কলকাতার কলেজ স্ট্রীটের বইপাড়ার ঐতিহ্য নিয়ে দেশে বিদেশে কত আলোচনা। সংস্কৃত কলেজ ছেড়ে দিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে এই বইপাড়াতেই খুলেছিলেন বইয়ের দোকান। কিন্তু সেই বইপাড়ার আজ বিবর্ণ, বিষন্ন চেহারা। কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেসিডেন্সি কলেজের শেষ মাথা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে তো বটেই অলিতে গলিতে শুকোচ্ছে রবীন্দ্রনাথ থেকে শরৎচন্দ্র। সঙ্গে অজ¯্র টেক্সটবুক। অনেক বইয়ের পৃষ্টা এমনভাবে জলে আটকে গিয়েছে যে সেগুলিকে কোনভাবেই আর ব্যবহার করা যাবে না। আম্পানের ঝড় ও প্রবল বর্ষণে বইপাড়ার সব দোকানের নীচের তলা জলে ডুবে গিয়েছিল। আগে থেকে ব্যবসায়ী ও প্রকাশকরা লকডাউনের কারণে আসতে না পারায় বইগুলিকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার পর গত সোমবার কিছু দোকান খুললেও আজ মঙ্গলবার থেকে কলেজ স্ট্রীট বইপাড়ার সব দোকান খুলেছে। বিকিকিনির চেয়ে এখন ক্ষতির পরিমাপ করার কাজ চলছে। বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশকেরা জানিয়েছেন, লকডাউন এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তাঁরা বিধ্বস্ত। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি রুপি। কলেজস্ট্রীটের বইপাড়ার এই বই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জানা গেছে, ফুটপাতে দোকান চালান এমন ছোট ছোট বই ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদের অনেকের সব পুঁজি জলে ভেসে গিয়েছে। অনেক পুরনো বইয়ের সংগ্রহ চিরদিনের মত হারিয়ে গিয়েছে জলের টানে। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের মতে, কলেজ স্ট্রীট বইপাড়ায় ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি রুপি ছাপিয়ে গিয়েছে। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে জানিয়েছেন, কলকাতার হেরিটেজ হিসেবে চিহ্নিত বইপাড়ার পুনরুজ্জীবনে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে তারা চিঠি লিখেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের কাছে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বড় ধরণের আর্থিক সহায়তা ছাড়া বইপাড়াকে বাঁচিয়ে তোলা অসম্ভব। গিল্ড ইতিমধ্যে ১০ লক্ষ রুপি দিয়ে একটি রিলিফ ফান্ড তৈরি করেছে দুঃস্থ বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশকদের সাহায্যের জন্য। বইপাড়ার সঙ্গে নাড়ির টান রয়েছে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সকলের কাছে সাহায্য পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে।