× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওএমএস’র তালিকায় বিত্তশালীদের নাম

দেশ বিদেশ

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৭ জুন ২০২০, শনিবার

নাজির মিয়ার দুই ছেলে বিদেশে। প্রায় ২ কোটি টাকার মালিক তিনি। বাজারে মার্কেট আছে এরফানুল বারীর। আছে দোতলা বাড়ি। আবদুল হেকিমও মার্কেটের মালিক। বাজারে মার্কেট আছে রোকসানা বেগমের। তিনি আবার কাউন্সিলর প্রার্থী। ধন মিয়ার ৪ ছেলে বিদেশে।
আছে পাকা বাড়ি। গোকর্ণঘাট বাজারের সবচেয়ে বড় মার্কেটের মালিক সামছুল হক। রবীন্দ্র বর্মনের দুই ভাই থাকেন বিদেশে। তিনশো শতাংশ জমির মালিক তিনি। হোসেন মিয়ার দোতলা বাড়ি, তাতে লাগানো এসি। বাজারে দোকান আছে তার। দু’টি মাইক্রোবাসের মালিক শফিক মিয়া। কবির মৃধা বড় ব্যবসায়ী। করোনা দশায় অন্যভাবে পরিচিত হয়েছেন তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের গোকর্নঘাট এলাকার বাসিন্দা এরা সবাই। বিত্তশালী এই মানুষদের নাম আছে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের দেয়া বিশেষ ওএমএস সুবিধাভোগীর তালিকায়। ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বদলে নাম উঠেছে তাদের। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফেরদৌস মিয়ার নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত কমিটি এই তালিকাটি তৈরি করে। মে মাসে দৈনিক মানবজমিনে পৌরসভার অন্য আরেকটি ওয়ার্ডের অনিয়মের চিত্র প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ তদন্তে নামে। শুরু হয় পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের তালিকা যাচাই-বাছাই। প্রথম দফায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে করা ৫শ’ জনের নামের তালিকার খোঁজখবরে সন্ধান মিলে এই ধনপতিদের। ৭নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় মোট ২৪ সম্পদশালী শনাক্ত হন। খাদ্য বিভাগের চকিত যাচাইয়ে ৮নম্বর ওয়ার্ডে মহল্লার সর্দার ও দোতলা বাড়ির মালিক কিতাব আলী, ২ ছেলে প্রবাসে এবং ৭ রুমের দুই ইউনিটের বাড়ির মালিক মো. আবদুর রউফ, দোতলা বাড়ির মালিক জীবন সাহা, নেরোজ আলী, সাকিল ও উপল মালাকারের নাম পাওয়া যায় ওই তালিকায়। ১২নম্বর ওয়ার্ডে সৌদি প্রবাসী তিন ছেলের পিতা বাচ্চু মিয়া, ৩ ছেলে প্রবাসে এবং দেশে সরকারি চাকরিরত  এক সন্তানের মা হেনেরা বেগম, দুই প্রবাসীর পিতা নারায়ণ ঋষি, দোতলা বাড়ির মালিক ও ধান ব্যবসায়ী শওকত ওসমান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুন অর রশিদ, কাউন্সিলরের পরিবারের সদস্যসহ ৩৩ জন, ১০নম্বর ওয়ার্ডে ডিলারের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজন, কাউন্সিলরের কয়েক ভাই, একাধিক ৫ তলা বাড়ির মালিক ও লন্ডন প্রবাসীসহ ২২ জন, ২নম্বর ওয়ার্ডে ৭জন, ৩নম্বর ওয়ার্ডে ৫ তলা বাড়ির মালিক মো. আবু বাকের, ৪নম্বর ওয়ার্ডে ৮ জন, ৫নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন এবং ৯নম্বর ওয়ার্ডে এমন আরো ৭ জনের নাম চিহ্নিত হয়।
জেলা খাদ্য অফিস জানায়, দৈবচয়ন ভিত্তিতে ভোক্তা তালিকা যাচাই করে মোট ১৩১ জন সামর্থ্যবান খুঁজে পান তারা।  একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও ওএমএস কমিটির সভাপতি হায়াত-উদ-দৌলা খান লিখিতভাবে পৌর মেয়রকে তালিকা যাচাই-বাছাই করতে বলেন। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা সামর্থ্যবানদের নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত তালিকা পাঠায় খাদ্য অফিসে। এরমধ্যে ২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৫ জন, ৩নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৪ জন, ৪নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩৫ জন, ৬নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৬১ জন, ৮নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২২ জন, ৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১২ জন, ১১নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৭ জন, ১২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫০ জন এবং ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২৪ জনের নাম সংশোধন করে তালিকা জমা দেন। সব মিলিয়ে ৩৩৭ জনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে প্রথম দফায় করা ৬ হাজার জনের তালিকা থেকে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক  সুবির নাথ চৌধুরী জানান,তালিকা যাচাই-বাছাই করে পৌরসভা থেকে তাদের কাছে এখনো সংশোধিত তালিকা দেয়া হচ্ছে। তারা ওই তালিকা অনুসারে নতুন ভোক্তার নামে কার্ড ইস্যু করছেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ১৬শ’ জন করে এই পৌরসভায় মোট ১৯ হাজার ২শ’ জন  বিশেষ ওএমএস সুবিধা পাবেন। যদিও তালিকা তৈরির কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এদিকে এই তালিকা তৈরিতে অনিয়মের কারণে ১০ ও ১২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকবুল হোসাইন ও রফিকুল ইসলাম নেহার সাময়িক বরখাস্ত হন। ১০নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার মো. শাহআলমের ওএমএস ডিলারশীপ বাতিল করা হয়।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর