× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কলকাতা কথকতা / বিল্লু বন গিয়া জেন্টলম্যান, পকেটমারের কণ্ঠে করুণ আর্তি

কলকাতা কথকতা

জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা
(৩ বছর আগে) মে ১৩, ২০২০, বুধবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

সুর্পণখার নাক কাঁটা যায়, উই কাটে ওই চমৎকার, খদ্দেরকে জ্যান্ত ধরে গলা কাটে দোকানদার, আমরা কাটি পকেট ভাই, পকেট নিয়ে আমরা থাকি, কাঁচি মোদের ঠাকুরদাই। ষাটের দশকের অবাক পৃথিবী ছবির এই গানটি গত পাঁচ দশকের বেশি সময় কলকাতার পকেটমারদের জাতীয় সংগীত। কিন্তু উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়ায় পকেটমারদের স্কুল আর এই গান নিয়মিত বাজানো হয়না। পকেটমারি শেখানোর স্কুল টিমটিম করে জ্বলছিল। করোনা এবং লকডাউন স্কুলে ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে। কলকাতা পুলিশের ওয়াচ সেকশন এর এক অফিসারের বদানোত্যায় কলকাতার পকেটমারদের প্রথম দশজনের একজন বিল্লু খান এর সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় সে প্রায় কান্নায় ভেঙে পড়লো - অন্য কাজে লোকে চাকরি হারাচ্ছে, আর আমাদের কাজে গোটা শিল্পটাই বিলুপ্ত হয়ে গেল। এখন না হয় বাস চলছে না বলে কাজ কারবার বন্ধ। যখন চলবে তখনো তো সামাজিক কারণে লোকে দূরে দূরে দাঁড়াবে।
পকেটমারি আর হবেনা। করোনা সব শেষ করে দিল। বিল্লু খান পকেটমারি করতো শিয়ালদহ - ধর্মতলা সেকশনে। ভিড় বাসে নিপুন কায়দায় কাঁচি নয়, ব্লেড চালিয়ে সে পকেট সাফ করে দিতো। দিয়ে থুয়ে দৈনিক আয় ছিল প্রায় দুশো টাকার মতো। পিক টাইমে আয় হয়েছে কখনো দৈনিক তিনশো , চারশোও। পিক টাইম মানে মাসের প্রথম বা পুজো অথবা ঈদের সময়। পিক আওয়ার সকালের অফিস টাইম আর সন্ধ্যার ফেরার সময়। করোনা বিল্লুর পেশা কেড়ে নিয়েছে। বিল্লু এখন জেন্টলম্যান। একটা মাস্ক তৈরির কারখানায় সপ্তাহে তিনদিন রোজ ভিত্তিতে কাজ করছে। লালবাজার এর ওয়াচ সেকশন এর অফিসার এর হিসাব অনুযায়ী কলকাতার প্রায় দেড়শো পকেটমার কাজ হারালো। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং চালু হাওয়ায় পকেটমার শিল্প অবলুপ্ত হবে। মাস্টার আর ওস্তাদদের কাজ থাকবে না। এই মাস্টার আর ওস্তাদ কারা? মাস্টার হলো তারাই যারা দীর্ঘ পকেটমার জীবনে অভিজ্ঞতার বলে অন্যকে শেখানোর অধিকার পেয়েছে। আর ওস্তাদ হলো সাধারণ পকেটমারদের কোড নেম। মাস্টার শহরে মাত্র জনা পঁচিশ আছে। বিল্লু খান তাদেরই একজন। করোনা অনেক কিছু গ্রাস করেছে.। হয়তো তার দাপটেই শেষ হলো ভারতের বহু নিন্দিত একটি প্রাচীন শিল্প।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর