মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বিশ্বজুড়ে হুহু করে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের বহুদেশ। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৭ জন। আক্রান্ত হয়েছে ১৬৪ জন। ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থান এখন লকডাউন। করোনার কারণে চলছে সরকারি ছুটি। বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সংক্রমণ রোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হাট বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিধি নিষেধ।
কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খোলা থাকলেও সেখানে সামাজিক দূরত্ব না মানার চিত্র দেখা গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মানছে না সাধারণ মানুষ। এমনকি দোকানের সামনে দুরুত্ব বজায় রাখার গোল চিহ্ন দেয়া থাকলেও সেটাও মানছে কেউ। কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে ক্রেতারা ভিড় করছেন। অনেকেই বিনা প্রয়োজনে ঘোরাফেরা করছেন। যদিও সরকার নিয়মিতভাবে মানুষকে সতর্ক থাকার ও সর্বদা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলে আসছেন। এনিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করছেন।
রাজধানীর কয়েকটি বাজারের খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয় থাকা শর্তেও বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। একজন আরেকজনের সংস্পর্শে এসে কথাবার্তা বলছেন। সাধারণ মানুষ একে অপরের পাশে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন। বিক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নেয়ার পরামর্শ জানালেও তা মানছে তা ক্রেতা সাধারণ। এনিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হতেও দেখা গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসলে নিত্যপণ্যের দোকানে লোকজনের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা গেলেও পরক্ষণে তা আগের রুপে ফিরে যাচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা সিহাব উদ্দিন জানান, সামাজিক দুরত্ব কাস্টমার বুঝতে চায় না। এক সঙ্গে ৪/৫জনের বেশি লোক ভিড় করে। এতে আমার জীবনেরও ভয় আছে। এজন্য কাস্টমারকে একজন করে আসতে বলি। দু'একজন কথা শুনলেও বেশি ভাগ মানুষ তা মানতে চান না। উল্টো আমাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বাজার করতে আসা আবুল কালাম জানান, সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু বিক্রি ও কেনাকাটা করতে এসে ঠিক মত সে দূরত্ব রক্ষা করতে পারছেন না। আবার বিক্রেতারা দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললেও ক্রেতা সমাগম বেশি থাকায় একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব মানছেন না।
গামের্ন্ট কর্মী রেশমা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে বাসা-বাড়িতে এই নিয়ম মানলেও বাজারে তার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। সবাই কেন যেন দুরত্ব বজায় রাখতে অনীহা দেখায়। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবো। আমাদের উচিত আরো বেশি সচেতন হওয়া।
কাওরান বাজারের কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ ক্রেতা অনেক বেশি। তবে সামাজিক দূরত্বের অনেক অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক মানুষ বাজার করছে। তারা আবার একাধিক দোকান ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নিয়মিতভাবে এসব বাজারে প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত থাকলে সামাজিক দূরত্বটা অত্যন্ত টিকে থাকতো।