× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘মন’ ভালো নেই কামরান-আরিফের /করোনার সঙ্গে লড়ছে আসমা ও শ্যামা হক

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩ জুন ২০২০, বুধবার

করোনাকালে ঘরেই ছিলেন তারা। স্বামীরা বাইরে জনসেবায় ব্যস্ত। অভুক্ত থাকা মানুষের মুখে খাবার দিতে ছুটে চলেছেন 
। আর ঘরেই থেকেই তারা সামাল দিচ্ছিলেন সব কিছু। রান্না করে খাবার পাঠিয়েছেন হাসপাতালে। আবার রান্না করা ইফতার ও ঈদের খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়েছেন অসহায়দের হাতে। কিছুটা নির্ভার ছিলেন তারা। হয়তো করোনা তাদের কাছাকাছি আসতে পারবে না।
কিন্তু হলো বিপরীত। স্বামীরা সুস্থ। মহামারী করোনা ‘অ্যাটাক’ করলো ঘরে। আক্রান্ত হলেন তারা। এখন এক ঘরে বন্দি তারা। নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। একজন হলেন আসমা কামরান। সিলেটের সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী তিনি। নিজেও একজন নারী নেত্রী হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি সিলেট মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। আরেকজন হলেন শ্যামা হক চৌধুরী। সিলেটের বর্তমান মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। দুই স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় মন ভালো নেই কামরান ও আরিফের। আপাতত জনসেবাকে দুরে রেখে তারা হয়েছেন ঘরমুখী। পরিবারের দিকে নজর দিয়েছেন তারা। করোনাকালীন সময়ে সিলেটে সরব ছিলেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। প্রায় দুই মাস তিনি খাদ্য দ্রব্য বিতরনে ছিলেন ব্যস্ত। নিজের উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক মানুষকে করেছেন সহায়তা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে তাকে প্রতিদিন কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছে। সব কিছু উপেক্ষা করে কামরান মানুষের পাশে দাড়িয়েছিলেন। তিনি গত দুই মাস বাসা থেকে বের হননি। ঘরই সামলাচ্ছিলেন। পাশাপাশি ঘরে থেকে তিনি মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ঘরের তৈরী ইফতার সামগ্রী সাধারণ মানুষের কাছে বিতরন করেছেন। ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আরমান আহমদ শিপলু। গোটা মাসই ঘরের তৈরীর ইফতার পাঠিয়েছেন সিলেটের করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। আসমা কামরান নিজ হাতে প্রতিদিন ওই সব ইফতার সামগ্রী তৈরী করে দিয়েছেন। ঈদের দিন কামরান নিজ বাড়িতে সাধারন মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার পরিবেশন করেন। ওই খাবার তৈরি করেন আসমা কামরান। ঈদ পরবর্তী সময়ে কিছুটা জ্বর জ্বর ভাব ছিলো আসমা কামরানের। এ কারনে পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বামী কামরান সহ তিনি করোনার জন্য নমুনা দেন। ২৭ শে মে এলো রিপোর্ট। করোনা পজিটিভ আসমা কামরানের। বাসার পরিবেশ বদলে গেলো। মহামারী এসে আঘাত হেনেছে কামরানের ঘরে। কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েন কামরান। বাধ্য হয়ে ডাক্তারের পরামর্শে স্ত্রী আসমা কামরানকে একঘরে করেন। এখন কিছুটা সুস্থ আসমা কামরান। ডা. ছেলে শিপলু তার শারীরিক অবস্থার খবর নিচ্ছেন। গতকাল শিপলু মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তার মায়ের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। জ্বর ছিলো শরীরে। কমে এসেছে। এখন স্বাভাবিক। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে আবার করোনা টেস্ট করাবেন। আশা করা যাচ্ছে ফলাফল নেগেটিভ আসবে। এদিকে- স্ত্রীর অসুস্থতায় কামরানের মন ভালো নেই। নিজেরও বয়স হয়েছে। এই সময়ে স্ত্রীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তিনি। জানালেন- ‘আমার সব সামলাচ্ছে আসমা কামরান। সে নিজ থেকে সব সামলায়। গোটা পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বাসায় আসা মানুষ জনকে দেখভাল করে সে। তার এই অসুস্থতায় মন ভালো নেই। এরপরও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা- আসমা যেনো দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।’ তিনি স্ত্রীর সুস্থতার জন্য সিলেটবাসীর কাছে দোয়া চান। করোনাকালীন সময়ে সিলেটে ফ্রন্টলাইনের যুদ্ধা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সবাই যখন ঘরে তখন তিনি বাইরে। সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে লক্ষাধিক মানুষকে ত্রান দেওয়া হয়েছে। এই ত্রান বিতরনে দিনকে রাত করেছেন মেয়র আরিরুল হক চৌধুরী। ঘরে বৃদ্ধা মা। তাকে নিয়েই তার সব দুশ্চিন্তা। এরপরও সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি মানুষের পাশে ছিলেন। ত্রাণ বিতরণে চষে বেড়িয়েছেন গোটা নগর। রমজানেও ছুটি নেই। নগর ভবনের কার্যক্রমও স্বাভাবিক রাখছেন। সিলেটের কভিড চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এই যখন অবস্থা তখন এক সপ্তাহ আছে হঠাৎ করে দুঃখের খবর আসে আরিফের কাছে। তিনি সহ তার সহকারী কয়েক জনের করোনা টেস্টের জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সহকারী ইমনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এতে করে থমকে যান আরিফ। বাসায় আবদ্ধ হয়ে পড়েন। নিজের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় হাল ছেড়ে বাচেন। ওদিকে- ঘর সামলাচ্ছিলেন স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী। ঘরে থাকা বৃদ্ধা শাশুড়িকে তিনি দেখভাল করছিলেন। পাশাপাশি ঘর, আত্মীয় স্বজন ও বাসায় আসা মানুষদের সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কোনো উপসর্গ ছিলো না তার। এরপরও সাবধানতাবশত ২রা জুন করালেন করোনা টেস্ট। মঙ্গলবার রাতে রিপোর্ট এলো পজিটিভ। থমকে গেলো আরিফের পরিবারও। সিলেট সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম তাদের পারিবারিক স্বজন। তিনি খবর জানলেন শ্যামা হকের। এরপর নিজেই গিয়ে শ্যামা হককে এক ঘরে আইসোলেশনে রাখলেন। সুস্থ আছেন শ্যামা হক চৌধুরী। কোনো উপসর্গ নেই। এরপরও তাকে কভিড স্বাস্থ্য বিধি মোতাবেক থাকতে হচ্ছে। আরিফের বাসায় আছেন তার বৃদ্ধা মা। তাকেও আলাদা করা হয়েছে। আরিফুল হক চৌধুরীও এখন আইসোলেশনে। আরিফুল হক চৌধুরীর বাসার গেইটম্যান শাহীনেরও করোনা পজিটিভ এসেছে। তাকেও রাখা হয়েছে আইসোলেশনে। গতকাল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানালেন- স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী সুস্থ আছেন। ডাক্তারের পরামর্শে আছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে- সিলেটের করোনা পরিস্থিতি এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে তিনি চিন্তিত। জানালেন- ‘সিলেটের করোনা পরিস্থিতি সামলাতে চিৎকার করেছি। মাঠে একা লড়াই করেছি। কেউ কথা শুনেনি। এখন আবার সব খোলা।’ তিনি বলেন- সবচেয়ে বেশি চিন্তিত স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে। কারন- এখনো সিলেটে শামসুদ্দিনের বিকল্প কোনো হাসপাতাল নেয়া হয়নি। দ্রুত সিলেটের একটি বেসরকারিকে হাসপাতালে কভিড চিকিৎসা শুরু করার দাবি জানালেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর