× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২০, শুক্রবার

ইউনাইটেড হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে টিনশেডের একটি ঘর। হাসপাতালের মূল ভবনের সঙ্গেই এটি। এই ঘরটি ইউনাইটেডের করোনা ইউনিট। আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে ঘরটি। পুরো কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে আছে ভাঙা গ্লাস, পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্র, ছাই। টিন দিয়ে ও পাটের বস্তা টানিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এটি। ভয়াবহ অগ্নিকা-ে এখানেই প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ জন রোগী। করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তারা।
সুস্থ হয়েও উঠেছিলেন দু’জন। কিন্তু বাড়ি ফেরা আর হয়নি। করোনা প্রাণ কাড়তে না পারলেও আগুন তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।  এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় করোনা ইউনিটে ওই পাঁচ জন রোগী ও কয়েক নার্স ছিলেন। দায়িত্বরতদের কেউ কেউ ইউনিট ছেড়ে গেছেন। অন্যরা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাত ১০টায় নতুন শিফট শুরু হবে। নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা পরিবর্তন হবেন। এরমধ্যেই একটা বিকট শব্দ। হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, প্রথমে একজন গাড়ি চালক চিৎকার করে জানান, আগুন লেগেছে, আগুন। করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারীরা দ্রুত সেখান থেকে সরে যান। করোনা ইউনিট হওয়ার কারণে ভয়ে রোগীদের উদ্ধার করতে স্বপ্রণোদিতভাবে কেউ চেষ্টা করেননি। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে যায় ওই ইউনিটে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর  দেবাশীষ বর্ধন বলেন, যে পাঁচজন মারা গেছেন তারা সানসেটের ঠিক নিচে ছিলেন। আর বাইরে একটা এক্সটেনশন আছে টিনশেডের। অস্থায়ীভাবে তৈরি ওই ইউনিটের পার্টিশনগুলো পার্টেক্সজাতীয়, যা অতিদাহ্য।
এই ঘরটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, আগুন যখন লেগেছে তাৎক্ষণিকভাবে একসঙ্গে পুরোটায় লেগে গেছে। এ কারণে এজন রোগীও বের হতে পারেনি। তাছাড়া, করোনা রোগীর আশপাশে সাধারণত কেউ থাকেন না। ওখানে ওই পাঁচজন রোগীই চিকিৎসাধীন ছিলেন। যখনই আগুন লেগেছে তখন তারা আর বের হতে পারেনি। অগ্নিকা-ের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, হয়তো ইলেক্ট্রিক কোনো কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অগ্নি নির্বাপনের জন্য হাসপাতালের নিজস্ব কোনো কর্মী ছিলো না। এমনকি হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলোর বেশিরভাগ অকেজো ছিলো। সেইসঙ্গে অপরিকল্পিতবাবে ভেতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ রাখা ছিল। প্রাথমিক অগ্নি নির্বাপনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবং বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে এসিগুলো নেগেটিভ প্রেশারে ছিল বলো ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান।
ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। পরিদর্শন শেষে পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, এখনো বলা যাচ্ছে না কোন সূত্রের ভিত্তিতে আগুন লেগেছে। ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিট বা কেমিক্যাল থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তিনি জানান, ভষ্মিভূত স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার জাতীয় প্রচুর পরিমানে কেমিক্যাল ছিলো। এই থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার রাতের এই অগ্নিকা-ের পর থেকে রাতভর সেখানে দাযিত্ব পালন করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তরসিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুুল ইসলাম ৷   বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাসপাতালের নিজস্ব ফায়ার ফাইটার টিম থাকলে এ দুর্ঘটনা হতো না। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বর্ধিত আইসোলেশন সেন্টারে ১১টি অগ্নিনির্বাপকের মধ্যে নয়টি মেয়াদ ছিল না। হাসপাতালে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও পরিচালনার করার নির্ধারিত লোক ছিলো না। তারপরও যারা ছিল তারা করোনা রোগীর ভয়ে ভেতরে যায়নি। এ দুর্ঘটনায়র তদন্ত সাপেক্ষে অগ্নিকা-ে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতি পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মেয়র। এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে এই কমিটি।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী জানান, সকালে আগুনে নিহতের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে গুলশান থানায়।  করোনা ইউনিটে নিহত পাঁচজনের তিন জনই ছিল করোনা রোগী। এ কারণে চারজনকে এরইমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হয়েছে।  আরেকজনের লাশ নেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে। ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, করোনা আইসোলেশন ইউনিটে প্রচুর স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থ ছিল। এতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এক রোগীর স্বজন ৯৯৯ এ ফোন করে আগুনের খবর দেয়।  পরে ভাটারা থানা পুলিশ বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসে জানায়। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রন করে বলে জানান তিনি।
বুধবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। প্রায় আধাঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ছিলেন। তারা সবাই হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে ছিলেন। বুধবার রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, অগ্নিকা-ের নিহতরা হচ্ছেন, রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরুন এন্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহাবুব (৫০)। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে। ওই সময় আবহাওয়া খারাপ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই পাঁচজনকে নিরাপদে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর