× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘মানবিক পৃথিবীর জন্য সবকিছুতেই শুভ নেতৃত্ব দরকার’

অনলাইন

কাজল ঘোষ
(৩ বছর আগে) মে ২৫, ২০২০, সোমবার, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

সম্পূর্ণ এক নতুন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মানুষ। ভ্যাকসিন হয়তো আসবে। কিন্তু করোনা আতঙ্ক একেবারে কাটবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তেমনটাই বলছে। এই দুর্যোগ কাটলেও একটি মানবিক পৃথিবীর জন্য দরকার সবকিছুতেই শুভ নেতৃত্বের। সেটি না এলে সত্যিকার কল্যাণমূলক হয়ে ওঠবে না এই পৃথিবী। এমনটাই মনে করছেন প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো।

করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন?
আমাদের জীবনে এরকম অবস্থা আগে কখনও আসেনি।
শুধু আমাদের কেন, বোধকরি ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে দু তিন হাজার বছরেও এরকম ঘটনা ঘটেনি। প্লেগ, ফ্লু অথবা ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে তা দেশ বিশেষে প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু সারা পৃথিবী একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে এমনটি হয়নি। প্লেগে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্নস্থানে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারেও প্লেগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। লেখক শরৎচন্দ্রের লেখায় আমরা তার বর্ণনা খুঁজে পাই। তিনি সেসময় কিভাবে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তবে করোনার মতো ঘটনা আগে ঘটেনি। মার্চের শেষদিক থেকেই আমরা বন্দি। বিশেষ করে যারা বয়সি তারা নিশ্চিতভাবেই বন্দি। সকলেই বলছেন, বয়সিদের একেবারেই বাইরে যাওয়া মানা। এটা যে কেবল এদেশে তা নয় সর্বত্রই একই পরিস্থিতি। আমেরিকার মতো দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে।

দেশে দেশে করোনা নিয়ে নানা আলোচনা
প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কেন হলো? করোনা কোন ব্যকটেরিয়া নয়, এটা একটি ভাইরাস। বলা হচ্ছে, চীনের উহানে বাদুর থেকে মানবদেহে এটি প্রবেশ করেছে। পরে ধীরে ধীরে তা বিশে^র সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। চীনকে এর জন্য দায়ী করা যায় না। চীনের খাদ্য তালিকায় নানান বিচিত্র প্রাণী খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। সেই খাদ্য থেকেই এই ভাইরাস ছড়িছে সেটাও তত্ব কথা। এই ভাইরাস ছড়াবার পর থেকেই চীনসহ সারা পৃথিবীতে গবেষণা হচ্ছে। সকলেই টিকা অবিষ্কারের জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, যুক্তরাষ্টেও নানা উদ্যোগের কথা আমরা জানতে পারছি। টিকা আবিষ্কারের চেষ্টার নানা উদ্যোগে আমরা আশান্বিত। অতীতে পৃথিবীতে এমন নানা দুর্যোগ এসেছে। মানুষ অতীতের মতো এই দুর্যোগও কাটিয়ে এগিয়ে যাবে বলেই আশা করি।

বন্দিদশায় সময় কিভাবে কাটছে?
সব কাজ ছেড়ে ঘরে বসে আছি। সকলেই পরামর্শ দিচ্ছেন বাইরে না যাওয়ার। সময় কি করে কাটাবো তাই কঠিন হয়ে পড়েছে। জমে থাকা বইগুলো বের করে পড়ছি। টুকটাক লেখার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদের ‘বেলা-অবেলা’ বইটি পড়ে শেষ করলাম। বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কালের বেশ কিছু ঘটনাপ্রবাহ তিনি তুলে ধরেছেন। পড়ে দেখেছি তিনি আন্তরিকভাবে অনেক কথা লিখেছেন, আবার অনেক কথা লিখতে পারেন নি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বায়োগ্রাফি পড়ে শেষ করেছি। সেসময়ের ইতিহাসের অনেক অজানা অধ্যায় জানতে পারছি। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবনী পড়ছি। ব্রার্ট্রান্ড রাসেলের দর্শনের ওপর বেশকিছু বই শেষ করেছি। খুব ইচ্ছা হয় ঘরের বাইরে যেতে। নানা কাজ করার আছে। আমি বেশকিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই বাইরে যাব। সকলের সঙ্গে বসব।

নতুন কোনও লেখালেখি করেছেন?
লেখার অভ্যস ছেলেবেলা থেকেই। ফাঁকে ফাঁকে লিখছি। দর্শন ও নীতিবিজ্ঞানের ওপর সিরিয়াসধর্মী কিছু লেখা লিখছি। আমি বরাবরই আশাবাদী। মানুষ চাইলে জাতি, রাষ্ট্র আরও অনেক উন্নত হতে পারে। গোটা মানবজাতি অনেক কিছু করতে পারে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, মানুষ চেষ্টা করলে পৃথিবীকে স্বর্গে উন্নীত করতে পারে। এরকম চেতনা ইউরোপের দেশগুলোতেও ছিল। রাশিয়াতে কমিউনিস্ট পার্টিরও এমন স্বপ্ন ছিল। যদিও এর পাশাপাশি পৃথিবীতে মানবতাবিরোধেী কাজকর্মও চলেছে। কিন্তু সব চাপিয়ে মানুষ মানবতাবাদী হয়ে ওঠবে এমন চিন্তা সমবসময়ই ছিল। সামনের দিনগুলোতে এসকল চিন্তাভঅবনা নিয়ে আমার বেশকিছু বই প্রকাশের চিন্তা আছে। সেসব লেখা প্রিন্ট নিয়ে বানান সংশোধন বা প্রুপ দেখার কাজ করছি।

এভাবে আর কতদিন চলবে বলে মনে হয়?
মানুষের মনে নানান বিষয় কাজ করছে। মানুষ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের কথা শুনেছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেও প্রসঙ্গ আলোচনায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে অন্যরকম এক যুদ্ধের মুখোমুখি পুরো পৃথিবী। একদিন পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পুরো পৃথিবী হয়তো হিংশা মুক্ত হবে। আশা করি, মানুষ সচেতন হবে।
দুনিয়ার নানা স্থানে বলা হচ্ছে এটা আল্লাহ বা ঈশ্বরের গজব। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না তারা বলছেন, এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ। মানুষ পৃথিবীর ওপর দিনের পর দিন যে ধরণের অন্যায় করেছে এটা তারই ফল। অনেক আগে ভারতের বিহার রাজ্যে ইংরেজ শাসনামলে একটি বড় ধরণের ভুমিকম্প হয়েছিল। এর পরপরই মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, এটা মানুষের পাপের ফল। রবীন্দ্রনাথ তখন গান্ধীর সমালোচনা করে এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে লিখেছিলেন। এই বৈজ্ঞানিক ভিত্তির কথা মহাত্মা গান্ধীও জানতেন। কিন্তু গান্ধী চেয়েছিলেন, পাপাচার কমিয়ে মানুষ ভালোর দিকে যাত্রা করুক। এ কারণেই তিনি পাপাচার বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এনেছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞানের চেতনায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

আগামীতে আপনার প্রত্যাশা?
আমাদেরও প্রত্যাশা, সব ছাপিয়ে মানুষ ভালোর দিকে যাত্রা করবে। কিন্তু এই ভালোর দিকে যেতে হলে আমাদের সবকিছুতেই শুভ নেতৃত্ব দরকার। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ বলেছে করোনা একেবারে বিদায় হবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। কাজেই, বিজ্ঞানের মাধ্যমে করোনা থেকে মুক্তির সমাধান যেমন খুঁজতে হবে একইভাবে শুভ নেতৃত্ব মানবজাতিকে সত্যিকার কল্যাণের পথে এগিয়ে নেবে এটাই প্রত্যাশা করছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর