সারা বছর কলকাতার শাড়ি ব্যবসায়ীরা তাকিয়ে থাকেন দুটো উৎসবের দিকে। এপার বাংলার দুর্গোৎসব আর ওপার বাংলার ঈদ। দুর্গাপুজোয় যেমন এই বাংলার মহিলাদের শাড়ি কেনার ঢল নামে, তেমনই ঈদে ওপার বাংলার মহিলারা বিমান, সড়ক কিংবা রেলপথে চলে আসেন কলকাতায় শাড়ি কেনার জন্য। এবার করোনা আবহে বাংলাদেশের ক্রেতাশূন্য কলকাতার শাড়ির বাজার। বিশিষ্ট বস্ত্র ব্যবসায়ী কান্তি সাহার মতে, এবার ঈদে কলকাতার শাড়ির বাজার হারালো প্রায় বাংলাদেশের সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকার ব্যবসা। কলকাতার অন্যতম সেরা বস্ত্র প্রতিষ্ঠান সাহা টেক্সটাইলস এর কর্ণধারের মতে, বাংলার তাঁতের শাড়ির সব থেকে কদর বাংলাদেশে। ঈদের সময় প্রতিবছর হোটেল ভাড়া করে থেকে শাড়ির সওদা করেন বাংলাদেশি মহিলারা। পার্ক স্ট্রিট, কামাক স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট এর শাড়ির দোকানগুলোতে উপচে পড়ে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড়।
এবার সবই অনুপস্থিত। পার্ক স্ট্রিট এর বিশিষ্ট শাড়ির দোকান মঙ্গলম মাছি তাড়াচ্ছে, খদ্দের নেই রূপসী কিংবা কামাক স্ট্রিট এর কিন্নরীতে। পার্ক স্ট্রিট এর শাড়ি ব্যবসায়ী পবন আগারওয়াল জানালেন, ঈদের বাজারে তাঁদের বিক্রি দিনপ্রতি আড়াই তিন লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
এবার বাংলাদেশি ক্রেতা না আসায় বিপন্ন তাঁরা। ট্রাডিশনে আগ্রহী যাঁরা এবং মধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের ভিড় বেশি হয় কলেজ স্ট্রিটে। এখানে দশ হাজার টাকা দামের তাঁতের শাড়ি যেমন বিকোয়, তেমনই বিক্রি হয় দেড় - দুহাজার টাকা দামেরও শাড়ি। এবার লকডাউনে বাংলাদেশি ক্রেতারা আসেননি, তাই মন খারাপ কলেজ স্ট্রিট এর। বেনারসি কুঠি কিংবা সিল্ক প্যালেস একদম ক্রেতাহীন। সীমিত দোকান খুলেছে। সামাজিক দূরত্ব রাখার ব্যবস্থাও হয়েছে। তবু সব শুনশান। কান্তি সাহার মতে, দুদেশের নিয়ম অনুযায়ী হয়তো শাড়ির আন্তর্জাতিক বিপণন সম্ভব নয়, কিন্তু টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এদেশে এসে বাংলাদেশি পর্যটকরা যে শাড়ি কিনে নিয়ে যেতেন তাতেই সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকার ব্যবসা হতো। করোনা তাও বন্ধ করে দিল। কান্তি বাবুর আক্ষেপ, ঈদের দিনে কলকাতার শাড়ি পরে এবার আর ফেসবুকে বাংলাদেশের নারীদের ছবি দেখা যাবেনা। করাল করোনা সব শেষ করে দিল।