সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চালাতে হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
শুক্রবার বিআরটিএ কার্যালয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকের শুরুতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আসন খালি রেখে গণপরিবহন চালানোর কথা বলা হলেও পরে অর্ধেক আসন খালি রাখার পক্ষে মত আসে।
বৈঠকের শুরুতে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংক্রমণকে আরো বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হল- এই সমালোচনার জবাব আমাদের দিতে হবে। আমরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল। আমাদের পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও জড়িতরা আগেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। এখন আমরা একটি পরীক্ষার মুখোমুখি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার আস্থা রাখবেন।
চালক-শ্রমিক-সহকারীদের কাউন্সেলিং করতে হবে। নিয়ম অমান্য করলে শাস্তির বিধান রাখা হবে, বিআরটিএ সক্রিয় থাকবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে, সেক্ষেত্রে দুই সিটের মধ্যে এক সিট বাদ দিতেই হবে। গ্রাম থেকে যখন একসঙ্গে আসবে, তখন অনেকেই পাশাপাশি বসতে চাইবে। সে ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ হলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
বৈঠকে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুলও বলেন, সামাজিক দূরত্ব রাখতে হলে ৫০ শতাংশ যাত্রী রাখতে হবে। পরে পরিহন মালিক, শ্রমিক নেতাদের প্রস্তাব এবং বৈঠকে উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে বৈঠকের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অর্ধেক সিট খালি রেখেই গাড়ি ছাড়তে হবে।
বাস ভাড়া দ্বিগুণ করার ভাবনা
বিআরটিএর বৈঠকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হলেও মালিকপক্ষের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শনিবার বিআরটিএ ও বাসমালিক সমিতির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভাড়া নির্ধারণের জন্য বিআরটিএর একটি কমিটি রয়েছে। সে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তিসঙ্গত ভাড়া চূড়ান্ত করতে হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ বৈঠকে বলেন, যাত্রী যেহেতু অর্ধেক নেয়া হবে, সেই ক্ষেত্রে ভাড়া দ্বিগুণ করে দিলেই হল। এটা নিয়ে কালকে আবার আলাদা বৈঠকের দরকার কি? এ সময় অন্য মালিকরাও এনায়েত উল্লার কথায় সায় দেন। এ সময় সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, এই প্রস্তাব আমরা নিচ্ছি, তবে সিদ্ধান্ত শনিবার সকালেই হবে। কারণ যেহেতু একটি কমিটি আছে, আমরা তাদের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত জানাব।
সব মালিকরাই বাস ছাড়বে
দেশের বেশির ভাগ কোম্পানিতে একাধিক মালিকের বাস থাকায় বাস সীমিত আকারে ছাড়ার বিষয়টি কার্যকর করা যাবে না বলে মত দিয়েছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। বৈঠকে মালিকদের একজন বলেন, কোনো মালিকের কিছু বাস ছাড়বে আর কিছু মালিক বাস ছাড়বে না, এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। পরে সব মালিকই এই প্রস্তাবে সমর্থন দেন।
সচিব বলেন, গাড়ি ছাড়ার বিষয়ে ৩০ শতাংশের বিষয়টি কাজ করবে না, এটা কঠিন হবে। মালিকরা পরিবহন শ্রমিকদের মাস্ক বিতরণ করলেও যাত্রীদের মাস্ক তাদের নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে বৈঠকে ১১ সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হল-
>> স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
>> বাস টার্মিনালে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা গাড়ির লাইনে দাঁড়াবেন ও টিকেট কাটবেন।
>> স্টেশনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে পর্যাপ্ত।
>> বাসে কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না।
>> বাসের সব আসনে যাত্রী নেওয়া যাবে না। পরিবারের সদস্য হলে পাশের আসনে বসানো যাবে।
>> যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টারের কর্মী সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
> > ট্রিপের শুরু ও শেষে বাধ্যতামূলকভাবে গাতির ভেতরেসহ পুরো গাড়িতে জীবাণুনাশক ছিটাতে হবে।
>> যাত্রী উঠা-নামার সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। >> চালক ও কন্ডাক্টরদের একটানা কাজ করানো যাবে না। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোয়ারেন্টিন বা বিশ্রাম দিতে হবে। >> মহাসড়কে চলাচলে পথে থামানো, চা-বিরতি পরিহার করতে পারলে ভালো
>> যাত্রীদের হাতব্যাগ, মালামালে জীবাণুনাশক ছিটাতে হবে।