করোনা সংক্রমণে ঢাকার পর দ্বিতীয় হটস্পট ছিল নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু সেই নারায়ণগঞ্জকে পেছনে ফেলে এখন দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ২ হাজার ৮৬৭ জন। আর নারায়ণগঞ্জে ২ হাজার ৫৩২ জন।
রোববার দুপুরে এ পরিসংখ্যানের কথা জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে অসচেতনতার কারনে চট্টগ্রামে রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা।
তিনি জানান, চট্টগ্রামে প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। ওই মাসের শেষ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত ছিল ৭৩ জন।
কিন্তু রমজানের শুরু থেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ভেঙে পড়ায় মে মাসে এসে হু হু করে বাড়তে থাকে করোনা সংক্রমিত রোগী। যা আজ ৩১ মে রোববার পর্যন্ত এ সংখ্যা ২ হাজার ৮৬৭ জনে পৌছেছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ২১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭৯ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের ১৮০ জন ও উপজেলা পর্যায়ে ৯১ জন রয়েছেন। যা এ যাবতকালে একদিনে সংক্রমিত শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
নতুন শনাক্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শফিউল আলম রয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ২২, ২৩, ২৫ এবং ২৮ বছর বয়সী আরও চার কারারক্ষী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
সেখ ফজলে রাব্বি জানান, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ২৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ১২০ জনের করোনা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগর এলাকার ১১১ জন আছেন। বাকি ৯ জন বিভিন্ন উপজেলার।
বিআইটিআইডিতে ৮১৬টি পরীক্ষা করে ১১৬ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনাক্তদের মধ্যে ৬৭ জন নগরের ও ৪৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
সিভাসুতে ১৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪২ জনের করোনা মিলেছে। এর মধ্যে ২ জন নগরের ও ৪০ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ৫ জনের পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় নতুন শনাক্ত ৯১ জনের মধ্যে লোহাগাড়ার ৩ জন, সাতকানিয়ার ১ জন, বাঁশখালীর ৫ জন, আনোয়ারার ১ জন, চন্দনাইশের ১৩ জন, পটিয়ার ৬ জন, বোয়ালখালীর ৫ জন, রাঙ্গুনিয়ার ১ জন, রাউজানের ৫ জন, ফটিকছড়ির ২ জন, হাটহাজারীর ৩৪ জন, সীতাকুন্ডের ১৪ জন ও মিরসরাইয়ের ১ জন আছেন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৬৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ২১৭ জন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের প্রায় একমাস পরে করোনা সংক্রমণ শুরু হয় চট্টগ্রামে। কিন্তু সংক্রমণ শুরুর প্রথম মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দ্বিতীয় মাসে চট্টগ্রামে করোনার বিস্ফোরণ ঘটে। করোনা সংক্রমণে দেশে এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা চট্টগ্রাম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত চলাচল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় উন্মুক্ত থাকায় চট্টগ্রামে করোনার বিস্তার ঘটছে দ্রুত। ঈদের ছুটি শেষে মানুষ নগরে ফিরতে শুরু করায় এ পরিস্থিতির আরও মারাতœক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।