× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে ওরা

বাংলারজমিন

হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
৬ জুন ২০২০, শনিবার

চর শাহজালাল। ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের একটি বিচ্ছিন্ন এলাকা এটি। যেখানে প্রায় ৭০টি পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যার দিক দিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক। উপজেলার গজারিয়া খালগোরা এলাকা থেকে ট্রলার যোগে এ চরে পৌছাতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টার মত। মূল ভূখন্ডের বাসিন্দাদের থেকে জীবন যাত্রায় অনেকটা পিছিয়ে এখানের বাসিন্দারা। এদের মাঝে নেই তেমন কোনো সচেতনতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এ চরের বাসিন্দাদের নিয়ে ভাবে না কেউ।
তাই প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে তারা। প্রকৃতির সকল আঘাতও তাদের নিতে হয় মাথা পেতে। বিচ্ছিন্ন কথার সাথে তাদের সত্যিই একটা মিল রয়েছে। তারা বিচ্ছিন্ন সরকারী অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে। যেমনটা এ চরের স্বাস্থ্য সেবা। আজ পর্যন্ত এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ আসেনি। তাই সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করেই সব কিছু মেনে নেন তারা।
সন্তান সম্ভাব্য নারীদের দুর্ভোগ এখানে অনেক বেশি। নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে তেমন কোনো ধারণা না থাকায় সন্তান প্রসবের সময় চর শাহজালালের মায়েরা থাকেন অত্যান্ত ঝুঁকিতে। এমনকি সামান্য ডায়েরীয়া অথবা জ্বর হলেও চরের বাসিন্দাদের দিন কিংবা গভীর রাত নেই, পাড়ি দিতে হয় উত্তাল তেঁতুলিয়া নদী। যেতে হয় লালমোহন অথবা চরফ্যাসন উপজেলা সদরে। নবজাতক শিশুদের পরিচর্যার বিষয়েও নেই এ চরের মায়েদের তেমন অভিজ্ঞতা। তাই অপুষ্ট আর রোগবালাই নিয়ে বেড়ে উঠছে এ চরের শিশুরা।
অন্যদিকে চর শাহজালালে কোনো প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পরিবারের সদস্যদের সাথে শিশুরা ছোট বেলা থেকেই বেড়িয়ে পরে মাছ শিকারে। যার ফলে তারা গ্রহণ করতে পারছে না নূন্যতম শিক্ষা। তাই অক্ষর জ্ঞানই রয়ে যাচ্ছে এ চরের শিশুরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম। চর শাহজালালের বাসিন্দাদের একমাত্র উপজর্নের উৎস কেবল মাছ শিকার-ই।
এছাড়াও চরের বাসিন্দাদের ঝড়-বন্যায় তাদের এখানে থাকতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নদীতে সামন্য পানি বৃদ্ধি পেলেই বসত ঘরে পানি ওঠে হয়ে যায় টইটুম্বুর। ঘরের চুলায় রান্না বন্ধ থাকে কয়েকদিন। তবুও প্রতিদিন প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে তারা।
চরের বাসিন্দা আব্দুল অহিদ, লাল মিয়া, আবুল কালাম ও সবুজ বলেন, কোনো চেয়ারম্যান-মেম্বার আমাদের খবর নেয় না, আমরা বেঁচে আছি কিনা বেঁচে নেই। বন্যা আসে, বন্যা যায় তবুও আমাদের কেউ খবর নেয় না। বন্যার খবর আসলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। হয়তো এ বন্যায়ই আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে পানিতে। এখানে একটি মুজিব কিল্লা থাকলেও তা দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে মাটির সাথে পিষে গেছে। অন্যদিকে আমাদের ছেলে মেয়েদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা নেই এখানে। তাই সরকারের কাছে দাবী ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে ওই মুজিব কিল্লাটি সংস্কার অথবা নতুন করে একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়ার। এছাড়াও চরের শিশুদের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করার।
নিজেদের নানান সমস্যার কথা জানিয়ে চর শাহজালালের গৃহবধূ শারমিন, ইয়ানূর, রেশমা ও মুক্তা বলেন, গর্ভকালীন সময়ে নিজেদের যত্নের বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা না থাকায় স্থানীয় মহিলাদের দিয়েই সন্তান প্রসব করাতে হয়। এরপর জন্ম নেয়া শিশুদের পরিচর্যার জন্যও স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে কোনো জ্ঞান না থাকায় শিশুরাও রোগবালাই নিয়েই বেড়ে ওঠছে। তাই আমরা দাবী করছি চর শাহজালালে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করার। যেখান থেকে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানতে পারবো।
পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফের কাছে চর শাহজালালের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ওই চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘব করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যা খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, আমি নিজে গিয়ে ওই চর পরিদর্শন করেছি। সেখানে তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। এদের প্রধান সমস্যা লাঘবে স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য স্কুল স্থাপনের দাবী জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কাছে লিখবো। এছাড়াও ঘূর্ণিঝরে চরবাসীকে নিরাপদে রাখার জন্য যে মুজিব কিল্লা রয়েছে তা দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর