× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আইসিইউ পরিচালনায় ডাক্তার সংকট

শেষের পাতা

রুদ্র মিজান
২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি

বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগ সুস্থ হলেও একাংশের অবস্থা হচ্ছে শোচনীয়। প্রাণ হারাচ্ছেন তারা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় রোগীই মারা যাচ্ছেন শ্বাস কষ্টের শিকার হয়ে। শ্বাসকষ্ট  করোনা আক্রান্তদের আশঙ্কাজনক পর্যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদের প্রয়োজন হয় আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হয়। বিষয়টি অনুধাবন করে প্রতি জেলায় অন্তত ১০টি আইসিইউ চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্কট কাটাতে সম্প্রতি দুই হাজার চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে আইসিইউ পরিচালনার জন্য এনেসথেসিওলজিস্টের সংখ্যা হাতেগুনা। যে কারণে আইসিইউ পরিচালনা করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অবস্থায় নতুন করে আইসিইউ স্থাপন করে তা পরিচালনা করা দুষ্কর।
সরকারি হিসাব মতে, সারা দেশের কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৪১টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক সপ্তাহে করোনা রোগীর সংখ্যা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই তুলনায় আইসিইউ শয্যা খুবই কম। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা বিষয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ কিছু করেছে। সরকারের কাছে করা ওই সুপারিশে এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনা রোগীদের সেবার জন্য আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে হবে। রোগীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন দিতে ভেন্টিলেটর বাড়াতে হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দেয় কমিটি।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্ট’র সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ডা. কাওসার সর্দার মানবজমিনকে জানান, আইসিইউ পরিচালনার জন্য এনেসথেসিওলজিস্ট প্রয়োজন। দেশে এনেসথেসিওলজিস্ট হিসেবে ডিগ্রিপ্রাপ্ত রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ২শ’ জন। এরমধ্যে প্রায় ৬শ’ জন সরকারি চাকরি করছেন। এছাড়া বাকিদের অনেকে দেশে নেই। অনেকে বেঁচে নেই। অনেকে বেসরকারি বিভিন্ন মেডিকেলে কর্মরত।
প্রফেসর ডা. কাওসার সর্দার বলেন, করোনায় আক্রান্ত শতকরা ২০ জনের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসার দরকার হয়। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ ভাগের দরকার হয় অক্সিজেনের। তাদের পাঁচ থেকে ১০ ভাগের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে যায়। তাদের জন্য আইসিইউ সাপোর্ট  দরকার হয়। এই আইসিইউ পরিচালনা করার জন্যই এনেসথেসিওলজিস্ট প্রয়োজন। এছাড়া অন্যরা এটি পরিচালনা করতে পারে না। নূন্যতম ছয় মাস থেকে এক বছরের প্রশিক্ষণ ছাড়া  কেউ আইসিইউ পরিচালন করতে পারবে না। সরকারি চাকরিতে এনেসথেসিওলজিস্টের অভাবের কারণেই বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় আইসিইউ স্থাপন ও পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
সূত্রমতে, করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে এনেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসকগণ সাত দিন ডিউটি করে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে যাচ্ছেন। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এনেসথেসিয়ার চিকিৎসকের সঙ্কট বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় সঙ্কট উত্তরণের জন্যই এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এনেসথেসিয়ার চিকিৎসকের অভাবে একই সার্জন অথবা জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে ওটি বয় এর কাছে আম্বু ব্যাগ দিয়ে অপারেশন করানো হয়। যার ফলে অপারেশন চলাকালে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। একই কারণে জেলা, উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ওটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি করোনা সঙ্কট উত্তরণের জন্য সরকার ৩৯তম বিসিএস’র দুই হাজার চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়েছে। এতে হাতে গুনা কয়েক জন এনেসথেসিওলজিস্ট রয়েছেন। ফলে সঙ্কট থেকেই গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্ট এর পক্ষ থেকে পাঁচশত ট্রেনিং প্রাপ্ত এনেসথেসিয়ার চিকিৎসকের তালিকাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয়। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও সুপারিশ রয়েছে। এডহক ভিত্তিতে এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দিয়ে সঙ্কট দূর করার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্ট।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেক্টরে দুই লাখ জনবলের মধ্যে ডাক্তার রয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার। এরমধ্যে প্রায় ৬শ’ এনেসথেসিওলজিস্ট। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি  হাসপাতালে এনেসথেসিওলজিস্টের পদের সংখ্যাও কম। মাত্র ১১শ’। এরমধ্যে শূণ্যপদগুলোও পূরণ করা হচ্ছে না। যে কারণে করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে আইসিইউ পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সেবা বিভাগ) অধ্যাপক হাবিবুর রহমান খান মানবজমিনকে বলেন, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ ভাগের আইসিইউ দরকার হয়। এটা সত্য যে আমাদের অল্প সংখ্যক এনেসথেসিওলজিস্ট রয়েছেন। সঠিকভাবে তাদের কাজে লাগাতে পারলে তেমন সমস্যা হবে না। তবুও আমরা চেষ্টা করছি এনেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসক কিভাবে আরও নিয়োগ দেয়া যায়। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর