বয়েস শরীরে তার থাবা বসিয়েছে। মুখের রেখায় প্রাচীনত্বের ছাপ। তবু নবাব বাড়ির সেই পালিশ অক্ষুন্ন। টিপু সুলতানের সপ্তম বংশধর আনোয়ার আলি শাহ’র মুখের হাসিটি বড় মিষ্টি। হেসেই বললেন, একটা সময় ছিল যখন রমজানের শেষ দিনের ইফতারে প্রায় তিনহাজার লোকের দস্তরখান পড়তো এখানে। এখন নামেই সুলতান, তালপুকুরে ঘটি ডোবেনা। তবু টালিগঞ্জ প্লেসে আনোয়ার আলি শাহ’র প্রাসাদে ইফতারের ভোজে এখনো বিরিয়ানি, কাবাব, রেজালার সুগন্ধ ম ম করে। তিনহাজার এর জায়গায় হয়তো তিরিশ জন অথিতিও থাকেন না।
টালিগঞ্জ যে এর টিপু সুলতান মসজিদের পাশেই সুলতানের সপ্তম বংশধরের প্রাসাদ। বিবর্ণ, পলেস্তরা খোঁসা বাড়ি। এখানেই সস্ত্রীক থাকেন নবাব কিংবা সুলতান। শাহ - গিন্নি নিজের হাতে ইফতারের দিনে কাঠকয়লার আঁচে রাঁধেন উমদা বিরিয়ানি। মেজাজটাই তো আসল রাজা। তাই, নবাব গিন্নি বলেন তিনি নিজে হাতে করে নিউ মার্কেট কিংবা জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে কিনে আনেন রান্নার মশলা, জাফরান কিংবা জর্দা। সুলতান কিংবা নবাবদের পাক প্রণালী একদম আলাদা, সেই ট্রাডিশন বাঁচিয়ে রেখেছেন নবাব গৃহিনী। সরকারি কিছু মাসোহারা আসে। তাই বাঁচিয়ে রমজানের শেষ দিনে শাহী ভোজের আসর বসানো হয়। এবার করোনার কোপে সব বন্ধ। টিপু সুলতানের সপ্তম বংশধরের প্রাসাদে এবার আতরদান বেরোবে না। পছন্দ করা সালং এ ঘি, তেজপাতা, লাল কাশ্মীরি লঙ্কা পড়বে না। একটি ভাইরাস সব শুষে নিয়েছে। নবাব বাড়ির শেষ ঐতিহ্যও।