× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাজধানীতে ভবনে আগুন শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার

রাজধানীর মগবাজারে একটি পাঁচতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিশুসহ ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল ভোর ৪টার দিকে দিলু রোডের ৪৫/এ নম্বর বাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে নিহতরা হলেন-   আফরিন জান্নাত জ্যোতি (১৭), একেএম রুশদী (৫) ও আব্দুল কাদের লিটন (৪৫)। এছাড়া দগ্ধ ও ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে আরও পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা হলেন, শহিদুল  ইসলাম রনি (৪০), তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৫), সুমাইয়া আক্তার (৩০), মাহাদি (৯) ও মাহমুদুল হাসান (৯ মাস)। চিকিৎসকরা জানান, আগুনে শহিদুলের শরীরের ৪৩ শতাংশ এবং তার স্ত্রী জান্নাতুলের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিস সুত্রে জানা গেছে, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন নেভানোর পর উদ্ধারকর্মীরা ওই ভবন থেকে এক শিশুসহ তিন জনের লাশ উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে একজন পুরুষের লাশ পাওয়া যায় ভবনের গ্যারেজে। একটি শিশুসহ দু’জনের লাশ ছিল তিন তলার সিঁড়িতে। ওই বাড়ির গ্যারেজে থাকা পাঁচটি গাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। ভবন থেকে ১৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছয়তলা বিশিষ্ট ওই আবাসিক ভবনের তিন তলা পর্যন্ত গার্মেন্টস ছিল। যেখানে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ছিল। আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। ওই ভবনের গ্যারেজ থেকে আগুনের সুত্রপাত বলে জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নিহত জ্যোতির চাচা মো. সুরুজ্জামান বলেন, জ্যোতির বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম এবং মায়ের নাম লাল বানু। জাহাঙ্গীর গণপূর্ত ভবনের প্রশাসনিক সেকশনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন। ওই দম্পতির মেয়ে জ্যোতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী। তিনি এইচএসসি পরিক্ষার্থী ছিলেন। জ্যোতির ভাই মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফ্‌টওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্র আশিক আপন। তারা ওই ভবনের ছাদের একটি রুমে থাকেন।

তিনি আরও জানান, আগুন লাগছে শুনে আতঙ্কিত হয়ে যান জ্যোতি। তাড়াহুড়া করে জ্যোতি সিঁড়ি দিয়ে নামেন। উপর থেকে বাবা, ভাই, গ্রিল দিয়ে বের হয়ে পাশের ছাদ দিয়ে নামেন। তারা দু’জনেই সামান্য আহত হন। জ্যোতির মা, উপর দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার পা ও কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জ্যোতির বাবার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ভবনের ছাদ থেকে পাশের ভবনে লাফিয়ে পড়ি। আমাদের আগেই মেয়েটি সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে যায়। তারপর আগুনে পুড়ে মারা গেছে আমার মেয়েটি।

মৃত লিটনের শ্যালক জহির আলম জানান, ওই ভবনের দোতলায় ‘ক্লাসিক ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটা বায়িং হাউজের অফিস সহকারি ছিলেন তার ভগ্নিপতি লিটন। নিচতলায় গ্যারেজের পাশে একটি কক্ষে তিনি থাকতেন। লিটনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর থানার পশ্চিম নন্দনপুরে। তার স্ত্রীর নাম মরিয়ম বেগম। ওই দম্পতির রনি ও সোনিয়া নামে দুই সন্তান রয়েছে। তারা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দগ্ধ জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাই শাহাদাত হোসেন বিপ্লব বলেন, শিশুটির শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে, তার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু আমার ভাগ্নেকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার বোন জান্নাতুল ও ভগ্নিপতি রনিও আগুনে দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমি আহত একজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। তিনি বলেছেন, আগুন লাগার পর রনিরা তিন তলা থেকে বের হওয়ার সময় রুশদী ওদের হাত থেকে ছিঁটকে পড়ে।

দগ্ধ রনির বাবা দৈনিক কালেরকণ্ঠের সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার একেএম শহিদুল্লাহ বলেন, তার ছেলে রনি পুলিশ প্লাজায় ভিআইভিপি এস্টেট ম্যানেজমেন্ট নামে একটি কোম্পানির ফাইন্যান্স ম্যানেজার। আর পুত্রবধূ জান্নাতুল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের অর্থ বিভাগে চাকরি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর থানার ইটনায়। ওই দম্পতির ছেলে রুশদীর খোঁজ মেলেনি।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ইস্কাটনের আগুনের ঘটনায় তিনটি লাশ পাই। এর মধ্যে দু’টি লাশ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। আরেকজন দগ্ধ না হলেও তার ইনহেলেশন বার্ন ছিল। সকলেই শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। পুড়ে যাওয়াদের মধ্যে এক শিশু এবং অপরজন মেয়ে। তারা দু’জনেই প্রথমে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান। পরে পুড়ে যায়। আমরা পোড়া দু’জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছি।

ওই বাড়ির কেয়ারটেকার লুৎফর রহমান জানান, নিচ তলায় গাড়ির গ্যারেজ থেকে আগুন লাগে। পাঁচটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। তিনজন মারা গেছে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে বলে ধারণা করছি। নিচতলায় আগুন লাগার পর আমি বাইরে বের হয়ে সবাইকে চিৎকার করে বের হতে বলেছি। মুহূর্তের মধ্যে আগুন নিচ থেকে ওপরে উঠে যায়।

হাতিরঝিল থানার এসআই খন্দকার সেলিম শাহরিয়ার বলেন, মৃত তিন জনের মধ্যে শিশুসহ দু’জন পুরোপুরি পুড়ে গেছে। যা দেখে সনাক্ত করার মতো না। তাই আমরা পোড়া দু’জনেরই ডিএনএ প্রোফাইলিং এর জন্য ফরেনসিক বিভাগকে নমুনা সংগ্রহ করতে বলেছি। এছাড়া একজন পুড়েনি। তিনি ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর