× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাসপাতালে আইসিইউ’র জন্য হাহাকার

প্রথম পাতা

শুভ্র দেব
৩ জুন ২০২০, বুধবার

ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা ৪৯ বছর বয়সী বিপ্লব। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। করোনা ও ডেঙ্গু পজিটিভ ছিলেন। বাসায় আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কাশি, প্রচণ্ড বুকে ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে যাওয়াতে রোববার তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্টের পরামর্শ দেন। বিপ্লবের স্বজনরা তখন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে শুরু করে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, হলি ফ্যামেলি হাসপাতালসহ ঢাকার আরো কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করে আইসিইউ’র ব্যবস্থা করতে পারেননি। অবশেষে অক্সিজেনের জন্য বিপ্লবকে এম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিলো।
কিন্তু ততক্ষণে বিপ্লব চলে যান না ফেরার দেশে। কেঁদে কেঁদে তার ভাই পলাশ দাস বলেন, চোখের সামনে আমার বড় ভাই অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্টের জন্য মারা গেলেন। এমন মৃত্যু কীভাবে মেনে নেবো?
শুধু বিপ্লব দাস নয়, ঝুঁকিপূর্ণ করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আসছে। সরকারি-বেসরকারি কোথাও আইসিইউ সেবা মিলছে না। সবক’টি হাসপাতালেই আইসিইউ শয্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর বাইরে ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেন সুবিধাও যথেষ্ট নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র করোনা রোগীদের জন্য যে পরিমাণ আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন তার দশ ভাগও হাসপাতালগুলো দিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকার বড় বড় সরকারি পাঁচটি হাসপাতালে মোট ১০৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এত স্বল্প সংখ্যক আইসিইউ শয্যা দিয়ে বিপুল পরিমাণ করোনা পজিটিভ, উপসর্গ আছে এমন ও অন্যান্য রোগীদের সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি হাসপাতালেই রোগীরা আইসিইউ’র জন্য হাহাকার করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৬২টি। এর মধ্যে ৩০টি নবজাতকের জন্য। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রয়েছে ১০টি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ১১টি, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে ১০টি। এসব হাসপাতালের মোট আইসিইউ শয্যা করোনা পজিটিভ ও সাধারণ রোগীদের জন্য ভাগ করা হয়েছে। সেজন্য করোনা পজিটিভ রোগীরা চাইলেই আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন না। আর বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই সেবা নিতে পারছেন না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা মেডিকেলের দুটি করোনা ইউনিটে ৭৫০ জন রোগীর শয্যা আছে। এর মধ্যে করোনা ইউনিট-১ এ ২৫০ ও করোনা ইউনিট-২ তে ৫০০ জন করোনা রোগীর শয্যা আছে। আর এই শয্যার বিপরীতে আইসিইউ শয্যা আছে মোট ১৬টি। রোগীদের যে পরিমাণ আইসিইউ সাপোর্ট দরকার আমরা সেভাবে পারছি না। শত শত রোগী আইসিইউর জন্য অপেক্ষা করছে। খুব কম রোগীদের ভাগ্য আইসিইউ জুটছে। অনেক রোগী আইসিইউ’র অপেক্ষা করে মারা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, যদিও আইসিইউ সাপোর্ট দিলেই যে রোগী বেঁচে যাবে- এমনটা নয়। কিছু রোগীর অবস্থা এত খারাপ থাকে আইসিইউ সাপোর্ট দিলেও তাদের বাঁচানো সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি রোগীর অবস্থা বুঝে সাপোর্ট দেয়ার। আইসিইউ’র শয্যা আরো বাড়ানো হলে বেশি রোগীদের সাপোর্ট দেয়া যেতো।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখনো করোনা পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। করোনার উপসর্গ নিয়ে ৫২ জন রোগী ভর্তি আছেন। তবে আমরা ১৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য একটি ওয়ার্ড তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই রোগীদের জন্য তিনটি আইসিইউ শয্যা রাখা হবে। দেড়শ’ করোনা শয্যার বিপরীতে তিনটি আইসিইউ শয্যা অপ্রতুল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে মোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১০টি।  রোগীর তুলনায় এটি খুব কম। করোনা রোগীর বাইরে সার্জারির রোগী, সড়ক দুর্ঘটনার রোগীসহ আরো অনেক ক্রিটিক্যাল রোগীর জন্য আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হয়। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেক রোগী আসে। যাদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, চাইলেই আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ আইসিইউ শয্যা বাড়াতে হলে প্রস্তাবনা, সরকারি বিধিমালা, ক্রয় ও দক্ষ জনবলের দরকার হয়। আমাদের ডিমান্ড বাড়ছে যেভাবে সে তুলনায় সাপ্লাই দিতে পারছি না।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদুন্নবী বলেন, ৯০০ রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের হাসপাতালে আছে। তবে বর্তমানে করোনা পজিটিভ, উপসর্গ ও অন্যান্য রোগী মিলিয়ে ৩৭৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। আমরা করোনা রোগীদের জন্য ৫টি আইসিইউ শয্যা ও ৫টি ভেন্টিলেশন আলাদা করে রেখেছি। এর বাইরে অন্যান্য রোগীদের জন্য আরো ৬টি আইসিইউ শয্যা রাখা হয়েছে। কারণ করোনা পজিটিভ ও অন্য রোগীদের একসঙ্গে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, আইসিইউর চেয়ে অক্সিজেন সাপোর্টটা বেশি প্রয়োজন। অক্সিজেনের যোগান বাড়াতে হবে। আর রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার না হলে হাসপাতালে আসার দরকার নেই। তারা আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়াই ভালো। তাহলে জেনুইন রোগীরা চিকিৎসার সুযোগ পাবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ৫০০ শয্যার হাসপাতালে সব ধরনের রোগী মিলিয়ে সাড়ে তিনশ’ রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। এদের জন্য ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। আমাদের আরো অনেক বেশি আইসিইউ শয্যা দরকার। কিন্তু আইসিইউ চালানোর মতো দক্ষ জনবলসহ আরো কিছু সমস্যার জন্য বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সে জন্য আমরা ওয়ার্ডের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর