× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার , ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রবাসীরা কেমন আছেন (৪) /ইতালির বাংলাদেশ কমিউনিটিতে মৃত্যু-আক্রান্ত দুটোই বাড়ছে

অনলাইন

মিজানুর রহমান
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৯, ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:১৪ অপরাহ্ন

বৈধ-অবৈধ মিলে ইতালিতে লক্ষাধিক বাংলাদেশির বাস। করোনার নগ্ন থাবায় ক্ষত-বিক্ষত ইতালির বাংলাদেশ কমিউনিটিতে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা- দুটোই বাড়ছে। গতকালও একজন বাংলাদেশি করোনায় মারা গেছেন। তার নাম সালাউদ্দিন ছৈয়াল। ইতালির বেরগামো শহরের বসবাস করতেন তিনি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইতালিতে বাংলাদশি মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫ জনে। বাংলাদেশ কমিউনিটির দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- তারা যেসব তথ্য পাচ্ছেন তাতে কেবল লম্বার্ডিয়া-মিলান রিজিওনেই শতাধিক বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তবে প্রকাশ হচ্ছে কম।
ইতালিতে যারা মারা গেছেন তারা সবাই ওই রিজিওনের। মিলান, গালারাতে, কোমো, ভারেজ, ব্রেসিয়া, পাদোভা, ভিসেন্সা, ভেনিস, ত্রেভিজু, ত্রিয়েস্ত, মনফালকোনে, পরদেননে, ঊদিনে, জেনোভা, লা-স্পেজিয়া, সানরেমো, মদেনা, বলোনিয়া, পারমা, রিমিনি- উল্লিখিত শহরগুলোতে বাংলাদেশির বাস। লম্বার্ডিয়া-মিলান রিজিওনের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রভাবশালী সদস্য, ওই এলাকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল কবির জামান মানবজমিনকে বলেন, ইতালিতে মারা যাওয়া ৫ জনের সবাই ওই রিজিওনের। নোয়াখালির গোলাম মাওলা, নারায়ণগঞ্জেরর অপু এবং কুমিল্লার মুজিবুর রহমান মজুুর দাফন হয়েছে হয়েছে মিলানের মুসলিম কবরস্থানে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুস সোবহান জুনায়েদের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় রীতিনীতি এবং রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে তাদের জানাজা ও দাফন হয়েছে বলে জানান তিনি। করোনায় তার এক ভাবি ফ্রান্সে মারা যাওয়ার ব্যক্তিগত শোক সংবাদ শেয়ার করে মিস্টার জামান আরও জানান, লম্বার্ডিয়া- মিলানে দীর্ঘ সময় বসবাসকারী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। জসিম মিলান স্টেশনের কাছে একটি মসজিদ নির্মাণে বড় ভুমিকায় ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ১২ জন মিলে মিলান কালচারাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের আওতায় ওই মসজিদ নির্মাণ করেছিলাম। তার এমন বিদায় কল্পনায় আনতে পারিনি। লম্বার্ডিয়া-মিলান রিজিওনের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মৌলভীবাজার জেলা বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগের ( মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকা) বাসিন্দা জামিল আহমেদ মানবজমিনকে জানান, প্রায় ১ মাস ঘরে বন্দিদশায় কাটানোর পর গতকাল তিনি বাজার সদাই করতে বেরিয়েছিলেন।
 
গত ক'দিনে ইতালিতে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলে দাবি করেন তিনি। তার মতে, সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২৭ মার্চ। ওই দিন ইতালিতে ৯১৯ জন মারা গেছেন। গত দুই সপ্তাহে সর্বনিম্ন মৃত্যুর দিন ছিল ৫ই এপ্রিল। ওই দিনে ৫২৫ জন মারা গেছেন। তবে তিনি বলেন, এই ক'দিনে মৃত বা আক্রান্তের ওঠা নামা খুব একটা নেই। গড়ে প্রতিদিন মারা যাওয়ার সংখ্যার ৬০০র ঘরে।
 
বেঁচে থাকার স্বপ্ন সঞ্চারিত তবে, পরিস্থিতির উত্তরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা:
করোনা আক্রান্ত মানেই মৃত্যু, না হয় হাসপাতালের বেডে অসহ্য যন্ত্রণা- এমনটাই ছিল গত দু'সপ্তাহে ইতালির অবস্থা। কিন্তু এই ক'দিনে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগীদের সংখ্যা বাড়ায় ইতালিবাসির মনে নতুন করে বাঁচার আশা বা স্বপ্ন সঞ্চারিত হয়েছে। তবে কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বা আদৌ ইতালি তথা দুনিয়া করোনার করাল গ্রাস থেকে পুরোপরি মুক্তি পাবে কি-না? সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে সবার মাঝে। প্রায় ১ মাস হয় দেশজুড়ে লক ডাউন চলছে। দু'দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মতে, ইস্টার সানডে পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া ইতালি বন্ধ থাকবে। ইতালি ত্রিয়েস্ততে বসবাসরত আইরিন পারভীন খান বিবিসিকে যেমনটা বলছিলেন। তিনি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং ইতালির চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, ফ্রিউলি ভেনেজিয়ে জুলিয়া প্রদেশের রাজধানীতে আমার বাস। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরে সুন্দর একটি শহর। ইতালির সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর একটি। এখানে গত বিশ বছর ধরে কিছু বাংলাদেশি আছে। প্রায় ১০০ পরিবার থাকে। আমরা এখানে একটা গ্রোসারি স্টোর চালাই। কাজেই যখন ইতালিতে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হলো, আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমাদের এই ব্যবসাটার কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা। ইতালিতে লকডাউন ধাপে ধাপে এসেছে। শুরুতে স্কুল বন্ধ করা হয়েছে।
 
তখনচিন্তা শুরু হলো আমার মেয়েকে নিয়ে। কারণ এবছর আমার মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার কথা। ওরা কীভাবে পড়ালেখা করবে। স্কুলের পর দেখা গেল বার-রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ করে দেয়া হলো। এরপর বলা হলো কেউ কাজেও যেতে পারবে না। কেবলমাত্র সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানগুলো খোলা থাকবে। আমাদেরটা যেহেতু গ্রোসারি শপ এবং এথনিক শপ, শুরুতে ভয় ছিল যে এটি খোলা রাখতে পারবো কি না। আমি যোগাযোগ করলাম, যিনি আমাদের কাজকর্ম দেখেন তার সঙ্গে। তিনি জানালেন খোলা রাখতে পারবো। প্রথমে কথা ছিল লকডাউন হবে ১৫ দিনের জন্য। এখন একটা ব্যবসা যদি ১৫ দিন বন্ধ থাকে, সেটার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে লাগবে তিনমাস। প্রতিদিন যখন আমাদের গ্রোসারি শপে যাই, তখন দেখি পথে-ঘাটে কোন মানুষ নেই। সাধারণত আমি পায়ে হেঁটে যাই। একদিন বাসে উঠলাম, দেখি পুরো বাসটাই ফাঁকা। এই শহরে আমি আছি গত ১৪ বছর ধরে। শহরটির পথঘাট, গাছপালা সব কিছুই খুব আপন। খুব অস্বস্তিকর লাগছিল, খুব ভয় লাগছিল সেই সময়টা। খুব খারাপ লাগছিল, পরিচিত মানুষগুলোর জন্য। কেনাকাটা করার জন্য সুপারমার্কেটে যখন যাই, তখন একটা দুরত্ব রেখে দাঁড়াতে হয়। তখন ভয় লাগে। মনে হয় এখান থেকে পালিয়ে যাই। ইতালিতে এখনো পর্যন্ত খাবার দাবার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু তারপরো কেমন একটা আতঙ্কজনক অবস্থা। জানিনা কবে আমরা এ থেকে মুক্তি পাবে?
 
অলইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরেরর মতে, গোটা ইতালি এখন স্তব্ধ, চারদিকে জনশূন্য। এ যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশ। তবে আশার কথা হচ্ছে, কিছু দিন ধরে এখানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে সুস্থ হয়ে ফেরাদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ কমিউনিটির সব নেতাই ইতালির চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেন। বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক, সরকারের নির্দেশনা মানলে আমরা বাঁচবো, বাংলাদেশ কমিউনিটি বাঁচবে, বাঁচবে ইতালি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর