× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা উপসর্গে অসুস্থদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না নাসিক, ক্ষোভ

অনলাইন

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
(৪ বছর আগে) এপ্রিল ৯, ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৬:২০ পূর্বাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে নগরবাসীর এই চরম দুর্দিনে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগরবাসী। সিটি এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থরা নিজেদের নমুনা সংগ্রহ করার অনুরোধ জানালেও কোন সাঁড়া পাচ্ছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণদের মধ্যে।
অভিযোগের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা আলী নিজেদের অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরে বলেন, পুরো সিটি এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গে অসুস্থদের নমুনা সংগ্রহের জন্য তাদের মাত্র ২জন টেকনিশিয়ান ছিল। তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাকি একজনকে দিয়ে পুরো সিটি এলাকার নমুনা সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এক্ষেত্রে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জনের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় বিষয়টি তিনি নাসিক মেয়রকে জানিয়েছেন।
মেয়র বিষয়টি উপর মহলকে অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান।
নগরের নিউ চাষাঢ়া জামতলা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ নাজমা সুলতানা শিমু বলেন, গত সোমবার তার স্বামী মেহেদেী হাসানের করোনা টেষ্টে পজিটিভ হওয়ার পর তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়। স্বামীর পর একই উপসর্গ তার মধ্যেও দেখা দেয়। জ¦র-কাশি ও গলা ব্যাথা নিয়ে নিজের নমুনা সংগ্রহে সিটি করপোরেশনের হট লাইনে গত বুধবার রাতে যোগাযোগ করেন। কিন্তু চিকিৎসক ডা. নিজাম আলী তাৎক্ষণিক তার নমুনা সংগ্রহে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে শিমুর ডায়রিয়া দেখা দেয়।
শিমু বলেন, স্বামীর করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তার মধ্যেও একই উপসর্গ দেখা দিলে তিনি আইইডিসিআর এর হট নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে আইইসিডিআর-এর যে নারীর তার স্বামীকে আইসোলেশনে নিয়ে গিয়েছিলেন তাকে গত মঙ্গলবার ফোন দেন। তখন তিনি বলেন আপা আমি নিজেও আইসোলেশনে আছি। আপনি তো সিটি করপোরেশন এলাকায় আছেন। নমুনা সংগ্রহের জন্য সিটি এলাকার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে। আপনি সেখানে একটু যোগাযোগ করেন।
এরপর তিনি গত বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবুল আমিনকে ফোন দেন। আবুল আমিন সব শুনে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ডাপ. নিজাম আলীর নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগযোগ করতে বলেন। ওই রাত সাড়ে ৮টায় ডা: নিজাম আলীকে ফোন দিয়ে আমার অবস্থা জানাই এবং নমুমা সংগ্রহের অনুরোধ করে কখন আসবে তা জানতে চাই। ডাক্তার নিজাম আলী বলেন, বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার আসতে পারি। তখন আমি বললাম আপনাদের উচিৎ দ্রুত আমার নমুনা সংগ্রহ করা। যেহেতু আমার আমার স্বামী করোনা পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে আছে এবং আমার উপসর্গও একই। আমার প্রচন্ড গলা ব্যাথা, শরীরে ব্যাথা, লুজমোশন শুরু হয়ে গেছে। আমার দুইটা বাচ্চা আছে। ওদের সংক্রমিত করে ফেললে তো সব শেষ। ওদের জন্য আমাকেই খাবার তৈরী করতে হয়। কতক্ষন গ্লাভস পড়ে কাজ করবো? বাচ্চাদের জন্য সব সময় ভয় কাজ করছে। তার দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়েটি নবম শ্রেণির এবং ছেলেটি দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শিমু বলেন, স্বামীর করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ায় পরিচিত এমনকি আত্মীয় স্বজনরাও এড়িয়ে চলছে। বাসায় খাবার নেই, ওষুধ নেই। এরই মধ্যে জরুরি সেবায় ফোন করে যদি সেবাই না পাই তাহলে জরুরি সেবা নাম দিয়ে লাভ কি?
শিমু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওনাদের হাবভাব আর কথা শুনে মনে হচ্ছে ওনারা নারায়ণগঞ্জবাসীর ঘরে ঘরে গিয়ে প্রত্যেকের নমুনা সংগ্রহ করছেন। এটাতো সঠিক নয়। সবাই কি করোনায় আক্রান্ত। তাদেরকে কিভাবে বোঝাবো যে আমার বিষয়টি খুবই জরুরি।
অভিযোগের বিষয়ে ডা. নিজাম আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সিটি এলাকার জন্য ৩টি টিম কাজ করছে নমুনা সংগ্রহের কাজে। এরমধ্যে একটি জোনের দায়িত্বে আমি আছি। আর নমুনা সংগ্রহের জন্য মাত্র একজন টেকনিশিয়ান রয়েছে। আমরা যারা চিকিৎসক আছি আমাদের দায়িত্ব হট লাইনে রোগিকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া।
জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে নাসিকের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা আলী বলেন, পুরো সিটি এলাকার ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য টেকনিশিয়ান মাত্র ২ জন। এদের একজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ করছেন মাত্র একজন। আমরা গত ৫ দিন যাবৎ সিটি এলাকার করোনা উপসর্গ নিয়ে যেসব রোগিরা হটলাইনে ফোন দিচ্ছেন তাদের নমুনা সংগ্রহ করে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে আইইসিডিআর এ পাঠাচ্ছি। গত ৫ দিনে (গতকালসহ) ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। আর গড়ে হট লাইনে নমুনা সংগ্রহের জন্য ফোন আসে ২৫ জনের। এ অবস্থায় একজন মাত্র টেকনিশিয়ান দিয়ে কিভাবে কাজ চালানো সম্ভব। বিষয়টি মেয়রকে জানানো হয়েছে। মেয়র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ডা. মোস্তফা আলী এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনের অসহযোগিতার অভিযোগ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জে তিনশ শয্যার একটি বিশেষায়িত এবং দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল রয়েছে। ওই দু’টি হাসপাতালের টেকনিশিয়ানদের তিনি সিটি এলাকার বাইরের কাজে দিয়ে রেখেছেন। অথচ হাসপাতাল দু’টি সিটি এলাকায় অবস্থিত।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে সিভিল সার্জন গত বুধবার থেকে নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর