× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন নিরাপত্তা হুমকি

বিশ্বজমিন

মাইকেল কুগেলম্যান
(৩ বছর আগে) মে ২৩, ২০২০, শনিবার, ৫:০৭ পূর্বাহ্ন

কয়েকদিন আগে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বঙ্গোপসাগরে সবচেয়ে শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ছিল এটি। এত শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় এর আগে রেকর্ড করা হয়নি। বঙ্গোপসাগর এমন একটি এলাকা, যেখানে এমন ধ্বংসাত্মক আবহাওয়ার মতো ইভেন্ট নতুন কিছু নয়। এই ঝড় অসংখ্য গাছ উপড়ে ফেলেছে। রাস্তায় বাণ ডেকেছে। ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
একই অবস্থা হয়েছে ফোন লাইনেরও। এই লেখার সময় পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন মানুষ মারা গেছেন। এর বেশির ভাগই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আম্ফানের মতো হিং¯্র এবং তীব্রতাসম্পন্ন ঝড় বৃদ্ধি পাবে এখানে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়া। এমনিতেই এখানে রয়েছে উষ্ণ আবহাওয়া, পানির উৎসের স্বল্পতা, উপকূলে ঘনবসতি, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, দুর্বল অবকাঠামো ও দারিদ্র্য। রয়েছে বাস্তুচ্যুতদের স্থান সংকুলানের অভাব। এ কারণে অসুস্থ হচ্ছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। মারাও যাচ্ছেন অনেকে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনকে দেখা যেতে পারে নন-ট্রাডিশনাল নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে। এটা যুদ্ধ, সন্ত্রাস ও অন্যান্য প্রচলিত নিরাপত্তা হুমকির চেয়েও বেশি বিপদজনক হুমকি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান দক্ষিণ এশিয়াকে এমন এক সময়ে আঘাত করেছে যখন এই অঞ্চল ভয়াবহ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এর মধ্য দিয়ে প্রচলিত নয় এমন নিরাপত্তা হুমকি কিভাবে অধিকতর একটি ভয়াবহ মহামারিকে ঢেকে দিতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়া অনেক বছর ধরে এই হুমকির সঙ্গে নিজেরা লড়াই করে আসছে। জলবায়ুর এই হুমকি শুধু এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে আছে এমন নয়। একই সঙ্গে এ থেকে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা, অস্থিতিশীলতা ও যুদ্ধ।
এরই মধ্যে গ্রাম এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্য, খরা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরমুখী হয়েছেন। পানির সংকট দেখা দিয়েছে ভারতের মেগাসিটি চেন্নাইয়ের মতো বড় বড় মেট্রোপলিটন শহরে। পাকিস্তানের দক্ষিণে এক সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী ইন্দুস নদীর পানি এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি সংকটের ফলে যে অনিরাপত্তা দেখা দিয়েছে তাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন নদীকে কেন্দ্র করে। এসব নদীর ওপর নির্ভর করে উভয় দেশই। এসব নদীর বেশ কতগুলো প্রবাহিত হয়েছে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে। পাকিস্তানের বেলুচ এবং ভারতের মাওবাদী বিদ্রোহীরা মনে করে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামালের সম-বন্টন হয় না। এ জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এটা বলা যায় না যে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রচলিত নিরাপত্তা হুমকি উবে গেছে। অনেক সন্ত্রাসী গ্রুপ এ অঞ্চলকে নিজেদের বাসভূমি বলে থাকে। আফগানিস্তানে চলছে রক্তাক্তপাত, অন্তহীন যুদ্ধ। পাকিস্তান-আফগানিস্তান, পাকিস্তান-ভারত, ভারত-নেপাল এবং ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা ও সহিংসতা অব্যাহত আছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত আকারের যুদ্ধের ঝুঁকি তো রয়েছেই।
তবু গতি পরিবর্তন হয়েছে। কমপক্ষে ২০ বছর আগে ভারত ও পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এই পারমাণবিক অস্ত্রই তাদের একের বিরুদ্ধে অন্যকে ভয়াবহ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে। উপরন্তু, সন্ত্রাসের হুমকি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোরালো অপারেশনের ফলে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি গ্রুপগুলোকে বাজেভাবে দমন করা হয়েছে। ইতিমতো নন-সিকিউরিটি হিসেবে হুমকির চালিকাশক্তিগুলি- প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি, ধ্বংসাত্মক আবহাওয়ার বিভিন্ন ইভেন্ট, ব্যাপকভিত্তিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নয় এমন হুমকি এই অঞ্চলে প্রচলিত নিরাপত্তা হুমকির চেয়েও ভয়াবহ।
পাকিস্তানের কথাই ধরুন। সেখানে বছরে যে পরিমাণ মানুষ বছরে মারা যান, তার মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই মারা যান দূষিত পানি পান করার কারণে। এ হিসাব জাতিসংঘের। তাদের হিসেবে প্রতি বছর পানিবাহিত রোগে পাকিস্তানে মারা যায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার শিশু। পক্ষান্তরে ২০০৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পাকিস্তান ছিল সন্ত্রাসের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ সময়। এ সময়ে সন্ত্রাসের কারণে বছরে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের সংখ্যা প্রায় ৩০০০। এর অর্থ এই নয় যে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসের কারণে মানুষের জীবনে যে ভয়াবহ প্রভাব পড়তো তা কমিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি মৃত্যু মানেই অনেক। এখানে এই সংখ্যা দুটি তুলে ধরার কারণ হলো পাকিস্তানে নন-সিকিউরিটি হুমকি কত বড় এবং এর গুরুত্ব কতটা তা বোঝানো।
অন্যদের থেকে পরিবেশগত হুমকির বিষয় ভালভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছে দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্রাফের অনেকটা সামনে এগিয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে, বন্যার ফলে গণহারে মানুষ যখন বাস্তুচ্যুত হয়, তখন কিভাবে সাড়া দিতে হবে তা নিয়ে।
বাংলাদেশের এই প্রস্তুতি বিস্ময়কর নয়। এখানে রয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। আছে নি¤œভূমি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উচ্চ মাত্রায় এই অঞ্চলে যেসব দেশ রয়েছে তার মধ্যে যৌক্তিকভাবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এই কাহিনী ভারত ও পাকিস্তানের জন্য ভিন্ন। আরো নিশ্চিত, নয়া দিল্লি এবং ইসলামাবাদ নতুন নতুন এসব হুমকির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ওয়াকিবহাল। প্রতিটি রাজধানী এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, রাজ্য বা প্রাদেশিক সরকারগুলো জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি দূর করে, এমন অনেক পলিসি ঘোষণা করেছে।
কিন্তু অগ্রগতি খুব ধীর। সমস্যাবহুল পলিসি তার স্থানেই রয়েছে। যেসব সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন তাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ভারত ও পাকিস্তানে উভয় দেশেই কৃষকরা, যারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, তারা মাঝে মাঝেই বন্যায় কৃষিকাজের জন্য উদার ভর্তুকি পান। পানির বিরুদ্ধে টিকে থাকে এমন ফসলে ভর্তুকি পান তারা।
করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত দক্ষিণ এশিয়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতকে বাস্তবে জেগে উঠার একটি ডাক হিসেবে দেখতে হবে তাদের, যারা প্রচলিত নয় এমন নিরাপত্তা হুমকির বিষয়ে কাঁধ ঝাঁকান এখনও। এই লেখার মোদ্দাকথা হলো, এ অঞ্চলের সুযোগগুলো এবং ব্যাপক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন। সর্বোপরি এসব অভিন্ন হুমকিকে দেখতে হবে এমন শক্তি হিসেবে, যার কোনো সীমানা নেই।
কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত বৈশি^ক প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা কোনো আশা জাগায় না। এখন সামনে যা আসছে, তার জন্য বিশ^কে একত্রে কাজ করা প্রয়োজন।

(লেখক যুক্তরাষ্ট্রের উড্রো উইলসনে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র এসোসিয়েট এবং এশিয়া প্রোগ্রামের উপপরিচালক। তার এ লেখাটি অনলাইন আরব নিউজ থেকে নিয়ে অনুবাদ)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর