× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটুকু নির্মম হতে পারে...

ফেসবুক ডায়েরি

জিয়া হায়দার
২৪ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার

আমাদের আম্মা গতকাল বিকাল ৪:৩০ মিনিটে ঢাকায় অবস্থিত কুয়েত মৈত্রী হসপিটালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আজ সকাল নয়টায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে আম্মার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সাথেসাথেই আম্মাকে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় |
আম্মার চিকিৎসা, পরিবহন এবং দাফনের কাজে কোবিড-১৯ প্রদত্ত জাতীয় দুর্যোগপূর্ণ সময়ের মধ্যেও আমার অগণিত ভাই, বন্ধু ও সহকর্মী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।সকলের কাছে আমি চির ঋণে আবদ্ধ।আপনাদের সহযোগিতা ও মানসিক সাহায্য আমি সব সময় কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবো। আম্মা একজন জ্ঞানী, ধার্মিক, বিনয়ী, দানশীল এবং পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। আপনাদের সকলের দোয়ায় আল্লাহ যেন ওনাকে বেহেশত নসিব করেন।
জন্ম আর মৃত্যু মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ | যখন জন্মেছি তখন মৃত্যুকে তো একদিন বরণ করতেই হবে | আম্মা ওনার সাত সন্তানদের ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছেন, প্রতিষ্ঠান থেকে রত্নাগর্ভার স্বীকৃতি পেয়েছেন, সবসময় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিজ পরিবারের সদস্যদের মতোই দেখে শুনে রেখেছেন, আমাদের এবং আশেপাশের অনেক গ্রামে বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন, অকাতরে দান-খয়রাত করেছেন | ওনার সাত সন্তান আজ প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং আম্মার অকস্মাৎ চলে যাওয়ার সময়টাকে আমি অস্বাভাবিক বলবো না।
কিন্তু ওনার চলে যাওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দেবে আমাদের বাংলাদেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার পচন কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। আজ আমি এবং আমার ভাইবোন সহ পরিবারের প্রতিটি সদস্য শোকাচ্ছন্ন। তাই আজ এর বেশি কিছু শেয়ার করবো না। কিন্তু পরে কোনোদিন বলবো যার ৭ সন্তানের মধ্যে ৩ জন ডাক্তার, ১ পুত্রবধূ ডাক্তার, এবং ১ মেয়ে জামাই ডাক্তার তার প্রতিও এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটুকু অবিচার করেছে, নির্মম আচরণ করছে।
এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
যার একটা সন্তানও ডাক্তার নয়, যার প্রবাবশালী আত্মীয় নাই, যিনি চাইলেই পকেট থেকে হাজার হাজার টাকা বের করতে পারবেন না, যিনি পথ-ঘাট চেনেন না, তার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটুকু নির্মম হতে পারে সেটা চিন্তা করলেও আঁতকে উঠতে হয়।
এই হলো আমার স্বাধীন দেশ, এই হলো আমার দেশের একটি গুরুত্বপৃর্ণ সেক্টরের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, এই হলো আমাদের অর্জন ।
ভালো থাকবেন - আম্মার জন্য দোয়া করবেন ।

(লেখক: সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট, বিশ্ব ব্যাংক, লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর