেখানে চলে এলাহি কাণ্ড। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় তার যাত্রাপথ। দু’দিনের সফরে তার সঙ্গী হয়েছেন মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, মেয়ে ইভানকা ট্রামপ, জামাতা জারেড কুশনার, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ওব্রাইন, বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রোজ, জ্বালানিমন্ত্রী ড্যান ব্রোলিতসহ একটি প্রতিনিধিদল ও অন্যরা।
ভারতের উদ্দেশ্যে রোববার রাতে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করার সামান্য আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমরা জমায়েত হবো লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমি চমৎকার ভালো থাকি।
তিনি একজন বন্ধু। এর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইটে ট্রাম্পের সফরকে একটি সম্মান হিসেবে ঘোষণা দেন। সোমবার সকালে ভারতে আসার আগে থেকে একের পর এক টুইট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার বিমান ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তেই ট্রাম্প হিন্দিতে টুইট করেন, আমরা ভারতে আসছি। এখন মাঝপথে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলের সঙ্গে দেখা হবে। ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে মোদি টুইট করেন, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভারত।
বিমান থেকে নেমেই মোদিকে আলিঙ্গন করেন ট্রাম্প। তাদেরকে অভিনন্দন জানাতে সকালেই আহমেদাবাদ যান মোদি। এরপরই সপরিবারে ট্রাম্প রওনা দেন সাবরমতী আশ্রমের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ছিল মোদির কনভয়ও। সাবরমতী আশ্রমে ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এরপর ভারত রাষ্ট্রের জনক মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে মাল্যদান করেন ট্রাম্প ও মোদি। গোটা আশ্রমটি মোদি নিজেই ঘুরিয়ে দেখান তাদের। ট্রাম্প ও মেলানিয়া দু’জনে চরকাও কাটেন। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সেখান থেকে মোতেরায় ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মোদি ও ট্রাম্প।
সর্দার বল্লভভাই পাটেল বিমানবন্দর থেকে আহমেদাবাদ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার রাস্তা গত কয়েক দিনে সেজে উঠেছে। নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হয়েছে গোটা আহমেদাবাদ শহর। ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) এবং সেপশাল প্রটেকশন গ্রুপ। নবগঠিত সরদার বল্লভভাই পাটেল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ট্রামপকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেখানে ভারতের সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যে ভরা সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। ‘হাউডি মোদি’র আদলেই নমস্তে ট্রামপ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার।
নমস্তে ট্রাম্প ইভেন্টে ট্রাম্পের গাড়িবহর যে পথ দিয়ে যায় আহমেদাবাদের সেই সরদারনগর এলাকার পাশেই রয়েছে বেশকিছু বস্তি। ট্রাম্পের চোখের আড়ালে রাখার জন্য ওই বস্তিগুলো এবং সড়কের মাঝে ৫০০ মিটার দীর্ঘ ও চার ফুট দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এর মধ্যদিয়ে ট্রাম্পের চোখ থেকে দরিদ্রদের আড়াল করছে সরকার।
গুজরাটের ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পর আগ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ডনাল্ড ট্রামপ। আগ্রায় পৌঁছান ভারতীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে। সেখানে তাকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের গভর্নর আনন্দীবেন পাটেল ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাদের উদ্দেশ্যে শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রদর্শন করেন। সেখানে তিনি তাজমহল পরিদর্শন করেন। এ জন্য কর্তৃপক্ষ যমুনা নদীতে বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়েছে। যাতে তাজমহল ছুঁয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
এখান থেকে ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের দিল্লিতে একটি সরকারি স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ওই সময়ের অনুষ্ঠান থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়াকে আমন্ত্রণ না জানানোর পর এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাতে ট্রাম্প ও তার পরিবার থাকার কথা রয়েছে দিল্লির আইটিসি মাউরিয়া হোটেলে। ওই হোটেলকে তিন স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। আশেপাশে মোতায়েন করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
ট্রাম্পের দু’দিনের এই সফরের দিকে এ উপমহাদেশ তো বটেই, একই সঙ্গে তাকিয়ে আছে বাকি বিশ্ব। কারণ, এতে জম্মু-কাশ্মীরের সংকট সমাধানের বিষয় উত্থাপন করতে পারেন ট্রাম্প। তাছাড়া রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা দ্বিপক্ষীয় বিষয়। সামনের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। অন্যদিকে, গত বছর টেক্সাসে ‘হাউডি মোদি!’ ইভেন্টের অল্প কয়েক মাস পরে হচ্ছে তার এই সফর। হাউডি মোদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সম্প্রদায়। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প সেখানে ভাষণ দিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদিকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এবার ট্রাম্পের সফরকে পাল্টা প্রতিদান হিসেবে দেখছেন অনেকে। কারণ, এ সময় ভারতের অর্থনীতির অবনমন কাটিয়ে উঠা নিয়ে মোদি যে লড়াই করছেন তাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইতে পারেন। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য নিয়ে টান টান আলোচনা। ভারতের পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে ভারত। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে টান ধরেছে।
সেখানে আলোচনা হতে পারে দুই দেশের বাণিজ্যিক চুক্তি। শুল্ক প্রত্যাহার বা উচ্চ হারে শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বৃহৎ এই দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে সম্পর্ক ম্লান হয়েছে। তা এড়িয়ে একটি আশা জাগানিয়া চুক্তির আশা করছেন অনেকে। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে বহু কোটি ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিনছে ভারত। এমন এক সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হবে মোদির। ওই অস্ত্র কেনা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টান ধরেছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতা যেসব বিষয়ে আলোচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে একান্তে আলোচনা করবেন ট্রাম্প।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর