× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাবারের জন্য ওদের অপেক্ষা

অনলাইন

মোহাম্মদ ওমর ফারুক
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৭, ২০২০, মঙ্গলবার, ৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

আলী হোসেন।রাজধানীর রাস্তায় দশ বছর ধরে চলে তার রিকশা। চার সন্তান আর  স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। রায়ের বাজার বস্তিতে থাকেন ছোট্ট দু’টি রুম নিয়ে। নতুন মাসের শুরু। গুনতে হবে ভাড়ার টাকা। পকেটে আছে হাজার খানেক কিন্তু প্রয়োজন আরো ছয় হাজার টাকা। তবে এখন আর আগের মতো নেই আয় রোজগার । ঘরেও নেই চাল ঢাল।কিভাবে মেলাবেন গত মাসের হিসেব? আলী হোসেন বলেন, কখনো কারো কাছে হাত পাতিনি।
বড় লোকেরা খাবার দিয়ে যায়, নিতে ইচ্ছে করে না। এখনো কারো কাছ থেকে কিছু নেইনি।কিন্তু হাতে টাকাও নেই। ঘরে কিছু চাল ঢাল ছিলো গত এক সপ্তাহে সব শেষ। ছয় জনের সংসার। একা আয় করি আমি। এখন কি করবো মাথায় ধরছে না।
 গত দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত লকাউন পুরো রাজধানী। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারা দেশের মানুষ যখন বাসায় অবস্থান করছে,তখন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পড়েছে খাবার সংকটে। আয় রোজগার নেই। নেই মজুদ করা খাবারও।নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে। ফলে তাদের অনেকেই দেখা যায় খাদ্যসামগ্রীর জন্য নগরীর মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে। এসব খেটে খাওয়ার মানুষের সবার চোখেমুখে মলিনতা। মাঝে-মধ্যে বিত্তবানদের কেউ কেউ কিছু খাদ্যসামগ্রী তাদের মাঝে বিতরণ করছেন। এসবের উপরেই নির্ভর করছে তাদের খাবারের যোগান।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে প্রায় অর্ধশাধিক এমন নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায, তাদের বেশীর ভাগেরই মজুদ করা খাবার শেষ হয়েছে আরো দুই একদিন আগেই। হাতেই নেই টাকা।বিত্তশালীদের ত্রাণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের । এমনই একজন সালেহা বেগম। অর্ধেক দিন ধরে বসে আছেন আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালের সামনে। সারাদিনে পেয়েছেন একটি মাত্র খিচুরির প্যাকেট। কিন্তু ঘরে আছে প্রতিবন্ধী স্বামী ও দুই সন্তান। ভিক্ষা করেই চলে তার সংসার। কিন্তু রাজধানীতে রাস্তায় মানুষ না থাকায় ভিক্ষাও মিলছে না কপালে। তিনি বলেন , সারাদিনে ৫০ টাকা আর এই খিচুরির প্যাকেটটা পেয়েছি। খাবার না পেলে বাসায় যেতে পারছি না। সবার খাবার যোগার করে বাসায় যাবো। খালি বাসায় গেলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।’
কথা হয় গ্রীণ রোডে অন্তরা আক্তারের সাঙ্গে। তিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন। স্বামী চালান রিকশা। দুই জনের অর্থেই চলে সংসার। অন্তরা ৭৫ হাজার টাকা লোন নিয়েছেন। যার সাপ্তাহিক কিস্তি ১৫’শ টাকা । স্বামীর আয় বলতেই একেবারেই নেই এখন। ঘরের খাবার প্রায় শেষের পথে। আজই তিনি এসেছেন ত্রাণের জন্য। তিনি বলেন,ঘরের খাবার দাবার নেই। দুই জনের আয় রোজাগারও নেই। ছেলে মেয়ে নিয়ে তো ভাত খেতে হবে। তাই আজকে আসলাম। এখনো কিছু পাইনি। এদিকে আমাদের কোনো ইনকাম নেই। কিস্তিগুলো কিভাবে দিবো? সরকার বলে না বের হওয়ার জন্য। না বেরুলে খাওয়াবে কে?
এদিকে নগরীর মোড়গুলোর পাশাপাশি ফার্মেসীগুলোর সামনে ভিক্ষুদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার লাজ ফার্মার সামনে গতকাল রাতে অর্ধশতাধিক ভিক্ষুক চোখে পড়ে। তাদের মধ্যে লায়জু আক্তার নামে একজন বলেন, সব দোকান পাট বন্ধ।  ওষধের দোকানেই মানুষ আসে। তাই দাড়াইছি। ঘরে খাবার নাই, রাস্তায় মানুষ নাই। কে করবে আমাদের সাহায্য?
গতকাল সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাদ্যসামগ্রীর আশায় প্রতিটি অলি-গলিতে অপেক্ষা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। যাদের বেশীরভাগই দিনে এনে খাওয়ার  অবস্থা। কোনো প্রাইভেটকার দেখলে দৌড়ে গিয়ে হাত পাতেন তারা। তারা বলছেন,কোথাও কোনো কর্ম নেই। তাই বর্তমান সময়ে চরম অনটনে দিনাতিপাত করছেন তারা।ঘরে মজুদকৃত খাদ্যও শেষ হয়েছে দুই একদিন আগে। তাই এখন বাধ্য হয়েই ত্রাণের আশায় বসে থাকতে হচ্ছে  তাদের।  তবে এসব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। লোকলজ্জায় তাদের অনেকেই ত্রাণের জন্য সড়কে যাচ্ছেন না। কথা হয় এমন একজনের সঙ্গে।  আনিছুর রহমান। পান্থ পথে একটি চায়ের দোকান চালান তিনি। সেখান থেকে প্রতিদিন ঘরে আয় হতো হাজের খানেক টাকা। সেই টাকা দিয়ে চলতো সংসার। এখন হাতে কোনো টাকা নেই তার।তিনি বলেন, ঘর ভাড়া দিতে পারিনি এখনো। পকেটে এক টাকাও নেই। বাজার খরচ করার টাকা নেই। আমরা তো আর ত্রাণের জন্য দাড়াতে পারি না। তাই গ্রামের এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছি। কালকেই টাকাটা পাঠাবে । বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে বাজার খরচ করবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর