আগামী তিন মাসে ১২ লাখ ছাড়াতে পারে ভারতে সংক্রমণ, দাবি এক সমীক্ষার। খবর ভারতের এনডিটিভির। গতকাল দি হিন্দুর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের কেবিনেট সেক্রেটারি রাজিব গাউবা বলেছেন, বিমান বন্দর থেকে যারা বেরিয়ে গেছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা এবং বিদেশ প্রত্যাগত যাদের মনিটর করা হচ্ছে, এই দুইয়ের মধ্যে ‘ব্যবধান’ মিলেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সকল রাজ্যের মুখ্য সচিবদের কাছে এক চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। কেবিনেট সচিব এতে বলেছেন, সকল রাজ্য যেন গত দুমাসে বিদেশ ফেরতদের অবিলম্বে পর্যবেক্ষণের অধীনে আনে। কারণ তাদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন।
ভারতের ৭শর বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ১৮ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে বলেছেন, দক্ষ ও আধা দক্ষ বহু বাঙ্গালি শ্রমিক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজের জন্য যায়, লক ডাউনে তারা আটকা পড়েছে। তাদের পরিবার পরিজন অবিশ্রান্ত ফোন করছে।
এনডিটিভি জানায়, সম্প্রতি প্রকাশিত সমীক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় আর সিডিডিইপি বলেছে, ভারতে ২১ দিনের লকডাউন অকার্যকর হতে পারে। কারণ আগামী দু’মাসে ব্যাপক হারে বাড়বে সংক্রমণ মাত্রা । এপ্রিল, মে আর জুন মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। ওই দুই সংস্থার আরও দাবি, “জনঘনত্বই হবে এই সংক্রমণের মাত্রার ব্যাপক বৃদ্ধির কারণ। অপর্যাপ্ত শারীরিক দূরত্বের জেরে ছড়িয়ে পড়বে সংক্রমণ।”এর ফলে মোট সংখ্যা (উপসর্গ নেই, চিকিৎসাধীন আর উপসর্গ মিলিয়ে) ২৫ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর বলা হয়, জনঘনত্বের বিচারে সেভাবে হয়নি স্ক্রিনিং, সঙ্গে জন-দূরত্ব কম, এই দুয়ের কারণে করোনা বিপর্যয় আরও গ্রাস করতে পারে ভারতকে। ইতিমধ্যেই মার্কিন এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন তুলেছে, “হাসপাতালের বাইরে সংক্রামিত কত?” তথ্য নেই ভারতের কাছে। জনঘনত্বের বিচারে এখনও যে পরিমাণ মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে বলে দাবি, তা মোট জনসংখ্যার বিচারে নগণ্য।
উল্লেখ্য, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রফেসর নিল ফার্গুসনের নেতৃত্বাধীন সমীক্ষা যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে ব্রিটেনে আড়াই লাখ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দশ লাখের বেশি লোকের মারা যাওয়ার বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এরপরে আরো এপিডেমিওলজিস্টরা ওই একই মডেলের ভিত্তিতে এশিয়ার কোনো কোনো দেশকে সমীক্ষার আওতায় আনেন। কোনো কোনো দেশ সম্পর্কে বলা হয়, সেখানে কোনো পদক্ষেপ না নিলে ৫ লাখের বেশি লোক মারা যেতে পারে। সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষের মধ্য লক্ষণ দেখা যেতে পারে। অবশ্য বিশ্বের সব দেশই যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে ইতিমধ্যে। তবে
উল্লেখ্য ভারত সম্পর্কে জন হপকিন্সের ওই সমীক্ষা রিপোর্টে আরও বলা হয়, "স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও মৃত্যুর হার বাড়তে পারে। মহামারীর সঙ্গে লড়তে স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সংক্রমণ-প্রতিরোধী উর্দি (মাস্ক-গাউন) সরকারের বরাদ্দ করা উচিত। নয়তো তাঁদের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন তাঁরাও।"
এনডিটিভি জানায়, ওই সমীক্ষায় দাবি, "একটা মহামারী বিলুপ্ত হলেও তার কিছু প্রকোপ রেখে যায়। সেই প্রকোপের বলি হতে পারেন সাধারণ নাগরিক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীরা।" জানা গিয়েছে, আগামী ৩ মাসের পূর্বাভাস তুলে ধরা হলেও মার্চেই হু-হু করে বেড়েছে সংক্রমণ মাত্রা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গোটা দেশে সংক্রমিত ৬৪৯। শুক্রবার পর্যন্ত মৃত ১৬। ফলে যত কম স্ক্রিনিং, তত বেশি সংক্রমণের হার, সতর্ক করেছে সেই সমীক্ষা।
সেই সমীক্ষায় পরামর্শ, "যত্রতত্র টেস্টিং আর শারীরিক দূরত্ব বজায়, এই দু'য়ের মাধ্যমে কিছুটা কমানো যেতে পারে সংক্রমণের হার। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করে আতঙ্কের পরিবেশ থেকে মানুষকে বের করে আনা, এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।" এক পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার বৃদ্ধিতে কিছুটা রেহাই মিলবে। সেই দাবির স্বপক্ষে ওই সমীক্ষা যুক্তি দিয়েছে, কিছুটা রেহাই মিলবে বটে। কিন্তু সুরাহা মিলবে না। চীনে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে সংক্রমণ হার কমেছিল। কিন্তু ভারতের ভৌগলিক অবস্থান মেনে সেই তত্ব কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সেই সমীক্ষা।