× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

২৩ বছর পরেও...

এক্সক্লুসিভ

কামরুজ্জামান মিলু
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার

সালমান শাহ’র নাম শুনেই বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খান তার শ্যুটিং বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সালমানকে নিয়ে যান তার বাসায়। পরিচয় করিয়ে দেন তার স্ত্রী গৌরি খানের সঙ্গে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে একসঙ্গে ছবিও তুলেন দুই দেশের দুই সিনে তারকা। একসঙ্গে ছবি করবেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। সেটি ছিল ১৯৯৫ সাল। কিন্তু দুই কিংয়ের একসঙ্গে ছবি করা হলো না। একবছর যেতে না যেতেই সালমান শাহ’র মৃত্যু হয়।
আর এ মৃত্যুর দীর্ঘ তেইশ বছর পার হয়েছে। দেশের সিনেমাপ্রেমী মানুষের হৃদয়ের রাজা সালমান শাহ আজও বেঁচে আছেন তাদের হৃদয়ে। কিন্তু তার মৃত্যুকে ঘিরে তেইশ বছর ধরেই চলছে নানা আলোচনা। সোমবার পিবিআই তাদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার পর ফের দেশজুড়ে সামনে আসে নব্বই দশকের সাড়া জাগানো চিত্র নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যু। পিবিআইয়ের এ রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে সালমান শাহ’র পরিবার থেকে। অন্যদিকে চিত্র নায়িকা শাবনূরও এ নিয়ে বিব্রত। তিনি বলেন, আমাকে জড়িয়ে এমন কথা কেন বলা হচ্ছে জানিনা। সালমান শুধু আমার নায়ক ছিলেন। সিনেমার নায়ক। সহশিল্পী ছিলেন। নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন-পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনের এ তথ্যের তীব্র নিন্দা জানান শাবনূর। তদন্ত প্রতিবেদনে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। এর প্রথমটি সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। শাবনূর বর্তমানে অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। মানবজমিন-এর সঙ্গে টেলিফোনে তিনি বলেন, আমি ৩রা ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়াতে এসেছি। পিবিআইয়ের রিপোর্টের বিষয়টি অনেকের মুখে জেনেছি। আমি একটি বিয়েতে মেলবোর্নে গিয়েছিলাম। এখন সিডনিতে আছি। আমাকে জড়িয়ে এমন কথা কেন বলা হচ্ছে, তা আমি জানি না। একটা মৃত মানুষকে এভাবে টানাহেঁচড়া করার নিন্দা জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে সিনে জগতে প্রবেশ করেই ঝড় তুলেন। হাজারো সিনেমা প্রেমীর হৃদয়ে জায়গা করে নেন। ইমন থেকে হয়ে উঠেন সালমান শাহ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে জীবন প্রদীপ নিভে যায় তার। রহস্যজনক এ মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে চলে যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। সালমান ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। সালমান শাহ তখন থাকতেন নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার একটি ফ্ল্যাটে। ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সকাল সাতটায় কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু  ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ’র বাবাকে তার ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিলেন না। নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, ‘ স্যার এখন তো ওপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ’র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। একপর্যায়ে কমর উদ্দিন জোর করে ওপরে যান। কলিংবেল চাপ দেয়ার পর দরজা খুলে দেয় সালমানের স্ত্রী সামিরা। কমর উদ্দিন তখন সামিরাকে বলেন, ইমনের সঙ্গে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের কাগজে সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। সামিরা বলল, ও তো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু  যেতে দেয়নি। আমার হাজব্যান্ড ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে। বেলা এগারটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরীর কাছে। ওই টেলিফোনে বলা হয়, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। ফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহর বাসার দিকে রওনা হন। সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলেকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। এ বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল, খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেয়ার কথা, সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেয়ার কথা সেদিকে মাথা। ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বলা হয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তবে সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তার ভক্তকুলের মধ্যে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের। চিত্রনায়িকা মৌসুমী বলেন, সালমান শাহ যেদিন মারা যায় সেদিন আমাদের কয়েকটি নতুন সিনেমা সাইন করার কথা ছিল। আমার অনেক ভালো একজন সহশিল্পী ছিল সালমান। আগে থেকেই তাকে আমি চিনতাম। কারণ বাবার চাকরির কারণে ইমনের পরিবার খুলনা সার্কিট হাউসে থাকত। ওই স্কুলে আমার ফুফু ছিলেন টিচার। ফুফুর ছুটি হওয়া পর্যন্ত ইমনদের বাসায় আড্ডা দিতাম। সেও আমাদের বাসায় যাওয়া-আসা করত। ভালো বন্ধুত্ব হয়। এরপর হঠাৎ ওরা ঢাকায় চলে আসে। এরপর ঢাকায় তো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ হলো আমাদের। খুব অল্প সময়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়া এক তারকাকে হারিয়েছি আমরা। তিনি বলেন, এই সময় এসে তার মৃত্যুতে শাবনূরকে কেনো জড়ানো হচ্ছে বুঝলাম না। শাবনূর ও সালমান দুজন ভালো কলিগ ছিল। চিত্রনায়ক ওমর সানীও সালমান শাহকে কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি বলেন, মানতেই পারি না সেদিনের ঘটনা। আজও সালমানের কথা মনে হলে আমি আর মৌসুমী মনের গভীরে নিরবে কাঁদি, চোখের পানি ফেলি আর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করে। তিনি বলেন, সালমানের মৃত্যু নিয়ে শাবনূরের ওপর একচেটিয়া দোষ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এটা ঠিক না। এটা আমি বিশ্বাস করি না। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা বলেছেন আজ থেকে তেইশ বছর আগে অভিমানী এক নক্ষত্রের বিদায় হয়েছে শোবিজ অঙ্গন থেকে। কেনো এত জলদি বিদায় সেটার ব্যাখা হয়তো সালমান শাহর কাছেই আছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর