× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা ভাইরাস পরবর্তী বিশ্ব কেমন হবে? (পর্ব-৩)

বিশ্বজমিন

সাইমন মাইর
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ২, ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজুড়ে নির্মম তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯)। কেড়ে নিয়েছে অজস্র প্রাণ। আক্রান্ত করেছে লাখো মানুষকে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে জারি হয়েছে লকডাউন। থেমে গেছে জীবনযাত্রা। বহু মানুষ কাজ হারানোর ভয়ে আছে। এমন অবস্থায়, এই মহামারির পরবর্তী অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ ও হতে পারে তা নিয়ে দ্য কনভার্সেশনে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন লিখেছেন গবেষক সাইমন মাইর। তিনি ইউনিভার্সিটি অব সারে-এর সেন্টার ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব সাসটেইনেবল প্রসপারেটির পরিবেশগত অর্থনীতির রিসার্চ ফেলো।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি অংশবিশেষের অনুবাদ প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব হিসেবে মানবজমিনের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ পর্ব নিচে প্রকাশ করা হচ্ছে।

চারটি ভবিষ্যৎ
আমাদের ভবিষ্যতে যাত্রা সহজ করতে, আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণার একটি কৌশল ব্যবহার করবো। এর আওতায়, আপনি ভবিষ্যতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে এমন দুটি নিয়ামক নিয়ে চিন্তা করবেন আর কল্পনা করবেন, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে এই নিয়ামকগুলোর সংমিশ্রণে কী হবে।

আমি যে নিয়ামকগুলো নিয়ে ভাবতে চাই সেগুলো হচ্ছে, মূল্য ও কেন্দ্রীকরণ। আমাদের অর্থনীতির প্রধান নির্দেশিকাকেই এখানে মূল্য ধরা হচ্ছে। আমরা কি আমাদের সম্পদ বিনিময় ও অর্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে ব্যবহার করবো, নাকি জীবনের মান বাড়াতে? কেন্দ্রীকরণ বলতে বিভিন্ন বিষয় সাজানো বোঝায়- হয়তো অনেকগুলো ছোটো ছোটো ইউনিট দিয়ে বা একটি বৃহৎ কমান্ডিং ফোর্স দিয়ে। আমরা একটি গ্রিডে নিয়ামকগুলো সাজাতে পারি। পরবর্তীতে সেগুলোর উপর বিভিন্ন দৃশ্যপট চালিয়ে দেখা যেতে পারে। তো, আমরা চারটি চরম মাত্রার সংমিশ্রণের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করলে কী হতে পারে তা দেখবো: এক, রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। দুই, বর্বরতা। তিন, রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র। চার, পারস্পরিক সহায়তা।

রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। এর সহজ কিছু উদাহরণ হচ্ছে: বৃটেন, স্পেন ও ডেনমার্ক।
রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী সমাজগুলো অর্থনীতির প্রধান নির্দেশিকা হিসেবে বিনিময় মূল্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু তারা এটিও স্বীকার কররে নিচ্ছে যে, বাজারে সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্র থেকে সাহায্য প্রয়োজন। যেহেতু অনেক কর্মী অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারছে না ও নিজের জীবন নিয়ে আশঙ্কায় আছে, রাষ্ট্র তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি একইসঙ্গে ব্যাপক কিনিসীয় সহায়তাও বাড়াচ্ছে। ব্যবসায় নগদ অর্থ দিচ্ছে।

এখানে প্রত্যাশা হচ্ছে যে, এ অবস্থা স্বল্প সময় স্থায়ী হবে। এ বিবেচনায় নেয়া পদক্ষেপগুলোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যথাসম্ভব ব্যবসা চালু রাখা। যেমন, বৃটেনে এখনো বাজারে খাদ্য বিতরণ চলছে। কর্মীদের সরাসরি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এটি এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে স্বাভাবিক শ্রমবাজারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার হার কম রাখা যায়। উদাহরণস্বরুপ, বৃটেনে কর্মীদের অর্থ পেতে আবেদন করতে হবে ও এটি বিতরণ করবে নিয়োগদাতারা। এখানে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হবে তা নির্ধারণ করা হয় বাজারে কোনো কর্মীর বিনিময় মূল্য বিবেচনায়। বাজারে তাদের প্রয়োজনের বিবেচনায় নয়।

এটা কী কোনো সফল দৃশ্যপট? হয়তো, কিন্তু করোনা ভাইরাস স্বল্প-সময় স্থায়ী হলেই এটা কার্যকর হবে। যদি লকডাউন দীর্ঘায়িত হয় তাহলে এর কার্যক্ষমতা কমে যাবে।

বর্বরতা
এই ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সবচেয়ে ক্ষীণ। বর্বরতার ভবিষ্যতে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিনিময় মূল্যের উপর নির্ভরতা বজায় থাকবে। একইসঙ্গে বাজার থেকে বাদ পড়ে যাওয়াদের সহায়তাও দেয়া হবে না। এটা এমন এক দৃশ্য, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি। এই দৃশ্যে, ব্যবসা ভেঙে পড়বে। কর্মীরা না খেয়া থাকবে। অচল হয়ে পড়বে তাদের রক্ষার্থে চলা সকল কার্যক্রম। হাসপাতালগুলোকে সমর্থন দেয়া বন্ধ দেয়া যাবে। মানুষ মরবে। এটা হচ্ছে, অস্থিতিশীলতার চরম পর্যায়।

এমনটা কি হতে পারে? ভুলে বা ইচ্ছাকৃতভাবেই হতে পারে। ভুলটা হচ্ছে, সরকার মহামারীর সবচেয়ে ভয়াবহ মুহুর্তে যথাসময়ে যথাভাবে এগিয়ে আসতে পারবে না। এতে ব্যবসা ও গৃহস্থালিগুলোয় সমর্থন দেয়া হবে। তবে যদি তা পর্যাপ্ত না হয়, তাহলে চরম অসুস্থতার মধ্যে বাজার ধসে পড়বে। বাড়বে বিশৃঙ্খলতা। হাসপাতালগুলোয় পাঠানো সহায়তা পর্যাপ্ত নাও হতে পারে। এতে মারা যাবে বহু মানুষ।
একইভাবে মহামারী যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে, সরকার তখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। জার্মানিতে এই হুমকি স্পষ্ট দেখা গেছে। এর ফল হবে বিপর্যয়।

রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র
আমরা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যেসব ভবিষ্যৎ দেখতে পারি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র। এতে যে পরিবর্তন আসবে তা অর্থনীতির কেন্দ্রে ভিন্ন ধরনের মূল্য স্থাপন করবে। বৃটেন, স্পেন ও ডেনমার্কে বিদ্যমান পদক্ষেপ আরো বাড়ানো হলে এমন ভবিষ্যৎ দেখার সম্ভাবনা আছে।
এখানে মূল বিষয়টি হল হাসপাতালগুলির জাতীয়করণ এবং শ্রমিকদের অর্থ প্রদানের মতো পদক্ষেপগুলো বাজার রক্ষার হাতিয়ার হিসাবে দেখা হবে না, বরং জীবন রক্ষার উপায় হিসাবে দেখা হবে। এমন পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্র অর্থনীতির যে অংশগুলো জীবন চালানোর জন্য আবশ্যক, সেগুলো রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। যেমন, খাদ্য, শক্তি এবং আশ্রয়ের উত্পাদন, যাতে জীবনের মৌলিক বিষয়গুলো আর বাজারের উপর নির্ভরশীল না থাকে। রাষ্ট্র হাসপাতালগুলি জাতীয়করণ করবে এবং নিখরচায় আবাসনের ব্যবস্থা করবে। এই ব্যবস্থা মৌলিক ও এমন সকল ভোগ্যপণ্য যা সীমিত কর্মশক্তির মাধ্যমে উৎপাদনে সক্ষম- তা সমস্ত নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেয়ার একটি উপায় সরবরাহ করে।

নাগরিকরা আর তাদের এবং জীবনের প্রাথমিক উপাদানগুলির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়োগকারীদের উপর নির্ভর করবে না। প্রত্যেককে সরাসরি অর্থ প্রদান করা হবে এবং তারা যে বিনিময় মূল্য সৃষ্টি করে এ অর্থ তার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে না। বরং, সকলে সমান অর্থ পাবে (এই ভিত্তিতে যে, আমরা বেঁচে আছি বলেই, আমাদের বেঁচে থাকার যোগ্যতা আছে), বা সেগুলি কাজের উপযোগিতার উপর ভিত্তি করবে। এই ব্যবস্থায় সুপারমার্কেটের কর্মীরা, ডেলিভারি ড্রাইভার, গুদাম স্ট্যাকার, নার্স, শিক্ষক এবং চিকিৎসকরা নতুন সিইও হয়ে উঠবেন।

এটা সম্ভব যে, রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের নেয়া পদক্ষেপ এবং দীর্ঘায়িত মহামারীর প্রভাব হিসাবে রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের উত্থান ঘটবে। যদি গভীর মন্দা দেখা দেয় এবং কিনিসীয় নীতিমালার আওতায় চাহিদা পূরণ করা যাবে না এমনভাবে সরবরাহ ব্যাহত হয় (মুদ্রা ছাপানো, ঋণ নেয়া সহজতর করে তোলা), তাহলে রাষ্ট্র উত্পাদন খাত নিজের আওতায় নিয়ে নিতে পারে।

এই পদ্ধতির ঝুঁকি রয়েছে - আমাদের কর্তৃত্ববাদবাদ এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকতে হবে। তবে ভালভাবে সম্পন্ন করা গেলে, কভিড-১৯ এর চূড়ান্ত প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে এটি আমাদের সেরা আশা হতে পারে। অর্থনীতি ও সমাজের মূল কাজগুলি রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র সম্পদ পরিচালনায় করতে সক্ষম।

পারস্পরিক সহায়তা
পারস্পরিক সহায়তা দ্বিতীয় ভবিষ্যৎ, যেখানে আমরা জীবন রক্ষাকে আমাদের অর্থনীতির দিকনির্দেশক নীতি হিসাবে গ্রহণ করবো। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্র কোনো নেতৃত্বদানকারী চূড়ান্ত ভূমিকা গ্রহণ করবে না। বরং ব্যক্তি ও ছোট দলউলো তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন এবং যত্নের ব্যবস্থা করতে শুরু করবে।
এই ভবিষ্যতের ঝুঁকিগুলো হলো ছোট দলগুলো কার্যকরভাবে স্বাস্থ্যসেবা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলি দ্রুত বৃদ্ধিতে অক্ষম। তবে পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা ও আইসোলেশন বিধিনিষেধ নিশ্চিত করে অধিকতর কার্যকরভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। এই ভবিষ্যতের সর্বাধিক উচ্চাভিলাষী রূপটি হচ্ছে, নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামোর উত্থান। সম্প্রদায়গুলো তুলনামূলক দ্রুততার সাথে যথেষ্ট পরিমাণে সংস্থান জোগাড় করতে সক্ষম এমন আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে যেতে পারে। আক্রান্তদের চিকিৎসা ও সংক্রমণ বন্ধে তারা একসঙ্গে মিলে আঞ্চলিক পদক্ষেপ পরিকল্পনা করতে পারে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর