দু’মাসের বেশি সময় ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটকে থাকা ২৬২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং দুবাইস্থ কনস্যুলেটের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া করা স্পেশাল ফ্লাইটে ফিরেছেন তারা। রোববার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৪ টায় দুবাই ফেরত ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে বলে নিশ্চিত করেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টের উপ-মহা ব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার।
এদিকে ওই বিশেষ ফ্লাইটে ফেরা চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম মানবজমিনকে বলেন, প্রায় ৩ মাস পর নিজের জন্মমাটিতে ফিরতে পারলাম। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। তবে দেশে ফিরতে দূতাবাস এবং বিমানের কর্মীরা যে কষ্ট দিয়েছে তা কোনদিন ভুলতে পারবো না। মিস্টার আলম বলেন, বিজনেস অপরচুনিটি এক্সপ্লোর করতে ১০ দিন থাকার চিন্তায় ১৩ই মার্চ দুবাই যাই। রিটার্ণ টিকেট করা ছিল ২৩শে মার্চের এয়ার আরাবিয়ায়।
কিন্ত ফ্লাইট বন্ধের কারণে আটকে যাই। সেই থেকে অপেক্ষা, সঙ্গে ভোগান্তি। মঞ্জুর বলেন, দেশে ফেরার জন্য দুবাই কনস্যুলেটে নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য কত জায়গায় যে ধরণা দিতে হয়েছে। কনস্যুলেটের লোকজনকে ফোনে পাওয়া যেনো ছিল এভারেস্ট জয় করার মতো। যাক একটা লাভ হয়েছে, তদবিরে তালিকায় নাম ওঠায় আমি ১৯৪০ দিরহাম ব্যয়ে টিকেটটা পেয়েছি। সরাসরি কিনতে পেরেছি বিমান অফিসের বাইরে ৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। দূতাবাস নির্ধারিত মূল্যে টিকেট পাওয়া সৌভাগ্যবানের তালিকায় থাকা আমরা ৭ জনকে ৩ টা থেকে ৬ অবধি উন্মুক্ত আকাশের নিচে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে বিমানের লোকজন টিকেট বিক্রি করেছেন। বাকী বেশিরভাগ টিকেটই কালোবাজারি, ট্রাভেল এজেন্টের হাতে চলে যায়। তারা সুযোগ বুঝে ২১ শ থেকে ২৬ শ দিরহামে ইকোনমি ক্লাসের প্রতিটি টিকেট বিক্রি করেছে। মানুষও নিরূপায় হয়ে কিনেছে। অথচ স্পেশাল ওই ফ্লাইটে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের তালিকার বাইরে কোন ব্যক্তির অন্তর্ভূক্তি এবং নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামের টিকেট বিক্রির কোনো সুযোগ থাকার কথা ছিল না।
মিস্টার আলম তার অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে কনস্যুলেট এবং বিমান উভয়ের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
হাজারও মানুষ এখনও ফেরার অপেক্ষায়
দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশে ফেরার আশায় দিন গুনছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা হাজার হাজার প্রবাসী এবং দেশটিতে ভ্রমণ ভিসায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। বিশেষ একটি ফ্লাইট এলেও তাতে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে ফিরতে পারেননি। আবুধাবিতে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, স্পেশাল ফ্লাইটে ফেরতে আগ্রহী এমন বাংলাদেশির সংখ্যা খুব কম। তবে দেশে নানা কারণে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী অনেকই আছেন। তারা হয়তো রুটিন ফ্লাইট খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১৯শে মার্চ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বৈশ্বিক ওই মহামারিতে আমিরাতে অনেকেই কর্মহীন, কাজ না থাকায় তারা অন্তত দেশে ফিরলে থাকা খাওয়ায় সমস্যা হবে এই ভেবে সাময়িকভাবে ফিরতে চান। তবে দেশটিতে ভ্রমণে গিয়ে আটকে পড়াও নিতান্ত কম নয় বলে দাবি রাসেল নামের সারজার এক ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, গোটা আমিরাতে ব্যবসায়িক কাজে বা বেড়াতে এসে আটকা পড়েছে এমন বাংলাদেশির সংখ্যা হাজার খানেকের কম হবে না।