× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনা আপডেট কুড়িগ্রামের অন্যরকম উদ্যোগ

মন ভালো করা খবর

কাজল ঘোষ
২০ এপ্রিল ২০২০, সোমবার

শুরুটা নিছক সামাজিক মাধ্যমেই। ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হল। তারপর ধীরে ধীরে এর বিস্তার। উদ্দেশ্য একটাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কজন সজ্জন ও উদ্যমী তরুণ এই উদ্যোগের সূচনা করেন কুড়িগ্রাম জেলা নিয়ে। পিছিয়ে পড়া উত্তরের এই জেলা নিয়ে এরইমধ্যে অভিনব সব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ‘করোনা আপডেট কুড়িগ্রাম’।

এর যাত্রা শুরু ২০শে মার্চ। উদ্দেশ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
দেশের যে প্রান্তেই কুড়িগ্রামের মানুষ আছেন সকলেই যুক্ত হচ্ছেন গ্রুপে। বাড়াচ্ছেন সহযোগিতার হাত। সমস্যায় বসে না থেকে সচেতনতা গড়ে তোলা, সম্মিলিতভাবে কাজ করাই লক্ষ্য গ্রুপের। আর এর কার্যক্রম দেশের অন্যান্য জেলাও অনুসরণ করতে পারে। কিভাবে ইচ্ছা থাকলেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, কাজ করা যায় মহামারি মোকাবিলায়।  

একটি দুর্ঘটনা ও করোনা আপডেট কুড়িগ্রাম
ঘটনাটি গত ৩রা এপ্রিলের। কুড়িগ্রাম সদরের জিয়া বাজারে দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় রিকশা চালক সাইফুলকে। তিনি ছিলেন পাঁচগাছি ইউনিয়নের বাসিন্দা। ঘটনার পরপরই স্বেচ্ছাসেবকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না। দিন আনে দিন খায় আর সাইফুলই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম। তার মৃত্যুতে ৬ সদস্যের পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। লকডাউন চলাকালে পেটের তাড়নায় রাস্তায় নামতে বাধ্য হয় রিকশা চালক সাইফুল। কিন্তু নির্মম দুর্ঘটনা তাকে কেড়ে নেয়। মর্মান্তিক এই খবরটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলে চারপাশের সকলেই সাড়া দেন। সদস্যরা এগিয়ে আসেন কিভাবে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো যায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে গ্রুপের সদস্য হৃদয় বিশ্বাস এবং ইসরাক চৌধুরী এক বস্তা চাল নিয়ে এবং আরেক সদস্য এগিয়ে যান। গ্রুপের পক্ষ থেকে তারা নিহত রিকসা চালকের পরিবারের সন্তানের জন্যে চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও আরও বেশকজন সদস্য পরিবারটির খোঁজ নেয় এবং খাদ্য সহায়তা প্রদান করে।  

টেলি মেডিকেল টিম
করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসরাই সম্মুখ যোদ্ধা। আর এক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই করোনা আপডটে কুড়িগ্রাম। গ্রুপে যুক্ত থাকা চিকিৎসকদের নিয়ে গঠন করা টেলি মেডিসিন টিম। যারা টেলিফোনে মানুষকে দিচ্ছেন পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা। ইতিমধ্যেই টিমে যুক্ত হয়েছেন ডাঃ শাহ আহসানুল ইমরান, ডাঃ অমিত সরকার এবং ডাঃ এরশাদুল হক। তিনজন মিলে শুরু করলেও পরে আরও এগিয়ে আসেন ডাঃ সাজেদুল ইসলাম এবং ডাঃ নুরনবী আনসারী। ডাঃ শাহ আহসানুল ইমরান বিশেষ ভূমিকা রাখেন মেডিকেল টিম গঠনে। তিনজনের মেডিকেল টিমে এখন যুক্ত হয়েছেন ৩৬ জন প্রফেসর, কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর প্রতিদিন টেলিফোনে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার তিনশত মানুষ।  

দরিদ্র মানুষের সেবায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স
এলাকার গরিব ও অতি দরিদ্রদের সেবায় যুক্ত হয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। চব্বিশ ঘন্টা অ্যাম্বুলেন্স এলাকার সাধারণ মানুষের সেবায় যুক্ত আছে। জেলার ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম এই সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও তিনি গ্রামে গ্রামে মানুষের পাশে কাজ করছেন সেই সকল স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য পিপিই দিয়েছেন।  

 
রামর্শমূলক লাইভ প্রোগ্রাম ও অন্যান্য
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নিয়মিত পরামর্শমূলক অনুষ্টান আয়োজন করা হয় ফেসবুক পেজে। পরামর্শ দেয়া হয় শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার। স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন সময় হাজির হন খ্যাতনামা চিকিৎসকরা। সপ্তাহে দুইদিন আয়োজন করা হয় ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম চর্চার। রবিবার এবং বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে এক ঘন্টা চলে এই চর্চা। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কুসলী জয় এতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এছাড়াও মনকে চাঙা রাখতে লাইভ মিউজিক প্রচারিত হয় গ্রুপ পেজে। রাত ১০টার দিকে পেজে গেলে আপনি শুনতে পাবেন প্রেরণামূলক গান। গ্রুপের অন্যতম এডমিন বিপাশা রহমান ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন।
এছাড়াও করোনা মোকাবেলায় সচেতনতা গড়তে মাস্ক, মাইকিং, সাবান বিতরণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এলাকার বিভিন্নস্থানে সাদা রং দিয়ে ৩ ফূট দূরত্বের মার্কিং করা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের জন্যে নিয়মিত খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। গ্রুপ সদস্য মামুনুর রশীদ কাজলের মাধ্যমে একটি টিম গঠন করে মানুষের বাসায় বাজার ফ্রি ডেলিভারি ও তানভীর ওয়াহিদের মাধ্যমে চব্বিশ ঘন্টা ওষুধ পৌঁছে দেয়ার ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।

মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক টিম:
লকডাউন চলাকালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইউনিয়নভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বা ভলান্টিয়ার টিম গঠন করা হয়েছে। KSWAD, Dream Du, ESDF, HAAFAS এমন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মিলে টিম গঠন করা হয়। টিম গঠনে সাহযোগিতা করেছেন আবু সাইদ, নাজমুস সাকিব ও নূরুজ্জামান রাজু। এ সকল ভলান্টিয়াররা জেলার ৭২টি ইউনিয়নে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই তাদের সুরক্ষায় প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহ আহসানুল ইমরান।

নেপথ্যের কারিগর
বিপাশা রহমান, ডাঃ শাহ আহসানুল ইমরান, নিলয় এম রেদোয়ান, হাসানাত কানন, জাহিদুল ইসলাম জীবন, শফিকুননবি বায়জিদ, হৃদয় বিশ্বাস, নাসিরুল সুজন, আতিফ ইফতেসাম, ইসরাক চৌধুরী সচ্ছ, ডাঃ অমিত সরকার, মো. সাকিউল ইসলাম বাপ্পি, ইয়াসির আরাফাত প্লাবন, নবনী চৌধুরী, আতিয়া আনুলি, মো. নাজমুস সাকিব, আবু সাইদ, আশরাফুল আলম, ফারুক বসুনিয়া, এস এম তৌহিদুল, মনি নাসরিন, হোসেইন মারুফ, আল ফারাবী, শাহ আজিজ ইমন, আতিক বিন শামসুদ্দিন, যাকারিয়া হোসেইন বাধন, এস আর সোহাগ, এবং চৌধুরী তানভীর ইসলাম (অন্তু) প্রমুখ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর