করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদেরকে কবরস্থ করা নিরাপদ। সব ধরণের জীবানুসহ সবকিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে মাটির। কবরস্থ করার পর মাটির নিচ থেকে ক্ষতিকর কোনো কিছু বাহির হওয়ার সুযোগ নেই।এমন কথা বলেন কীটতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর নজরুল ইসলাম মানবজিমনকে বলেন, আইইডিসিআরের সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা মত করোনা আক্রান্ত রোগীদের মৃতদেহ মুসলিমদেরকে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কবরস্থ করতে কোনো বাধা নেই।একই কথা বলেন সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বাবুল মিয়া। তিনি বলেন,আইইডিসিআর করোনা আক্রান্তদের লাশ দাফন করার যে সিদ্ধাই দিয়েছে, তা খুবই সায়েন্টিফিক। এতে ধর্মীয় ও সায়েন্টিফিক দুটো বিষয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। অতএব লাশ দাফন করার ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর বিরোধিতা করার কোন কারণ নেই।
প্রফেসর ড.কবিরুল বাশার মানবজিমনকে বলেন, এমন কি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির জানাজা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে লাশটি ৬ ফুট দূরত্বে রেখে নামাজ আদায় করতে হবে। এতে অন্য কেউ আক্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পিপিই পরিধান করে যথাযথ নিয়মের মাধ্যমে গোসল দিতে পারবেন।
সম্প্রতি প্রচন্ড জ্বর, ব্যথা মরণঘাতি করোনার উপসর্গ নিয়ে বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু বরন করেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ গ্রামের পঞ্চাশ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ী। তার লাশ দাফন করতে বাধা দেয় এলাকাবাসী। পরে প্রচন্ড বাধা-বিপত্তি আর নানা নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে পুলিশের উদ্যোগেই লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এলাকাবাসীর লাশ দাফনে বাধা দেয়ার মূল কারণ ছিল তাদের ধারণা করোণা আক্রান্ত এই লাশ এই গ্রামে দাফন করা হলে, তা এলাকাবাসীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ড. কবিরুল বাশারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছিল লাশটি দাফন হলে তাদের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই লাশ দাফন করার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ মাটির সব ধরনের ক্ষতিকর বস্তু গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আকিজ গ্রুপ একটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করলে এ কাজে বাধা দেয় স্থানীয় এলাকাবাসী। তাদের দাবি, এখানে হাসপাতাল হলে, করোনা রোগীর চিকিৎসা হবে। আর এতে করে এলাকাবাসীর মধ্যে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন তাদেরকে এ মরণব্যাধি দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এ ব্যাপারে ডক্টর কবিরুল বাশার বলেন, প্রতিটি হাসপাতলেই সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে। যাতে করে বাহিরের পরিবেশ নষ্ট না হয়। যথাযথ সুরক্ষার মাধ্যমে প্রদান করে থাকে চিকিৎসা। চিকিৎসকরা পিপিই পরিধান করে এ রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন। অর্থাৎ বাইরে যাতে এই রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য হাসপাতালে অবশ্যই সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া নভেল করানো ভাইরাস ছয় ফুটের বেশি দূরত্বের কাউকে সংক্রমিত করতে পারেনা। এমনকি বাতাসের মাধ্যমে বায়ুতে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে না। মশা মাছির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে না। এ ব্যাপারে প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বাতাসের মাধ্যমে বায়ুতে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে না।