× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লেন্স মানে তেলের পিঠা

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
২৬ জুন ২০২০, শুক্রবার

ক্লাসে পড়ানাে হচ্ছিল- লেন্স কি? শিক্ষক দীর্ঘক্ষণ ছাত্র-ছাত্রীদের এ নিয়ে বুঝালেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেন- তােমরা বুঝেছ? সবাই চুপ। কিছুক্ষণ পর এক ছাত্র বলল, স্যার আমি বুঝিনি। স্যার আবার বলতে লাগলেন- তুমি কি তেলের পিঠা দেখেছ? জ্বি স্যার। শিক্ষক আবার বলতে লাগলেন, তেলের পিঠা গােল । মাঝখানে উঁচু। অর্থাৎ মাঝ থেকে নেমে আসতে আসতে গিয়ে ঠেকেছে শেষ মাথায়। আর তেলের পিঠা বানাতে লাগে চালের গুড়ি আর চিনি।
ঠিক তেলের পিঠার মতােই হলাে লেন্স। তবে চালের গুড়ির জায়গায় বসাতে হবে কাঁচ। ওই ছাত্রকে আবার জিজ্ঞেস করলেন শিক্ষক-এবার বুঝেছ? জ্বি স্যার, বুঝেছি। বল তাে কি বুঝেছ? স্যার, লেন্স হলাে তেলের পিঠা। তবে চালের গুড়ির জায়গায় দিতে হবে কাঁচ।
বাঙালিও ঠিক ওই ছাত্রের মতোই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রথম উপায় হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আর এজন্য একমাত্র উপায় হলো ঘরে থাকা। স্লোগান দেয়া হলো- ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। ঘরে থাকার জন্য সরকার ঘোষণা করলো সাধারণ ছুটি। বাঙালি এ ছুটিকে নিল আনন্দ হিসেবে। দলবেধে ছুটল গ্রামে ছুটি কাটাতে। এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর অনেকেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে গেলেন আনন্দ ভ্রমনে। সারাদেশে রব উঠল, এসব কি হচ্ছে? আমরা কি করছি? ঈদে ঘটল আরো ভয়াবহ ঘটনা। ব্যাক্তিগত গাড়িতে বাড়ি যাওয়ার লাইসেন্স দেয়া হলো। গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামলো। রেন্ট এ কারগুলো টাকা কামিয়ে নিল। রাজধানী সহ গ্রাম পর্যন্ত রাস্তায় মানুষের জটলা। চায়ের দোকানে দিনরাত আড্ডা। পুলিশ আসলে দোকানের সার্টার নেমে যায়। পুলিশ চলে গেলে আবার আগের মতো। এখনো চলছে এরকম। পুলিশ জনতার এমন লুকোচুরি নিত্যদিনের চিত্র। আরও কত নাটক হয়েছে, হচ্ছ সবারই তা জানা। ফলশ্রুতিতে এখন প্রতিদিন মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যায় রেকর্ড হচ্ছে। তারপরও মানুষের চেতনা ফিরছে না। প্রতিদিনই মানুষ কাজের চেয়ে অকাজে বাইরে ঘুরছে। তাদের কথা- কত আর ঘরে বসে থাকা যায়? এই যে মানুষজন নিজেকে এতো জ্ঞানী ভাবছে, তার খেসারতও দিচ্ছে। তারপরও শিক্ষা নিচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেল।
এক ব্রাহ্মণের বাড়ি কাজ করে নাপিতের ছেলে। দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে সে ব্রাহ্মণের মন্ত্র শিখে ফেলে । এখন সে ভাবে নিজেই সব কিছু করতে পারবে। নিজেই ব্রাহ্মণ সেজে কাজ করতে পারবে। তবে এখানে যে সবাই তাকে চেনে। তাকে দিয়ে ব্রাহ্মণের কাজ কেউ করাবে না। তাহলে অন্য জায়গায় যেতে হবে। যেখানে ব্রাহ্মণ নেই। চিন্তা আর কাজের সঙ্গে মিল রেখে একদিন রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। চলতে চলতে সাত সমুদ্র তের নদী দূরের এক গ্রামের ঠাঁই নিল। ব্রাহ্মণের কাজ দেখে সবাই তাকে লুফে নিল। এ গ্রামেতাে কোন ব্রাহ্মণ নেই। কারণ ব্রাহ্মণ মারা গেছে। তার কোন পুত্র সন্তান নেই। সবাই তাকে ঝেকে ধরল এ গ্রামেই থেকে যেতে। সুযােগ পেয়ে সেও থেকে গেল। শিখে আসা কাজ দিয়ে ভালই চালাচ্ছে। একদিন গ্রামবাসী ধরল বিয়ে করতে। তবে বিয়ে করবে কোথায়? কেন? এ গ্রামের ব্রাহ্মণের মেয়েকে। তার পুত্র নেই, দু' মেয়েতাে আছে। তাদেরও বয়স হয়ে যাচ্ছে। জাতে জাতে না মিললেতাে বিয়ে দেয়া যাবে না। ভেবে চিন্তে সেও বলে ফেললাে ঠিক আছে। জাক-জমকের সঙ্গে বিয়ে সাদী হলাে। ক'দিন যেতে না যেতেই বউয়ের উপর অত্যাচার শুরু হলাে। কথায় কথায় মারধরও চলে। এদিকে এ গ্রামে ঘুরতে আসে এই নকল ব্রাহ্মণের গ্রামের নিমাই দত্ত। নিমাই মানুষের হাত দেখে ভবিষ্যত বলে দিতে পারে। সেও হাত দেখতে দেখতে নকল ব্রাহ্মণের বাড়ির পাশের বাড়ি গেল। সে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে তার গ্রামের নাপিত এখানে ব্রাহ্মণের বেশে। ব্যাপার কি? জিজ্ঞেস করতেই এ বাড়ির মানুষজন তাকে জানাল সবকিছু । বলল বিয়ে ও স্ত্রীকে নির্যাতনের কথাও। এ বাড়ির লােকজনের হাত দেখে নিমাই গেল সেই নকল ব্রাহ্মণের বাড়ি। হাত দেখে ভবিষ্যত বলে দেব চিৎকার দিতেই ব্রাহ্মণের বউ বেরিয়ে এলাে। এগিয়ে দিল হাত। সঙ্গে সঙ্গে নিমাই বলে ওঠলাে ওমা একি তােমার কপালেতাে মন্দ দেখছি। তােমার স্বামী তােমাকে প্রায়ই মারধর করে। তবে তোমাকে একটা ওষুধ আমি দিতে পারি । তোমাকে যখন সে মারতে আসবে। তখনই হাতের সঙ্গে হাত ঘষা দিয়ে বলবে, এসেছিল নিমাই দত্ত, বলে গেছে সকল তত্ত্ব, তুমি নাকি এমন আর তেমন। দেখবে সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর কোনদিন সে তােমাকে মারতে আসবে না। এখানে প্রশ্ন- হাতের উপর হাত ঘষা দিতে হবে কেন? নাপিত তার ক্ষুর কোন চামড়ার উপর ঘষা দেয়। এতে ক্ষুর দাড়ালাে হয়। আর এ জন্য হাতের উপর হাত ঘষাই হলাে নাপিতের সিম্বল। আসলে বাঙালি অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেনা। ওই নাপিতের মতো ব্রাহ্মন সাজলেও চরিত্র বদলাতে পারবেনা। যত বিপত্তিই আসুক, বাঙালি ঘুরে বেড়াবেই। যত বুঝানোই হোক কানে তুলবে না। নিজে যা বুঝে তা করবেই। ওই ছাত্রের মতোই শত বুঝানোর পরও বলবে- লেন্স মানে তেলের পিঠা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর