× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তুরস্কে সুগন্ধিবিহীন এক ঈদ

অনলাইন

হাফিজ মুহাম্মদ, আনকারা (তুরস্ক) থেকে
(৩ বছর আগে) মে ২৬, ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:১০ অপরাহ্ন

তুরস্ক দেখলো এক ভিন্ন আমেজের ঈদ। যার সাক্ষী হলাম আমিও। দেশটি এমন ঈদ আর কখনো দেখেছে বলে জানা যায়নি। মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর এ দেশটিতে দীর্ঘ রমাজান শেষে ঈদ আসলেও ছিল না কোনো আয়োজন। সকলকেই বাসায়, ছাত্রাবাসে পার করতে হয়েছে ঈদের দিন। বাইরে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। চারদিকে যখনে উৎসবের আমেজ তখন তুরস্কে চলছে টানা চারদিনের কারফিউয়ের দ্বিতীয় দিন। এক সুনশান নীরবতা।
মৌ মৌ করা হরেক রকমের সুগন্ধি ঘ্রাণ ছড়ায়নি চারপাশে। ধনী-গরিব, কালো-সাদা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে কাঁধের সঙ্গে কাঁধ মিলোনো হয়নি। মুসলমানদের সব থেকে বড় ধর্মীয় এ উৎসবে ছিল না কোনো আনন্দধারা। তুরস্কে এটা আমার প্রথম ঈদ। সেই সঙ্গে পরিবারের বাইরে তৃতীয়। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে লম্বা ছুটি না মিললেও ঈদের সকালে মায়ের সাক্ষাৎ ছিল নিয়মিত রুটিন। গত কয়েক বছর এটাই করে আসছি। ২০১৯ সালের সেপ্টম্বরে তুরস্কে আসার পর নানা পরিকল্পনা ছিল বিদেশে প্রথম ঈদ নিয়ে। নানা কারুকার্জে ও সৌন্দর্য মণ্ডিত তুরস্কের মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করবো। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করেই পালন করা হয় ঈদের সকল আয়োজন। কিন্তু করোনা মহামারি এবার সেটি করার সুযোগ দেয়নি। তুরস্ক সরকার আগাম সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পূর্ব থেকেই সকল ছুটির দিনগুলোকে কারফিউর মধ্যে নিয়ে এসেছে। যার ধারবাহিকতা চলছে ঈদের ছুটিতেও। আনকারা শহরের যেখানে আমার বসবাস সেটি একটি সরকারি ছাত্রাবাস। করোনা ভাইরাসের কারণে এখানে শুধুই বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবস্থান। তাই তার্কিস শিক্ষার্থীরা বাড়িতে চলে যাওয়ায় ঈদ নিয়ে তাদের অনুভূতি দেখা যায়নি। তবে যতটুকু জেনেছি আমাদের উপমহাদেশের ন্যায় ঈদে পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানো কিংবা নতুন পোশাক পরিধানের সংস্কৃতি তাদের মাঝে তেমনটা নেই। যতটুকু আছে তা কেবল ঈদের নামাজ আদায় করে পারিবারিকভাবে ঈদ পালন করা। তুরস্কে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় আড়াই মাস অতিক্রম করছে। এরমধ্যে দেড় লাখের উপরে মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ প্রায় করেছে ৪ হাজার। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছিলাম ঈদের নামাজও হয়তো পড়া হবে না। কেননা, করোনা প্যান্ডামিকের এ সময়টা জুড়েই মসজিদ বন্ধ রয়েছে। এমনকি জুমার নামাজও হচ্ছে না। সেখানে ঈদের নামাজ কি করে সম্ভব। দীর্ঘ একটি মাস রোজা শেষে চাঁদের রাতেই আমাদের মাঝে একটু ভিন্ন আমেজ দেখা গেল। যখন শুনতে পেলাম আমরা কিছু শিক্ষার্থী মিলে খোলা মাঠেই ঈদের আয়োজন করতে যাচ্ছি। এ নিয়ে সোমালিয়ান বন্ধু হুজাইফা বলছিল তার দেশের ঈদ উৎসবের কথা। এ বছর ওদের দেশে চাঁদ দেখায় শনিবারই ঈদ উৎযাপন করেছে। অন্যান্য দেশের বন্ধুরাও তাদের দেশের ঈদ নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে ভুললো না। সেই সঙ্গে আমার অনুভূতি আরো বেশি। প্রথমবার নানা দেশের নানা রংয়ের মানুষের সঙ্গে আলাপন। তাদের প্রায় প্রত্যেক দেশেই ঈদ নিয়ে আয়োজন ও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টের কথা শুনলাম। আমাদের ঈদের নামাজ সকাল ৬টায় হওয়ায় রাতে ঘুম নিয়ে সংশয় ছিলাম। তুরস্কে ঈদের জামাত স্বাভাবিক অবস্থাতেও ফজরের নামাজের ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পরই আদায় করা হয়। আমাদের নামাজও তারই ধারাবহিকতা রক্ষা করে ৬টায় দেয়া হয়েছে। এদিকে গত কিছুদিন আনকারায় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীর ওপরে উঠলেও গতকাল থেকে আবার তা ১০ ডিগ্রীর নিচে নেমে আসে। ঈদের সকালে তাই ফজর নামাজ পড়েই আগেবাগে গোসল করে ঈদৈর প্রস্তুতি নিই। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা কয়েক বন্ধু মিলে ঈদের মাঠে উপস্থিত হই। বাংলাদেশি ছোট ভাই মিসবাহর সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠি। আমার তুরস্কে প্রথম ঈদ হলেও মিসবাহর অনেক ঈদ কেটেছে পরিবারের বাইরে। মিসবাহ হাই-স্কুল থেকেই এখানে পড়ছে। একই ছাত্রাবাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমরা। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যতটুকু আনন্দ অনূভূতি তা মিসবা আর আমি ভাগাভাগি করে নিই। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসি। সুদানি বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবদুল মুইজ ঠিক সময়ে জামাতে দাঁড়ান। আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে নামাজ শেষ করেন। এরপর সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটি খুতবা দেন। নামাজ শেষে কেউ কারো সঙ্গে কোলাকুলি, হাত না মিলিয়ে যার যার স্থানে চলে যায়। কিছু শিক্ষার্থী আবার মুঠোফোনে ছবি তুলে নেয় স্মৃতিতে ধরে রাখতে। মাঠ থেকে রুমে চলে এসে কথা হয় দেশে পরিবারের সঙ্গে। এছাড়া আনাকারা বাঙালি কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপন হয় মুঠোফোনে। এছাড়া তার্তে অবস্থানরত অন্য শহরগুলোর ভাইবোনদের সঙ্গেও মুঠোবার্তায় শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। সবারই একই অনুভূতি প্রিয় মাতৃভূমি ও পরিবারের সঙ্গে কাটানো ঈদকেই বেশি অনুভব করছে। সঙ্গে সবারই একটিই চাওয়া করোনা মহামারি থেকে মুক্ত হয়ে আবার পৃথিবী তার আসল রূপে ফিরবে। আগামীর ঈদ হবে ভয় ও আতংকমুক্ত। প্রিয় মাতৃভূমি থেকেও করোনা প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর