× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কাঁটাতারের এপার ওপার উল্টো চিত্র

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
৩ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার

মাঝখানে কাঁটাতার। দুপাশে দুটি দেশ। বাংলাদশ আর ভারত। এ দুটি ছবি দুই দেশের। একটি বাংলাদেশের ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরের। অপরটি ভারতের আগরতলা শহরের। বৃহস্পতিবার তোলা এ দুটি ছবিই বলে দেয় দুদেশের চিত্র। পাশের বাড়ির মানুষের চরিত্রও ফুটে উঠেছে এ ছবিতে।
করোনা থাবা মেলার পর ভারতজুড়ে চলছে লকডাউন। বাংলাদেশে চলছে কোয়ারেন্টিন। ছুটি। যান চলাচল বন্ধ। লকডাউন বলা না হলেও এরচেয়ে কমও নয়। সরকার তরফ থেকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকুন। কোয়ারেন্টিনে থাকুন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর। তারপরও বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে রাখা ভীষন কস্ট হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সাংবাদিক উজ্জল চক্রবর্তী তার ফেসবুক ওয়ালে ছবি দুটি পোস্ট করেন। লিখেন- সুনশান নিরবতার ছবিটি পাশের বাড়ি আগরতলা শহরের। ছবিটি সেখানকার ব্যাংক কর্মকর্তা মনোজদা পাঠিয়েছেন। আর জনবহুল আর গিঞ্জি রিকশার ছবিটি আমার শহর ব্রাহ্মনবাড়িয়ার। আমরা কোথায় আছি? ছবি দুটি বৃহস্পতিবারের। আমরা কি কোয়ারেন্টিন মানছি? করোনাকে পাত্তা দিচ্ছি? পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করছেন। মাঠে কাজ করছেন। সবার আকুল আবেদন- ঘরে থাকুন। মিডিয়া অনবরত প্রচার চালাচ্ছে। সরকার বার বার নির্দেশনা দিচ্ছে। আমরা কিছুই মানছিনা। একবারও ভাবছিনা, সবদিক দিয়ে উন্নত, অত্যাধুনিক দেশগুলো করোনার কাছে হার মেনেছে। রাষ্ট্রপ্রধানরা অসহায়। আর আমরা ছুটি ভোগ করছি আনন্দে। কি ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে জানিনা। আল্লাহ সহায় না হলে এ থেকে পরিত্রানের কোন উপায় নেই। গত রাতে সৌদি আরব থেকে ফোন করেন বন্ধু ছগির হোসেন। জানান, কঠিন পরিস্থিতি সেখানে। কারফিউ জারি করা হয়েছে মক্কা, মদিনায়। নিয়মের বাইরে যাওয়ার সাহস কারো নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসব কি হচ্ছে? দলে দলে লোকজন রাস্তায়। ৫/৭ দিন না যেতেই ত্রানের জন্য কাড়াকাড়ি। যেখানে ঘরে ঘরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যসামগ্রি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, সেখানে এমনটা কেন হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতেই হবে দেশের স্বার্থে। মানুষের স্বার্থে। অসহায়, অস্বচ্ছল, দিনমজুরদের জন্য প্রতিটি গ্রামে গ্রামে যুবকরা কাজ করছে। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ছুটে যাচ্ছেন অসহায়দের কাছে। হাতে তুলে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। দেশের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ না খেয়ে আছে। ঘরে খাবার নেই- এমন ফোন পেলেই ছুটে যাচ্ছেন খাবার নিয়ে। পুলিশ প্রশাসনও খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। গতকাল সাংবাদিক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- এদের এখনই থামানো জরুরি। করোনার হাত থেকে বাঁচতে সোস্যাল ডিস্টেন্স পালন করার জন্য সরকার যেখানে দেশে সেনাবাহিনী নামিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীকে বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছেন, সেখানে খোদ রাজধানীতে ত্রানপ্রলয় শুরু করেছে কিছু বোধহীন মানুষ। লাঠিপেটা করে তাদের থামানো জরুরি। নইলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য। এরা ভেবেছে এ যেন বন্যাকালের ত্রানবিতরণ। আইন জারি করে এখনই জানিয়ে দেয়া উচিৎ, এ মুহুর্ত থেকে প্রশাসনকে না জানিয়ে, সামাজিক দূরত্বের বিধান না মেনে কেউ কোন ধরনের ত্রানতৎপরতা চালাতে পারবেনা। কেউ যদি নিরবে একজন কিংবা দুজনে মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউকে সাহায্য করতে চায় সেটা ভিন্ন কথা। তিনি প্রশ্ন তুলেন, মাত্র ৫/৭ দিন কাজ বন্ধ থাকাতেই মানুষেরতো টাকা, খাবারের জন্য এমন পাগল হয়ে উঠার কথা না। কিন্তু কেন উঠছে? ত্রান দিয়ে কি বিশ্ব মহামারীকে রুখে দেয়া যাবে? নাকি এ ত্রান বিতরনের মাধ্যমে আমরা করোনাকে বহন করে বাড়ি বাড়ি ফিরছি? অবশ্য গতকালই পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে ত্রান না দিতে। শুধু কি তাই? না আরো আছে। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে যুবকরা মটরসাইকেল নিয়ে নেমে পড়ছে রাস্তায়। বেপরোয়া গতিতে সাঁ সাঁ করে ছুটে বেড়াচ্ছে। এমন করতে গিয়ে ঘটছে দূর্ঘটনা। তরতাজা প্রাণ নিভে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বরিশালের উজিরপুরে এমন দূর্ঘটনায় প্রাণ গেছে দুই কলেজ ছাত্রের। ছুটিতে তারা কোয়ারেন্টিনে না থেকে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন বেড়াতে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হওয়ায় রাজধানীর চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোর বেশিরভাগ ছিল ঢিলেঢালা। পাশের বাড়ি ভারতের আগরতলার চিত্র আর বাংলাদেশের ব্রাহ্মনবাড়িয়ার চিত্র এটা পরিস্কার। বিভিন্ন জেলার সচেতন বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন জনসমাগম কমাতে এগিয়ে আসার। একই সাথে সংশ্লিষ্টরা দুঃস্থ, অসহায়দের আশ্বস্থ করতে হবে- ঘরে থাকলেই খাবার পাবেন। অন্যথায় না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর