× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যন্ত্রণায়-হতাশায় গাজীপুরের করোনা আক্রান্ত পরিবার

বাংলারজমিন

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে
৪ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার

গাজীপুরের অনেক লোকজন করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে গিয়ে ও নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে চরম বিড়ম্বনায় রয়েছেন। এর দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে কেউ কেউ হারিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে। আর জটিলতায় পড়ে কারো কারো জীবন সংসারের ভয়াবহতা দীর্ঘতর হচ্ছে। জেলা শহরের এক পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানসহ চারজন কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। পজিটিভ থাকার পর তাদের পরবর্তী নমুনা নেয়া হয়েছে ১০ দিন আগে গত ২১শে মে। গত ২রা জুন করোনা আক্রান্ত ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান, রিপোর্টের জন্য কয়েকদিন বারবার গাজীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা চিকিৎসক ফোন দিতে দিতে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. শাহিন তাকে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে পজিটিভ তালিকায় তাদের নাম নেই। কিন্তু নেগেটিভ তালিকায় তাদের আছে কিনা, সে বিষয়েও ওই চিকিৎসক কর্মকর্তা স্পষ্ট জানাতে পারেননি।
ওই কর্মকর্তা নাকি করোনা আক্রান্ত ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানকে জানিয়েছেন, নেগেটিভ তালিকা এখনো আসেনি। আগের সুস্পষ্ট রিপোর্ট পাননি আবার তাদের পরবর্তী নমুনা নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। এই অবস্থায় ওই পরিবারটির সবাই চরম হতাশা ও মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছেন। গোটা পরিবার এক মাস ধরে ভয়াবহ অবস্থায় মধ্যে করোনার সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। করোনা পজিটিভে থাকা মাহবুবুর রহমানের মেয়েটি অবশ্য এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এসএসসি রেজাল্ট পেলেও ১০ দিনেও করোনার দ্বিতীয় নমুনার রিপোর্ট না পেয়ে পড়েছে চরম হতাশায়। লকডাউনে ঘরে বন্দি বিভীষিকাময় জীবনে বারবার শুধু চোখের পানি ফেলছেন ওই তরুণী। করোনায় আক্রান্ত মাহবুবুর রহমান মনে করছেন, একজন সংবাদকর্মীর দ্বারস্থ হলে হয়তো নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের বিষয়ে সহযোগিতা পাবেন। শুধু মাহবুবুর রহমানই নন, এরকম অনেক মানুষই নানা ভোগান্তির বিষয় তুলে ধরছেন।
নগরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুন্নাহার খন্দকারের ছেলে করোনা পজিটিভ মোনায়েম খন্দকার জানান, গত ২৫ তারিখ তার দ্বিতীয় নমুনা নেয়া হয়েছে। এর রিপোর্ট পেয়েছে। কিন্তু আজ অবধি তৃতীয় নমুনা নেয়ার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী রহিজা আফসানা জানান, তার এক বন্ধুর মা জ্বর এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন। এক সপ্তাহ ধরে নমুনা সংগ্রহকারীরা আসি আসি করে সময় কাটিয়ে দেয়। এরপর একজন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নমুনা দেয়া হলেও নমুনা নেয়ার পরদিন ওই নারী মারা যান। আফসানা প্রশ্ন তুলেছেন, এই মৃত্যুর দায় আমরা কাকে দেবো।
মাহবুবুর রহমানের নমুনা দেয়া এবং রিপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি জেলার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটির যিনি মূল দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি নমুনা সংগ্রহের তারিখ এবং নমুনা দাতাদের নাম ইত্যাদি বিস্তারিত জানতে চেয়ে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু মাহবুবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি যদি আজকে রিপোর্ট বা আর পরবর্তী কোনো তথ্য না পান, তাহলে স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধ্য হবেন। কেননা করোনার কোনো লক্ষণই এখন আর তাদের নেই। তিনি আর কোনোভাবেই দীর্ঘদিনেও রিপোর্ট না পেয়ে আর ধৈর্য ধরতে, ঘরে বন্দি থাকতে চাচ্ছেন না। প্রশ্ন হলো- এখনো যদি তাদের পরিবারের কারো মধ্যে ভাইরাস পজিটিভ থাকে, আর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে থাকেন, সেক্ষেত্রে তাদের মাধ্যমে কেউ সংক্রমিত হলে এর দায় কে নেবেন? এ বিষয়ে আইনবিদ ব্যারিস্টার কামরুল ইসলাম হৃদয় বলেন, এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোনোভাবেই তার দায় এড়াতে পারে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে দেশব্যাপী প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বাড়বে। ইউএনডিপির দেয়া তথ্যমতে করোনা সুরক্ষায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। সরকারের উচিত অতিদ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, অন্যথায় এই মহামারি রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলেও তিনি মনে করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর