লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গতকালই রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। অন্যদিকে সবকিছু সীমিত আকারে খুলছে রোববার থেকে। এ অবস্থায় ঝুঁকি আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও করোনা জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য মোশতাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, গণপরিবহন থেকে শুরু করে সবকিছু খুলে দেয়াটা খুবই শঙ্কিতভাবে দেখছি। ঈদের পর অনেক স্যাম্পল জমা হয়েছে। কিন্তু শনাক্ত করার হার হচ্ছে যত টেস্ট করা হচ্ছে তার সর্বোচ্চ শতকরা ২২ ভাগ পজিটিভ হয়েছে। এর আগে ২০ থেকে ২১ ভাগ ছিল।
এখন ২২ ভাগ। এক্ষেত্রে আমাদের জরুরি কাজকর্ম করার জন্য আরো কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো খোলার দরকার হতে পারে। একেবারেই নিয়ন্ত্রিতভাবে। এবং একটি প্রতিষ্ঠান দেখে আমরা আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলতে পারি। উদাহরণ তো আছেই। হাসপাতাল চলছে। গণমাধ্যম চলছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন এগুলো চলছে। কাজেই এ নিয়মে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। সকল কর্মী এক জায়গায় যাবে সেখানে তারা কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনটেন করবে। কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখবে। সাবান দিয়ে হাত ধোবে কীভাবে। প্রবেশের রাস্তা যদি একটি হয় কীভাবে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করবে। কাজেই কারখানা খোলার মতো গণপরিবহন যে কারণেই খোলা হোক। হয়তো চাপ আছে। অর্থনৈতিক চাপ আছে। সেই চাপটাকে আমাদের সামলাতে হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষকে সামাজিক সহায়তা দিতে হবে। যেন তাদের প্রতিদিন খাবারের জন্য ঘরের বাইরে আসতে না হয়। এবং অন্যান্য অফিস আদালতে যারা আছেন তাদের পর্যায়ক্রমে সংক্রমণটা কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সংক্রমণ কমানোর জন্য কিন্তু সক্রিয় কোনো কার্যক্রম নেই। রোগীরা নিজেরাই হাসপাতালে আসছে। যাদের খুবই খারাপ অবস্থা। কিন্তু মৃদু লক্ষ্মণযুক্ত অধিকাংশ রোগী নিজেরা শনাক্তই হচ্ছেন না। যারা নিজ উদ্যোগে শনাক্ত হচ্ছেন তারা অধিকাংশ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরো অনেক রোগী আছেন যারা করোনা নিয়ে ঘোরাফিরা করছেন। তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মহামারি কিন্তু কমবে না। এটা আপনাআপনি ডায়রিয়া রোগের মতো বাড়তে বাড়তে কমে যাবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে এখনো অধিকাংশ এলাকায় এ রোগ তেমন ছড়ায়নি। যদি ছড়াতে দেই তাহলে তো বছর পার হয়ে যাবে। যেখানে যেখানে সংক্রমিত রোগী আছে তাদের ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা, সামাজিক সহায়তা করে আলাদা করে ফেলতে হবে। সবার টেস্ট করা হয়তো সম্ভব হবে না। কমিউনিটিতে জ্বর পেলেই তাদের আলাদা করে ঘনবসতি এলাকার লোকদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এতে করে রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। একজনের থেকে আরেকজনের কাছে রোগটি ছড়াবে না। এই রোগ ছড়ানো বন্ধ করতে শুধুমাত্র লকডাউনে হবে না। পাশাপাশি রোগী শনাক্ত করে সংক্রমণের উৎসটা আমাদেরকে কমাতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা ফিরতে পারবো ধীরে ধীরে।