× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রবাসীরা কেমন আছেন (৩) /করোনা, নিদারুণ কষ্টে স্পেনের অবৈধ বাংলাদেশিরা, অন্যরাও ভাল নেই

অনলাইন

মিজানুর রহমান
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৮, ২০২০, বুধবার, ১২:০৭ অপরাহ্ন

ইউরোপের দেশ স্পেনের করোনা পরিস্থিতি একদিন উন্নতি তো পরের দিন অবণতি। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, মন্ত্রীসভার একাধিক সদস্যসহ আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছুঁই ছুই। স্থানীয়া বলছেন, পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে এখন মানুষের পাশাপাশি রোবট যুক্ত করা হয়েছে টেস্টের কাজে। ৪ রোবট প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের করোনা টেস্ট করছে। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। একটি শহর ছাড়া গোটা স্পেন আক্রান্ত। বড় বড় সব শহরে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক-নার্স তো রাতারাতি তৈরি সম্ভব নয়!  তবুও চেষ্টা চলছে।
গেল সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিনগুলোর অবস্থা তুলনামূলক উন্নতির দিকে ছিল, কিন্তু গতকাল আগের চেয়ে আরও অবনতি ঘটেছে। অবস্থা এতটাই বেসামাল অবস্থা যে কাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে সেই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গোটা স্পেনজুড়েই এক চিত্র। কিন্তু সে তো রোগ বা চিকিৎসার প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্কট ভিন্ন। আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা এখনও স্পেনের তুলনায় কম আছে। সঙ্কটের মূলে করোনার কারণে কর্মহীন বাংলাদেশি বিশেষত অবৈধ অভিবাসীদের অর্থকষ্ট। ১৫ ই ফেব্রুয়ারি থেকে স্পেনে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। শুরুর দিকে অবশ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ততটা পাত্তা দেয়া হয়নি। ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়। যার প্রথম আঁছড় লাগে অস্থায়ী চাকুরীজীবীদের গায়ে। কর্মী ছাঁটাই, চাকরিচ্যুতি। সবার আগে এর শিকার হয় অবৈধ অভিবাসীরা। কেবল মাদ্রিদেই ৫ হাজার বাংলাদেশির বাস। এর মধ্যে প্রায় ১৫শ থেকে দু'হাজার অবৈধ। পুরো স্পেনে এ সংখ্যা হাজার পাঁচেক হবে। তারা প্রায় এক মাস ধরে বেকার। কম বেতনে অস্থায়ী চাকরির কারণে তাদের কারোরই তেমন সঞ্চয় ছিল না। তাদের অর্থ কষ্টের বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং মাদ্রিদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের। ততক্ষণাত ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু হয় সহায়তা দেয়া। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভালিয়ান্তে মাদ্রিদ এগিয়ে আসে। বিষয়টি চটজলদি ঢাকার নজরে আনে দূতাবাস। বাংলাদেশ সরকার স্পেনের অবৈধ বাংলাদেশিদের দৈনিক দু' বেলা খাবারের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় দূতাবাসকে ১০ লাখ টাকার প্রাথমিক তহবিল দেয়। কিন্ত এই তহবিলে কি হবে?

মাদ্রিদের সানক্রিস্টোবাল এলাকায় ১৮ বছর ধরে বসবাসকারী সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফরিদপুর বড়বাড়ির বাসিন্দা সকিউল আলম মিলাদ মানবজমিনকে বলছিলেন- স্পেনের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার যে ব্যয় তার তুলনায় ৫ হাজার বাংলাদেশির জন্য ১০ লাখ টাকার ফান্ড খুবই সামান্য, টোকেন। দূতাবাস কাকে রেখে কাকে দেবে? তারপরও দেশ-দুনিয়ায় এত সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে এসেছে এটাই বা কম কী। তিনি এজন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের ধন্যবাদ জানান। সাইফুল আমিন কিরণ নামের  মাদ্রিদে থাকা এক বাংলাদেশি বিবিসিকে বলছিলেন- মাদ্রিদে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি আছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বৈধ নয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। তারা এখন ভীষণ কষ্টে আছেন। অবৈধ বলে রাস্তায় বেরুতে পারেন না, পুলিশ ধরে। খাওয়া দাওয়াসহ সব কিছুতেই সমস্যায় আছেন তারা। কিছু বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিরণ বলেন, আমি গত ১১ বছর ধরে মাদ্রিদে থাকি। স্ত্রী এবং দুই কন্যা নিয়ে আমাদের সংসার। আমি একটি সুপারস্টোরে কাজ করি। করোনার কারণে গত ১৩ই মার্চ থেকে এখানে পুরো লকডাউন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনায় স্পেনে প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। মাদ্রিদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রথম যখন চীনে এবং তারপর ইতালিতে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করলো, তখন এখানকার মানুষ খুব বেশি পাত্তা দেয়নি। কিন্তু এখন এই বিপদ এমন ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে যে সবার মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, মাদ্রিদে এখন বসন্তকাল। স্বাভাবিক সময়ে এখানে বছরের এই সময়ে রাত ১২ টার আগে কেউ ঘরে ফেরে না। স্পেন প্রবাসী ফেঞ্চুগঞ্জের ফাহাদ আলম বলছিলেন- তিনি ব্যবসা করেন। এখন তা বন্ধ। ঘরেই তার সময় কাটাতে হচ্ছে। আগামী ২৮ শে এপ্রিল পর্যন্ত মানুষজনকে ঘরে থাকতে  সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে জানান তিনি। বের হলেই ১০০ থেকে হাজার ইউরো মুলতা বা জরিমানা গুনতে হবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, কিন্তু পর্যটন ও খেলাধুলার শহর স্পেনের রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। জনমানব শূণ্য। মেট্রো চলছে কিন্তু না চলার মতই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা হয়েছে বহু আগেই। বর্তমান নির্দেশনায় একান্ত জীবন রক্ষার প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া বারণ। উল্লেখ্য, স্পেনের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এখনও তা দুই সংখ্যার ঘরে আছে। সরকারী পরিসংখ্যান নেই, তবে কমিউনিটি সূত্রের দাবি সেটি ৭০-৮০ হবে। এরমধ্যে  দু'জন মারা গেছেন। স্পেনে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মারা গেছেন মোচ ৭৪৩ জন। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৮ জনে। পুরো বিশ্বের মধ্যে করোনায় ইতালির পর এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু স্পেনে।

কিন্তু স্পেনের আজকের এই অবস্থা কেন? কে এর জন্য দায়ী? নেটিজেনদের নানা মত। একজন লিখেছেন- করোনা যখন ইতালিতে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছিলো, তখনও স্পেন ছিল নির্বিকার! অথচ করোনা হাটিহাটি পা পা করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হানা দিলো রাজধানি মাদ্রিদে।সময় চলে গেছে, কর্তারা এখন সব করছেন। কিন্তু যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। এখন মরার পর কেউ ছুঁতে পারছে না। দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছরে পরে কাঁদতে পারছে না। জানাজায় লোক হচ্ছে না, ফিউনারেল হচ্ছে না। দাফন হচ্ছে না। সরাসরি ক্রিমেশনে পুড়িয়ে ফেলছে! এখন জরুরি অবস্থায় কি লাভ? খোলা শুধু ব্যাংক, মুদি দোকান আর ফার্মেসি। বাকি সব সিলগালা, তালা। লাভ নেই। এখন সরকারি তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকও নেয়া হয়েছে সরকারের আওতায়। সব নিয়ন্ত্রণ সরকারের। সকল ইন্টার্ন এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো ডিসিপ্লিনের চিকিৎসক হলেই প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা সৈনিক হিসেবে! শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের যুক্ত করা হচ্ছে চিকিৎসক কাতারে! এরপর যুদ্ধ চলছে। হাসপাতালে হাসপাতালে। তবুও কমছে না মৃত্যু মিছিল।

উল্লেখ্য, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজের স্ত্রী বেগোয়া গোমেজের শরীরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করে পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায় মার্চের মাঝামাঝিতে। স্পেন সরকার জাতিকে জানায়- প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বেগোয়া গোমেজ করোনা আক্রান্ত। তবে পেড্রো সানচেজ ও বেগোয়া গোমজের শারীরিক অবস্থা  ভালো। তারা মাদ্রিদে লা মনক্লোয়া প্রাসাদে তাদের বাসভবনের মেডিকেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলছেন। সেই সময় জানানো হয়- সানচেজের মন্ত্রিসভার দুই সদস্যও করোনা আক্রান্ত। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সবাই সেরে ওঠেছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর