× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সেন্টমার্টিনে ৬৫ দিন কেয়ারেন্টিনবাস /নাটকীয় সিদ্ধান্তেই রেকর্ড গড়লেন নিশাত

অনলাইন

কাজল ঘোষ
(৩ বছর আগে) মে ২৫, ২০২০, সোমবার, ১:৪১ পূর্বাহ্ন

ভ্রমণ বরাবরই আগ্রহের বিষয়। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছেন পর্যটন নিয়ে। চট্টগ্রামের মানুষ কাজেই সৈকত শহর কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন গিয়েছেন আগেও। কিন্তু এবারের যাওয়াটা একেবারেই অন্যরকম। লকডাউনের আগ থেকেই করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা থাকায় ফাঁকা সেন্টমার্টিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত এই সুযোগটাকেই বেছে নিলেন। বলা যায়, ইচ্ছা করেই ঝুঁকি নিলেন।
পুরো নাম নিশাত কায়সার।
ভালোবাসার বিষয় ঘুরে বেড়ানো। ভ্রমণপ্রিয় মানুষদেরও ঘুরে বেড়াতে নিয়ে যান। কোন এক বর্ষায় লম্বা সময় প্রবাল দ্বীপে থাকার স্বপ্ন ছিল। একা একা ঘুরে দেখবেন এই দ্বীপ। জনমানব শূন্য নীল জলে একাই নাইবেন। মনের আনন্দে মিশে যাবেন এখানকার প্রকৃতির সঙ্গে। করোনা ভাইরাস সে সুযোগ করে দেয় নিশাতকে। একদম একা, হ্যাঁ এটাই সত্য, একেবারে একাই অভিযাত্রী হিসাবে কোয়ারেন্টিনের জন্য নিশাত বেছে নিয়েছেন সেন্ট মার্টিনকে। কিভাবে কাটছে দিনগুলো সে কথাই মানবজমিন পাঠকদের শুনিয়েছেন তিনি।

যাত্রা শুরু হয়েছিল যেভাবে
বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর ছিল ১৩ ও ১৪ মার্চ। ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে নিশাত ছিলেন। ট্যুর শেষে সকলেই যখন ফিরে আসেন চট্টগ্রাম নিশাত তখন আরও কদিন কক্সবাজার বেড়াবার জন্য থেকে যান। একদিন, দুদিন, তিনদিন। ১৭ মার্চ কক্সবাজারের সৈকত শহর থেকে মন আবারও ছুটে যায় সেন্টমার্টিনের দিকে। কক্সবাজার থেকে নতুন একটি জাহাজ যায় প্রবালদ্বীপে। কর্ণফুলি শিপে সমুদ্র দেখতে দেখতে সেন্টমার্টিন যাওয়া হয়নি। পরদিন ১৮ তারিখ এই সুযোগটি কাজে লাগান তিনি। আগাম টিকিট নিয়ে আসেন। লকডাউন বা সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে এমন চিন্তা তখনও মাথায় আসেনি।  দুপুরের মধ্যে পৌঁছে সি সেন্ট রিসোর্টে ওঠেন। কদিন থিতু হবেন নিরিবিলি এমনটাই চিন্তা তখনও। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে অতি দ্রুতই।

সেন্ট মার্টিনে কোয়ারেন্টিনের নেপথ্যে
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পৌঁছবার একদিন পরই শুনতে পান ২০ মার্চ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। পর্যটকদের ফিরে যাওয়ার তাগাদা সর্বত্র। দোটানায় নিশাত। পরিস্থিতি বলছে এক। কিন্তু নিশাতের মন বলছে আরেক। ফিরবেন কি ফিরবেন না? এ যেন মনের অদৃশ্যে টস খেলছেন তিনি। হেড না টেল। টেল না হেড। জয়ী হবেন কে? নিশাত স্থির হন, সেন্টমার্টিনেই থেকে যাবেন। নিজের আজন্ম লালিত স্বপ্ন কোন এক বর্ষায় লম্বা সময় দ্বীপে থাকা। এবারই তার সেরা সুযোগ। একদিকে পর্যটক শূন্য, অন্যদিকে নিরবিলি একাকি দ্বীপে পদচারণার সুযোগ। থেকে যান তিনি। একদিন দুদিন নয় টানা ৬৫ দিন। এটা কতদিনে গড়াবে তাও জানেন না তিনি। সেন্টমার্টিনে লম্বা সময় কোন পর্যটকের একনাগাড়ে কোয়ারেন্টিন বাসের অভিজ্ঞতা বোধকরি আর কারও নেই।

নিশাত কয়সারের নিজের কথা  
সকালে দিকে জাহাজ ছাড়ে। কক্সবাজারে হোটেল ছিল সুগন্ধা পয়েন্ট। সেখান থেকে কর্ণফুলী শিপ ঘাট যেতে সময় লাগে ২০-৩০ মিনিট। টমটম অথবা রিক্সাযোগে যাওয়া যায়। টমটম নিয়ে যাই শিপঘাটে। গন্তব্যে আসার পর টিকিট দেখিয়ে ওঠে পরলাম শিপে। প্রথমবার ওঠা। একা ভ্রমণও এটাই। কিছুক্ষণের মধ্যে শিপ নদীর বুক ছিড়ে সমুদ্রে পতিত হলো। একে একে শিপ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সব পয়েন্টের দেখা মিলল। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে পৌঁছে যাই প্রবালদ্বীপে। নিরাপত্তার কারণে সি সেন্ট রিসোর্টে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। ম্যানেজার আশরাফুল ভাই সহযোগিতা করেন। ২০ তারিখ পর্যটক নিয়ে শিপ যখন রওয়ানা হয় তখন ভেবেছিলাম কিছুদিন থেকে ট্রলারে ফিরে যাব। আর ফেরা হয়নি। এখন এখানকার জনজীবনে মিশে গেছি। এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে মাছ ধরছি, রান্না করছি, খাচ্ছি। সমুদ্রের নানান রূপ দেখছি। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তীব্রতাও পরখ করেছি এই নীল সাগরের পাড়েই। প্রথমদিকে রিসোর্টের ম্যানেজার আরও তিনজন সহযোগি বাস করতেন। বর্তমানে স্থানীয় এক তরুণ ছাড়া আর কেউ নেই। আমি একাই রিসোর্টে আছি। পর্যটকবহনকারী শিপ চলে যাওয়ার পর আমার এই স্বপ্নের দ্বীপে আটকে থাকার দিন শুরু হয়েছিল তা এখনও চলছে। আমি এই দ্বীপের বহুমাত্রিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করছি।

নিজকে নিয়ে নয়, শঙ্কিত পরিবার নিয়ে
এত লম্বা সময় সেন্টমার্টিনে আছেন দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে কিনা, বিশেষ করে পরিবারের জন্য। খানিকটা হেসে নিশাতের জবাব ছিল, নিজেকে নিয়ে নয় আমি শঙ্কিত পরিবার নিয়ে। কারণ, আমি তো সাগড়পাড়ে একা নিরাপদে আছি। পরিবারের সকলেই চট্টগ্রাম শহরে থাকে। সেখানে করোনা রোগি বাড়ছে। এ কারণে তাদের নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর